প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
জীবন যুদ্ধে কত কিছুই না করতে হয়। কত কিছুকেই বা দেখতে হয়। কত কিছুরই বাধা অতিক্রম করতে হয়। জীবন যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ যা সৎ পথে চলতে গেলে হাজারো রকমের বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হবে। সৎ পথে চলাটা এতো সহজ নয়। নিজের হোক বা দেশের, সৎ পথে থাকলে তা কঠিন থেকে কঠিনতম হয়ে পড়ে। যা আমাদের জন্য খুব খুব কঠিন। আর আমাদের দেশ ও জনগণকে এক সুন্দরতম দেশ দিতে গিয়ে আমাদের সবার প্রিয়, দেশের প্রিয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার নিজের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে। দেশের দায়িত্ব হাতে আসার তিন বছরের মাথায় কিছু নরপশুরা আধার রাতে তাকে হত্যা করে। তবে শুধু আমাদের জাতির পিতা কেই নয় বঙ্গবন্ধুর সহ পরিবারকে হত্যা করে এবং সেই সাথে আমাদের প্রিয় ছোট রাসেলকেও ছাড় দেয়নি।
আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে ঘাতকের নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। যা এখনো প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে আছে। দুঃখের ওপর দুঃখ। জাতির পিতাকে হারানো তার মধ্যে ১১ বছরের বয়সের রাসেলের নির্মম হত্যাকাণ্ডে দেশ ও জাতি এই দুঃখ ক্লান্ত মন নিয়ে আজও তাদেরকে ভুলেনি। আজও প্রতিটা মানুষের চোখ জলে জ্বলন্ত হয়ে উঠেছে।
এই রাসেলকে যে দেখেছে, যার যার সাথে চলেছে এবং হাজারো মানুষ না দেখে, না চলে তার জন্য প্রতিটা মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা যেনো বেড়েই চলেছে।
শুনেছি বেঁচে থাকা অবস্থায় এই ছোট্ট শিশুটির মধ্যে কোনো অহঙ্কার, হিংসা কিছুই ছিল না খুব সহজ সরল ছিল তার জীবন ছিল ধোয়া নদীর জলের মতন। তার জীবন কোন রাগ, জিদ কিছুই ছিলো না।
মানুষের প্রতি তার সহনশীলতা যেন অতুলনীয়। সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করত। কারো কষ্ট হলে সেও কষ্ট পেতো। কারো কিছু প্রয়োজন হলে সে কোন কিছু না ভেবেই তাদেরকে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিতো। তার মধ্যে ধনী-গরিবের কোন স্থান ছিলো না। সবাইকে এক নজরে দেখতো সে। তার ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যেকে দোয়া করত। কিন্তু কিশোর পাড় না দিতেই তার তাজা ফুটফুটে প্রাণ কেড়ে নিলো নরপশুরা।
তার দেশের প্রতি জনগণের প্রতি সহনশীলতায় বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বল অবদান রাখতেন। তার কিশোর বয়সটার মাধ্যমেই তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ করেছিলেন। তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রবাহিত করেছিলেন। যে কবে, কখন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্রের আসন থেকে নেমে এসে জাতির বন্ধু হয়ে উঠেছিল তা কেউ বুঝতেও পারে নি।
ভরা হেমন্তের গন্ধে আকুল হয়ে আছে দিক বেদিক। দেশের আবহাওয়াও ছিলো বেশ সুন্দরতম। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর শেখ হাসিনার বাড়িতে আলো করে জন্ম নিয়েছে এক জিনিস নিষ্পাপ শিশু। তার নামকরণ করে তার নাম রাখা হয় শেখ রাসেল। এই নিষ্পাপ শিশু জন্ম নিয়ে শুধু মায়ের কোলই নয় বরং সমগ্র জাতির আনন্দ নিয়ে এসেছিলো। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষে এবং যুদ্ধ বিরোধী।
এজন্য তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্টান্ড রাসেলের ভক্ত ছিলেন আর সেই বিখ্যাত ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল রেখেই কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখা হয় শেখ রাসেল।
রাসেল ছিল খুব শান্ত। আর তার বেড়ে উঠার পর পরই তাকে পড়াশোনার জন্য ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে ভর্তি করানো হয়। আর সেখানেই তার পড়াশোনা চলতে থাকে।
আর এই নিষ্পাপ শিশুকে মাত্র ১১ বছর বয়সে তার প্রাণ দিতে হয় দেশের জন্য। নরপশুরা তাদের লোভ লালসার জন্য বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সাথে শেখ রাসেলকে ছাড় দেয় নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই অভিশাপ্ত রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারকে হত্যা করা হয় এবং সাথে আমাদের প্রিয় রাসেলও ছাড় পায়নি। শেখ রাসেল ছোটবেলাতে খুব নরম মনের একজন মানুষ ছিল।
তার মনটা এতটাই নরম ছিল যে একবার বঙ্গবন্ধু বাসায় টমি নামে একটি কুকুর ছিল। যার সাথে রাসেল খেলা করতো। একদিন খেলার সময় টমি জোরে জোরে ডেকে উঠে। আর এটা দেখে রাসেল মনে করে টমি তাকে বকেছে। সে তার বোন রেহানার কাছে এসে আঁকড়ে কান্না করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর মতো মানবিক বোধ ছিলো তার। সবার সাথে সে মিশতো, বাড়িতে কাজের লোকসহ সবাইকে খুব সম্মান করতো।
শেখ রাসেল বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি তার মধ্যে গিয়ে প্রতিটা মানুষ তাদের ছোট বেলাকে খুঁজে পায়। অন্যদিকে তার নির্মম মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয়।
আমাদের দেশের করুন ইতিহাসের কথা। তার স্মৃতিকে চিরদিন বাচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই গঠন করা হয়েছে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এবং শেখ রাসেলের নামে রাজধানী ঢাকার বুকে নামাঙ্কিত হয়েছে একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম। শেখ রাসেল মৃত্যুর পরেও আমাদের প্রত্যেকের মনে গেঁথে আছে, আর থাকবেও।