শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কর্মফল
সুমাইয়া শিমু

মিম আইসিইউ ভর্তি, ডাক্তার বলেছে ১২ ঘন্টার ভিতর কিছু বলা যাবে না। মারিয়া কাঁদতে কাঁদতে মিজান সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললো। তুমি না সবাইকে কত ভাবে সাহাস্য কর। তো আজ কেন তোমার বিপদে তোমার পাশে দাঁড়ালো না। মিজান কিছুই বললো না। শুধু পাথরে মূতির মত দাড়িয়ে রইলো।

মিজান সাহেবের কোন কিছুই ভালো লাগছে না। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। সেই যে ডাক্তারের কথা শুনে সেট হয়েছে আর কোন কথাই বলেনি এই পযন্ত মাহিয়া এতো কাঁদে তাকে ধরে, সে কোন কথাই বলে না। প্রায় ৩ ঘন্টা কেটে গেলো তবুও মিজান কে একটা কথা বলাতে পারে নাই। আর জায়গা থেকে একটুও নড়াতে পারে নাই। মিজান সাহেব কিছুই না বলে হাঁটতে লাগলো। হাটতে হাটতে ছাঁদে চলে এলো। ছাঁদে এসে এক কোনোতে দাঁড়িয়ে পড়লো। আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে।

আকাঁশটা আজ চাঁদ থাকা ও কেমন যেন স্তবদ মানে হচ্ছে। আকাশে দেখে আজ কেন যেন শান্তি পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে আজ চাঁদ ও আমাকে ঘৃণা করছে। আকাশ আমাকে বিদায় জানাতে চাচ্ছে। প্রকৃতি আামাকে চলে যেতে বলছে। কেউ যে আমাকে সাহায্যই করতে পারচ্ছে না।সব যেনো কেমন যেনো এলো মেলো হয়ে গেলো। মন কে কোন কিছুই বোঝাতে পারছে না। কোনো কিছু মানতে পারচ্ছে না।নিজের ওপর আজ খুব রাগ হচ্ছে। আজ নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। নিজেকে আজ শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের উপর খুব ঘৃণা হচ্ছে।

মিজান সাহেব ভাবতে লাগলেন তার জীবনি।

বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে মিজান পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বহু কম্পানিতে ইন্টারভিউ দেয় কিন্তু তার পা ভালো হলেও তার চাকরি হয়ে উঠেনি একটাই কারনে। তার কাছে ঘুস দেওয়ার মতো টাকা ছিলো না। ব্যবসা যে করবে তার জন্য অথ বা ব্যবসায় মূলধান দেওয়ার মতো সামথ্য মিজানের নেই। ঢাকা শহরে মিজান খুব কষ্টে বড় হয়েছে। বাবা মা গ্রাম থেকে ছেলেকে পড়াশোনা করতে ঢাকা পাঠিয়েছে। বাবা কৃষক তাই ছেলের পিছনে খরচ করার মতো অথ নেই বাবার। মিজান টিউশন করেই নিজের জীবন চালাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত চাকরি বাজারে দৌড়াচ্ছে মাথা ভরা টেনশন নিয়ে দিন পার করছে মিজান সাহেব। বাবা মা গ্রামের মাটিতে আছে। রোজ কথা হলেই বাবার প্রশন কোনো কিছুর ব্যবসহা হয়েছে কি? তোর মা খুব অসুস্থ হাটা চলা করতে পারে না, শ্বাসকষ্ট, বাবার কথা গুলো শুনে আর কোন কথা মুখ দিয়ে আসে নাই মিজানের। ফোন রেখে প্রতিদিনের মতো আজও বেরিয়ে পড়লো চাকরির জন্য। আজ ও তিন টা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে গেছে তবে কোনটাতে যে হবে তার আশা নেই। স্টুডেন্টকে পড়াতে যাওয়ার পরেই স্টুডেন্ট বলে স্যার আজ থেকে আর আপনাকে পড়াতে হবে না।

আমার জন্য নতুন শিক্ষক নিছে। আপনার কাছে পড়ে আমি ভালোই রেজাল্ট করেছি। তবে মা মনে করে আমি বড় হয়েছি যদি প্রেমে পড়ে যাই তাই মা আমার জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক ঠিক করছে। মা বলে প্রেমে পড়লে যেন ভালো কারোর উপরেই পড়ি। বেকার ছেলেদের উপরে না। এই নিন স্যার মা আপনার জন্য এই খামটা রেখে গেছেন।

মিজান একটা মুচকি হাসি দিয়ে খামটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সেখান থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলো। আজ সারাদিন কিছুই খাওয়া হয় নি। একটা বান আর এক কাপ চা নিয়ে বসলো। খেতে খেতে কানে এলো পাশের সিটের একটা লোকের ভয়েস। কার সাথে জানি কথা বলছে। আর কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে সে হসপিটালে হসপিটালে ভিজিট করে থাকে।

মিজান তার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। তার কথা শেষ হওয়ার পরেই থ।

মিজান : হ্যাঁ, আমি মিজান।

হ্যালো, আমি সাকিল।

মিজান : আপনি কি কাজ করেন ?

সাকিল : আমি হসপিটালে হসপিটালে ভিজিট করি আপনি ?

মিজান : আমি কাজ খুঁজছি তবে পাচ্ছি না।

সাকিল : কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো কি ?

মিজান : জি অবশ্যই বলুন।

সাকিল : আমার সাথে কাজ করবেন কি ? নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারবেন।

মিজান : সত্যি আপনি আমাকে একটা জব দিবেন।

সাকিল : আমি আর কি দিবো ? আপনার কাজ বুঝিয়ে দিলে আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে। ডাক দেওয়ার কেউ থাকবে না।

মিজান : আচ্ছা আমাকে ঠিক কি কি করতে হবে ?

সাকিল : আপনি এক সপ্তাহ আমার সাথে সাথে থাকলেই বুঝতে পারবেন।

মিজান : ঠিক আছে। ধন্যবাদ

সেই দিন থেকে মিজান সাকিলের সাথে কাজ শুরু করে দেয়। হসপিটালে হসপিটালে ভিজিট করা। জীবন গড়ার উদ্দেশ্যে অন্যের জীবন নিয়ে খেলা করা। কি করে অসহায় মানুষকে ঠকানো যায় তার কলা কৌশল সব যেনো কিছু দিনের মধ্যেই আয়ত্ত করে ফেললো মিজান। প্রথম প্রথম ভালো না লাগলে ও পেটের দায়ে অমত করলো না। জীবন চলা শুরু করলো মানুষ ঠকানোর মধ্য দিয়ে। এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। বিয়ে করলো জীবন আরো সুন্দর করার জন্য। কিছুদিনর মাথায় ফুটফুটে একটা ছেলে হলো। তাকে নিয়েই ছোট্ট সংসার টা রঙিন হয়ে উঠতে লাগলো। দিন দিন ইনকাম ও বাড়তে লাগলো। আর মানুষ ঠকানো ও যেন তার খুশির একটা অংশ হয়ে গেলো। প্রতিদিনই কারো না কারো মৃত্যু হচ্ছে তার লোভ কাতর জীবনের মধ্যে দিয়ে।

মিজানের ছেলের বয়স পাঁচ। এখন তার স্কুলে ভর্তি হবার সময় হয়ে গেছে। বাবা মা দু জনই বেশ খুশি। খুশি মনে তারা ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যায়। তবে বাবার ব্যস্ত শহরে ছেলের জন্য ও সময় হয় নি বউ আর ছেলেকে স্কুলের সামনে রেখেই চলে গেলেন নতুন কাউকে ঠকাতে। নতুন একটা জীবন নিয়ে ছিনি মিনি খেলা খেলতে। তবে আজ আর সম্পূর্ণ রাস্তা যেতে পারে নি। যাওয়ার পথেই মারিহার কল। কল ধরে শুনতে পার আমাদের ছেলে আর নেই, ওকে হসপিটালে নিতে হবে তুমি আসো তাড়াতাড়ি। মিজান কিছু বলার আগেই মারিহা কান্না করতে করতে ছেলেকে বলতে লাগলো বাবা তোমার কিচ্ছু হবে না মা আছে তো। ইমার্জেন্সি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে রাখতে বলা হয় তবে হসপিটালে আইসিইউ খালি না থাকাতে হসপিটালে ও রাখলো না ডাক্তার। অ্যাম্বুল্যান্স করে পুরো শহর ঘুরতে লাগলো কোন হসপিটালে লাগছে না একটা আইসিইউও আজ খালি পাচ্ছে না। মিজান যাদের সাথে কাজ করে তারা ও আজ মুখ ঘুরিয়ে নিছে। তাদের কারো কাছে আজ সময় নেই। সবার ব্যস্ত জীবনে আজ আমি একা দৌড়াচ্ছি। কেউ সাহায্য করার মতো নাই আজ। কত ডাক্তার কত কারো হাতে পায়ে ধরলো কেউ আজ সাহায্য করলো না। ঘুরতে ঘুরতে একটা হসপিটালে একটা সিট পেলাম। ছেলেকে আইসিইউতে রাখা হলো। ডাক্তার দেখে বলে অনেক দেরি করে ফেলেছেন। তবে এখনও বেঁচে আছে ১২ঘন্টা আগে কিছু বলতে পারছি না।

আজ মিজান এক ফোঁটা চোখে পানি নেই। সব যেনো শুকিয়ে গেছে। আজ তার খুব আফসোস হচ্ছে। জীবনে সে এতো পড়াশোনা করে কি করলো। এতো বই পড়ে একটু মানুষ হতে পারলো না। আর না একজন বাবা হতে পারলো। সে এতোদিন যা করেছে আজ তার সাথেই তা হচ্ছে। কেনো করলো। এসব ভাবতে ভাবতে পাগল এর মতো অবস্থা হয়ে গেলো মিজানের। আজ সে অনুতপ্ত। সব শেষ করে দিয়ে।

মারিহা পিছন থেকে তাকে ঝড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে। ওগো তুমি কিছু বলো না ডাক্তার কি বলছে। আমাদের মানিক নাকি আর নেই। তুমি কিছু করো না। প্লিজ তুমি আমার মানিক কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। মিজান কিছুই বলছে না। আর কান্না ও করছে না। চুপ করে দাঁড়িয়েই আছে। মায়ের আর্তনাদ যেনো কেউ শুনতেই পাচ্ছে না আজ। বাবার কর্মফল আজ এই নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিলো।

তাই জীবন সাজাতে সব সময় জীবনেল মানে খুঁজে বের করে সঠিক ভাবে জীবন সাজাঁতে হয়। কারো ক্ষতি করে কারো দেখানো পথে হাঁটা ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিটা মানুষের জীবনই মূল্যবান। তাই কারো ক্ষতি করে কখনো সুখে থাকা যায় না। ঘুরে ফিরে সেটা নিজের কাছেই ফিরে আসে। কথায় আছে না থুথু উপরের দিকে ফেললে সেটা নিজের গায়ে এসেই পড়ে। তাই অন্যের ক্ষতি নয়। অন্যের উপকার করতে না পারো কারো ক্ষতি করো না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়