প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
মানুষ হিসেবে আমরা সৃষ্টিকর্তার পর সবচেয়ে বেশি যার ওপর নির্ভরশীল তা হল আমাদের চারপাশে বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রকৃতি তার অপার মায়া মমতায় আমাদেরকে প্রতিপালন করে চলেছে। আমাদের জন্য সে উজাড় করে দিচ্ছে তার প্রতিটি উপাদান। প্রতিমুহূর্তে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল হয়েও আমরা আমাদের প্রকৃতির উপাদানগুলোকে ন্যূনতম সংরক্ষণ করতেও ব্যর্থ হয়েছি। প্রকৃতি থেকে প্রতিমুহূর্তে আমরা দুহাত ভরে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছি। বিনিময়ে আমরা প্রতিদিনই প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করছি।
আমরা যেই গাছ থেকে অক্সিজেন পেয়ে বেঁচে আছি। যেই গাছগুলো আমাদেরকে ফুল ফল জ্বালানি সরবরাহ করছে। তার প্রতিদানে আমরা বন উজাড় করছি নিয়মিত। বনভূমি ধ্বংস করে ফসলি জমি বা স্থাপনা তৈরি করছি যার অধিকাংশই পরিবেশবান্ধব নয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি সুন্দরবনের রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা। সুন্দরবন কেবলমাত্র আমাদের দেশের সম্পদ নয় এটি আন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এরূপ বনভূমি সারা বিশ্বে বিরল। পরিবেশ বিদদের মতে সুন্দরবনে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে তা সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে ছাড়বে। সারা বিশ্বের পরিবেশবিদগন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করছে।শুধু সুন্দরবনই নয় সুন্দরবনের মতো সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে একইভাবে বনভূমি ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে আমরা বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছি। আমরা আমাদের বনভূমি সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করার বদলে এর ধ্বংস ত্বরান্বিত করছি। এর ফলে আমরা আমাদের নিজেদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলতে যাচ্ছি তার দিকে আমাদের দৃষ্টি নেই। আমাদের জাতীয় লক্ষ্য হওয়া উচিত বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর পরিবর্ধন ও পরিচর্যায় মনোযোগী হওয়া।
পানির অপর নাম জীবন অথচ এই পানি সংরক্ষণ করা জলাশয় গুলোর অবস্থা দিন দিন নিকৃষ্টতর হচ্ছে। নদী নালা থেকে শুরু করে সাগর মহাসাগর পর্যন্ত দূষণের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আমাদের আশেপাশের জলাশয় গুলোতে মানব সৃষ্ট বর্জ্য,ময়লা-আবর্জনা, ক্ষতিকর কেমিক্যাল ফেলার মাধ্যমে পানির গুনাগুন নষ্ট করা হচ্ছে।এ সকল বর্জ্য পদার্থের প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে জলজ প্রাণী। আমরা যদি আমাদের আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি এবং রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে খুব সহজেই আমাদের জলাশয় গুলো দূষণমুক্ত রাখা যেতো। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আজকাল নর্দমার পানিকেও রিসাইকেল করে পান উপযোগী করা হচ্ছে। আমাদের দেশে নদী নালার সংখ্যা বেশি থাকায় হয়তো আমরা সুপেয় বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব বুঝতে পারছি না। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশের নদী নালার সংখ্যা প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। একটু সদিচ্ছা থাকলেই আমরা আমাদের নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং করার মাধ্যমে এবং অবৈধ নদী দখল উচ্ছেদ করার মাধ্যমে নদীগুলো সংরক্ষণ ও সচল রাখতে পারতাম। আমাদের নিজেদেরকে ভালো রাখার জন্যে হলেও আমাদের এসব নদী,নালা,খাল,বিল,সাগর,মহাসাগরের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা দরকার।
বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। প্রাকৃতিক এই উপাদানটির গুনাগুন ও উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপরিমিত পরিমাণে সার কীটনাশক ও কেমিক্যাল এর ব্যবহার এবং পলিথিনের মত ক্ষতিকর পদার্থ মাটিতে মিশার ফলে মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। আমাদেরকে এইসব ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে । আমাদেরকে প্রাকৃতিক সার ব্যবহারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। 'অর্গানিক ফুড' উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।আমাদেরকে মনে রাখতে হবে মাটিতে মিশ্রিত এসব ক্ষতিকর পদার্থ গুলো ফল ফসলের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যান্সারের মত জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি তৈরি করে। আমরা যদি সতর্ক না হই তবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আরো বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে।
প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই আজ মানব সৃষ্ট কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিটি উপাদানই আমাদের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব উপাদানের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানবজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। আমাদেরকে খুব সতর্ক হতে হবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলোর সংরক্ষণ,পরিচর্যা ও পরিবর্ধনে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। যত দ্রুত আমরা আমাদের কর্মনীতি ও কর্মপদ্ধতি কে পরিবেশবান্ধব করতে পারবো তা ততোই আমাদের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনবে। আমাদের উচিত প্রত্যেকের অবস্থান থেকে প্রকৃতিকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া এবং প্রকৃতিকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসা। প্রকৃতি থেকে শুধু গ্রহণ করাই নয় তাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ায় সচেষ্ট হওয়া।