প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
তিথি আনন্দে থৈ থৈ করছে। বাঁধ ভাঙা আনন্দ। খালামনি এসেছেন সাথে ঈদের গিফ্ট। মেঝেতে গোল হয়ে বসেছে ওরা। খালামনি একটা একটা করে গিফট বের করছেন। প্রথমে বের করলেন বাবার পাঞ্জাবি। হালকা আকাশি। আকাশি বাবার প্রিয় রং। খালামনি কিভাবে জানি সবার পছন্দ অপছন্দগুলো মনে রাখতে পারেন। তিথি ভেবে অবাক হয়। এবার বের করলেন মায়ের থ্রিপিস। আকাশি-নীলের মিশেল ড্রেসটা। খালামনি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- উহু এটা তোর পছন্দের আনিনি। এটা স্রেফ আমার পছন্দের। তোদের দু’জনের জন্য কাছাকাছি কালার। একসাথে পরলে খুব মানাবে।
মা মিষ্টি করে হাসলেন। এদিকে তিথির আর তর সইছে না। ইস্ খালামনি ওর গিফটা বের করছেন না কেন? নাকি ওর জন্য আনেন-ই নি। উহু এমন হবার কথা নয়। খালামনি যেন ওর মনের কথা পড়তে পারলেন। বললেন, কি তিথি মনি? আর বুঝি তর সইছে না? তুমি হলে আজকের আসরের মধ্যমনি। তোমার গিফট কি এমনই আনতে পারি? তোমার জন্য এনেছি আলাদা প্যাকেটে। বলেই খালামনি ওর
প্যাকেটটি সামনে আনলেন। তারপর সেই প্যাকেটের ভেতর থেকে বের করলেন বেশ কয়েকটিপ্যাকেট। রেপিং করা। প্রতিটি প্যাকেটের ওপর একটি করে গোলাপ সাঁটানো। তিথির যে কি আনন্দ হচ্ছে। খালামনি প্রথমে বড় প্যাকেট ওর হাতে দিলেন। এত সুন্দর করে সাজানো প্যাকেটটি তিথির খুলতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না। কিন্তু ভিতরের জিনিসটি দেখার লোভও সামলাতে পারছিল না। তাই তিথি মাকে বলল, মা প্যাকেটটা খুলে দাও না। যেন নষ্ট না হয়ে যায়।
মা যত্ন করে খুলে বের করলেন ধবধবে সাদা একটি পার্টি ফ্রক। তিথির চোখ জুড়িয়ে গেল। ইস্ কি সুন্দর! মা তারপর অন্যগুলোও খুলে দিলেন। একটাতে ফ্রকের সাথে মিলানো গয়না, চুলের ব্যান্ড, ক্লিপ ও পার্টি ব্যাগ। অন্যটাতে খুব সুন্দর এক জোড়া স্যান্ডেল। সবই ড্রেসটার রংয়ের সাথে মিলিয়ে কেনা। তিথি তো আনন্দে আত্মহারা। মা বললেন, তিথি খালামনিকে ‘জাজাকাল্লাহ’ বলো।
‘জাজাকাল্লাহ’ খালামনি । বলে খালামনিকে জড়িয়ে ধরলো।
খালামনিও ওকে চুমো খেয়ে বললেন, কি রে পুৎলী, পছন্দ হয়েছে?
খু-উ-ব।
তাহলে আমাকে একটা চুমো দে তো কপালে।
উম্মা।
এই পুৎলী, তোকে আর কে কী দিলোরে?
খালামনির এই এক স্বভাব। কখনও ওর নাম ধরে ডাকে না। পুৎলী, পুত্তলী, পরী, বুড়ি কত নামে যে ডাকে। সেই জন্যই তো খালামনি কে ওর এত্ত ভালো লাগে। খালামনি আবার বললেন-
এই কি ভাবছিস এত?
ও কি আর একটা ড্রেস পেয়েছে?
মা বললেন। ওর বড় বাবা, ফুপি, ছোট চাচ্চু সবাই ড্রেস দিয়েছে। তোমারটা নিয়ে এখন ওর চারটা ড্রেস হলো।
ইস্ ! আমি কেন তোর মত ছোট রইলাম নারে বুড়ি? তাহলে তো আমারও এত্ত এত্ত ড্রেস হতো। আচ্ছা তুই যখন বড় হবি আর আমি ছোট হবো তখন তুই-ই আমাকে দিস। কি দিবি তো?
হুম্। দিব। এই এত্তগুলো দিব। দু’হাত প্রসারিত করে দেখালো তিথি। সবাই ওর কথায় হেসে উঠল। খালামনি তিথির
মাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই তোরা কি দিয়েছিস রে ওকে?
এখনও দেইনি আপু। আর ভাবছি এবার আর আমরা নিজেদের জন্য কিছু কিনবো না।
সে কি কথা! যেন আকাশ থেকে পড়লেন খালামনি।
এবার তিথি বলল, হ্যাঁ খালামনি। আব্বু কাল আমাদের নিয়ে মিটিং করেছেন। ‘ঈদের মিটিং’।
ঈদের মিটিং? সে আবার কিরে?
আপু, কাল আমি আর তিথির বাবা বসেছিলাম ঈদে কী কী কিনব তার একটা হিসাব করতে। সাথে তিথিকেও নিয়ে ছিলাম, বললেন আম্মু।
তা কি হিসাব করলি? কি সিদ্ধান্ত নিলি?
আমাদের এবার সবারই ঈদের ড্রেস হয়ে গেছে। তাই আমরা ঠিক করছি এবার আর ড্রেস কিনব না।
তোরা টাকা জমিয়ে রেখে কি করবি রে?
না আপু, আমরা টাকা জমাবো না। আমরা হিসেব করে দেখছি আমাদের তিন জনের ঈদের ড্রেসের টাকা দিয়ে আমেনার মায়ের ঈদের পোশাকসহ এক মাসের চাল-ডালের খরচ হয়ে যাবে। তাই আমরা আমাদের ড্রেসের টাকাটা এবার ওদেরকে দিব।
এক্সিলেন্ট! তোদের ডিসিশনে আমি সত্যিই মুগ্ধ হলাম রে? তিথু সোনা। তোমাকে যে আব্বু আম্মু ড্রেস কিনে দিবে না তোমার মন খারাপ হবে না?
না খালামনি, আমার ড্রেসের টাকা দিয়ে আমেনাকে ড্রেস কিনে দিব। সেটা পরে ও ঈদের দিন আমাদের বাসায় বেড়াতে আসবে।
খালামনি তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন গভীর ভালোবাসার দৃষ্টিতে। তারপর দু’হাতে তিথির ছোট ছোট হাত দুটি দোলাতে দোলাতে বলতে থাকলেন, ‘ঈদের চাঁদের খোশবু মেখে মিলবো সবার বুকে, সারা বছর সবাই মিলে থাকবো সুখে দুঃখে’।