শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ভীতু বিড়াল
মোঃ লিমন খান

অনেক দিন আগের কথা। আমার একটা বিড়াল ছিল। আমার বিড়াল টার নাম ছিল "রিকো"। আমার অনেক পছন্দের বিড়াল ছিল "রিকো"। রিকোকে নিয়ে আমি প্রায় সময় ঘুরতে যেতাম। তাকে নতুন নতুন পোশাক পরিয়ে দিতাম। এছাড়া আরো অনেক মজা করতাম রিকোর সাথে। ওর সাথে খেলাধুলা করতে ভালবাসতাম আমি। রিকোর একটা ছোট সমস্যা ছিল সে রাতের বেলায় ভয় পেত। আমাকে সে কোনভাবেই বুঝতে দেয়নি। আমিও জানার চেষ্টা করিনি। আমি ভাবতাম বিড়াল সব সময় সাহসী একটা প্রাণী। কিন্তু রিকোর বেলায় বিষয়টা আলাদা। একদিন আমি রিকোকে রেখে আমার বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যার পরে ঘুরতে যাই তখন রিকু আমার কোলে লাফ দিয়ে উঠলো। আমি ভাবতে লাগলাম কখনো তো রিকো আমার কোলে লাফ দিয়ে ওঠে না। তখন বুঝতে পারলাম রিকো একলা বাসায় থাকতে ভয় পায়। আমি ঐদিন আর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেলাম না। আরো দুই তিন দিন পর আমার মাথায় ওই দিনের কাহিনী টা মনে পড়ে গেল। তখন আমি আরো ভাবতে লাগলাম বিষয়টাকে কিভাবে আরো গভীরে আনা যায়। তার জন্য আমার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলাম। তাদের কাছে রিকোর বিষয় খুলে বললাম। কীভাবে করলে ওর এই ভয় পাওয়ার বিষয়টা দুর করা যায়। তারপর আমার বন্ধুরা আবার ওকে রেখে দেখ ওই কিছু করে কি না। এই কথা শুনে আমি আর দেরি করলাম না। তারাতাড়ি বাসায় গিয়ে সন্ধ্যা হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। সূর্য নামার কিছুক্ষণ পর আমি দরজাটা খোলার সাথে সাথে রিকো আমার কাঁধে উঠে পড়লো। তখন আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম রিকো রাতে

ভয় পায়। পরদিন স্কুলে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম। পাশের গলিতে মেও মেও করে বিড়াল ডাকছে। শব্দটা শোনার পর আমি আর দেরি করলাম না। তাড়াতাড়ি গলিতে

আসলাম, দেখতে পেলাম আমার রিকোর মত পুরো রং ওই বিড়ালটার।বলতে গেলে অবিকল পুরোই রিকো । আমি নিজেকে নিজে বললাম রিকোকে তো বাসায় রেখে আসলাম ও এখানে আসবে কিভাবে। আমি যখনই সামনের দিকে এগুলাম বিড়াল টা কোথায় যেন চলে গেল। নিজের মনকে সান্তনা দিয়ে কোনরকম হেঁটে স্কুলের পথের দিকে রওনা হই। আমি এই বিষয়টাই স্কুলে আমার বন্ধুদের জানাই। তারা তো কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে চাইছিল না। তারা বলছিল তুই হয়তো ভুল দেখেছিস। আমি বললাম আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি। আমি সারাদিন স্কুলে বসে বিষয়টা ভাবছিলাম কি করে হতে পারে। স্কুল ছুটির পর তাড়াতাড়ি বাসায় এসে। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মুর রিকো কি বাসা থেকে বের হয়েছিল? আম্মু বলল না রিকো আজকে ওর বাসা থেকে বের হয়নি। তুই ছিলি না বলে রিকো বাসা থেকে বের হয়নি। আমার মাথায় এখন দুইটা চিন্তা "রিকোর রাতের কারণ" "আর আজকে রাস্তায় ঘটনাটার কারণ "।কিভাবে যে ঘটনাগুলো সমাধান করব।আমার মাথায় কিছুই আসছিল না। আমি নিজেকে বললাম সমাধান করতে হলে ঠান্ডা মাথায় ভেবে কাজগুলো করতে হবে। তাই এই জন্য আমার দুই তিনটা বন্ধুকে নিয়ে ছাদে গিয়ে বিষয়গুলো আলোচনা করতে হবে। তারপর ছাদে গিয়ে বসে আলোচনা শুরু করলাম। আমার কয়েকটা বন্ধু বলছিল তুই কি ঠিক দেখেছিলি ওই দিন রাস্তায় তোর বিড়ালটাই ছিল। আমি বললাম আমি দুই চোখ দিয়ে দেখেছি আমার রিকোই ছিল। আমার বন্ধুরা বলছিল তুই তো আর মিথ্যা বলবি না,হয়তো রিকোই ছিল। কারণ তোর বিড়াল তুই ভালো করে চিনবি। আমার বন্ধুরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল, তখন আমি বললাম কিরে কিছু কি বুঝতে পারলি। বন্ধুরা বলল নারে কিছুই এখনো বুঝতে পারলাম না। বন্ধুদের মধ্যে থেকে একটা বন্ধু বলে উঠলো কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি। তোর বিড়াল রাত হলে হয়তো কিছু দেখতে পায়,হতে পারে অদৃশ্য জিনিস ওর চোখে পড়ে। এভাবেই বেশ কিছুদিন চলে যাওয়ার পর। আমার রিকো আগে থেকে অনেক ভীতু হয়ে গেল। সূর্য ডোবার পরপর একবার বাসায় ঢুকলে আর বের হতে চায় না। আর রাত হলে আগে আমার কাছে আসতো এখন আর আমার ধারে কাছেও আসে না। কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে রিকো। আগে থেকে অনেক ভীতু হয়ে যাচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে দিনদিন আরও ভয় বেড়ে যাচ্ছে। আমি তো পুরাই অবাক! এতটা ভয় তো আগে পেত না। ঐদিন রাতে আমি শুয়ে শুয়ে একটা কথা চিন্তা করতে লাগলাম। আমি যেই মালিকের কাছ থেকে রিকোকে ছোটবেলায় এনেছিলাম। ওই মালিক কে একবার জিজ্ঞেস করাই যেতে পারে। রিকো কেনো এরকম হয়ে গেছে। তারপরের দিন আমি ঘুম থেকে উঠে আর দেরি করলাম না,সোজা চলে গেলাম ওই মালিকের কাছে। মালিকের নাম ছিল কাদের সাহেব। তার বাসায় যাওয়ার পর আমি কাদের সাহেবকে সব ঘটনা খুলে বললাম। কাদের সাহেব বলল শুনো ওর ছোটবেলায় আরেকটা ভাই ছিল পুরো রিকোর মতো। বলতে গেলে অবিকল পুরোই রিকো। ওর ভাই বেশি দিন বাঁচতে পারেনি কারণ রিকো তার ভাইয়ের উপর অনেক অত্যাচার করত। তারপর তার ভাই একদিন মারা যায়। তাই তখন আমি রিকোকে একলা নিয়ে কি করবো? তাই তোমার কাছে বিক্রি করে দেই। হয়তো ওর ভাই আত্মা হয়ে রিকোকে ভয় দেখায়। এইসব কথা শোনার পর আমি বাসায় এসে কাদের সাহেবের কথাগুলো চিন্তা করলাম। এখন বুঝতে পারছি ওই দিন রাস্তায় আমি যে বিড়ালটাকে দেখেছিলাম ওটা ছিল রিকোর ভাই। মানে রিকোর ভাইয়ের আত্মা। রিকো একটা ভীতু, রিকো যখন ভয় পায় তখন আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। ভয় যখন পায় তখন আমার কাছে থাকলেই তো হয়। ও একটা বোকা এর পাশাপাশি একটা ভীতু।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়