রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

ওমরেরা হারে না
আবিদ সালমান

বাবা ওমরকে সব সময় বলতেন, ‘তোর নাম ওমর রেখেছি যেন তুই হযরত ওমরের মতো সাহসী বীর হতে পারিস।’

অথচ ওমর আজ পালাচ্ছে। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আছে এখন। আর একটু পর যখন আঁধার নামবে, বের হয়ে আবারো চলতে শুরু করবে। দূরে মেশিন গানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে আগুনের শিখা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। তার মানে গ্রাম থেকে এখন অনেকটাই দূরে চলে আসতে পারা গেছে। ওমর নামটা ওর সাথে একেবারেই যায় না। কী করে পারলো সে বাবাকে গাছে ফাঁসিতে ঝুলাতে দেখে, মা আর ছোট্ট ফাতিমাকে ঘরে আটকে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেও নিজে পালিয়ে আসতে!

পালানোর প্রস্তুতি অবশ্য চলছিলো বেশ ক’দিন ধরে। রফিক, আলী, ইউসুফদের পরিবার হয়তো এরই মধ্যে বর্ডার ক্রস করতে পেরেছে। আলসেমির জন্য জীবন গেলো ওর পরিবারের। মিয়ানমার আর্মির নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা শুনেও বাবা চলে গেলেন না। মিং কাকুর অভয় পেয়ে এর আগেও অস্থিরতার সময়ে ওমরদের পরিবার বাড়ি ছাড়েনি। আজ আর্মি গ্রামে ঢুকতেই ঐ মিং কাকুই আর্মির লোকজন নিয়ে বাড়ি এসে প্রথমেই বাবাকে ঝুলিয়ে দিলো। দৃশ্যটা মনে পড়তেই আরো একবার শিউরে উঠলো ওমর। অমন হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল মানুষটা মুহূর্তেই ঝুলন্ত লাশে পরিণত হলো। দৌড়ে ওদের সাথে পারবে না ভেবে, নাহ, ওমরকে বাঁচাতেই মা ওমরকে ঠেলে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দিলেন।

নিজে ঘরের সব দরজা জানালা লাগিয়ে দিলেন। ভারি আসবাব দরজার সামনে দিয়ে ওদের প্রবেশ তো ঠেকানো গেলো, কিন্তু আগুন ঠেকাবে কীসে! প্রিয় বাড়িটার আগুনের আঁচ গায়ে লাগতেই ওমর বুঝে নিয়েছিলো, এইবার সব পিছুটান মুক্ত সে। এই নরপশুদের হাত থেকে বাঁচতে হলে এখন পালাতে হবে। নাফ পেরুলেই নিরাপত্তা! ওপারে ওমরের জন্য খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান না থাকতে পারে, কিন্তু বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা আছে। দিনে বৌদ্ধদের নজর এড়িয়ে চলাটা খুব কঠিন। তাই রাতে চলাটাই সহজ মনে করে আপাতত লুকিয়ে আছে সে। নীড়ে ফেরা পাখিদের দেখে বুকের কোথায় জানি আর একবার কেঁপে উঠলো তার।

পাহাড়ি এলাকায় ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। চারদিক অন্ধকার হতেই দূরে আগুনের শিখা দেখা গেলো। কে জানে, হয়তো ওমরের বাড়িই সেটা। ইবরাহিমের বাড়ি হলেই বা কী এসে যায়। সব বাড়িরই পোড়া ছাই দেখতে এক রকম! ধীরে ধীরে ঝোপ থেকে বেরিয়ে সামনে পেছনে নজর রেখে ছোট ছোট পায়ে চলতে শুরু করলো ওমর। ছোটবেলা একবার বাবার সাথে নাফ দেখতে গিয়েছিলো সে। নাফের নীল জলরাশি যেখানটায় সাগরে পড়েছে, সেখানে সূর্যাস্ত দেখেছে বাবার কোলে চড়ে, বাবার কাঁধে মাথা ফেলে। তারপর ফিরে গিয়েছে তাদের সাত পুরুষের ভিটেয়। তখনো দেশে শান্তি ছিলো না। এক একবার আর্মি অভিযান শুরু করলে গ্রামকে গ্রাম ছারখার করে দিতো। বাবা তবুও দেশ ছাড়বেন না। তার এক কথা, বর্মীদের অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলে রোহিঙ্গারা বাস করছে। আজ তারা তাড়িয়ে দিলেই আমরা যাবো কেন? আজ তো ওমরকে যেতেই হচ্ছে। যদিও জানে না সে আবার নাফের তীরে যেতে পারবে কী না। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল ওমর। হাঁটুর কাছটায় ছড়ে গেল বেশ খানিক। একটু শব্দও হয়তো হয়েছে। শব্দের পরপর একটা কুকুর যেন ডেকে উঠলো কাছেই। ভয়ে কুঁকড়ে গেল ওমর। বন্য কুকুর হিংস্র হয়। কিন্তু সভ্য মানুষ কি তার চেয়েও হিংস্র নয়? ওমরকে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের সাথে মুকাবেলা করে বাঁচতে হবে। কুকুরে ভয় পেলে চলবে কী করে?

ভয় কেটে যেতেই জাদুর মতো মনে হলো, এই কুকুরের ডাক মানুষের। তারই মতো পালাচ্ছে এরা। বেড়ালের ডাক ডেকে উত্তর দিলো ওমর। মুহূর্তে অন্ধকার ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে এলো বেশ কয়েকজন। কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কারো পরিচয় জানে না ওমর। শুধু ওমর কেন, তার মনে হলো, ওরা কেউ কারো নাম ধাম জানে না। শুধু জানে পালাতে হবে। সামনে বর্ডার গার্ড পুলিশ পাহারায় থাকবে। ওদের চোখে ধুলো দিয়ে পেরুতে হবে মায়াবী নাফ। তাহলেই আর কেউ বেয়নেট উঁচিয়ে তেড়ে আসবে না। নিশানা অনুশীলন করবে না নিরীহ মানুষকে সামনে রেখে। ভালোই হলো। ওমর এখন আর একা নয়। আল্লাহর বেশ কিছু বান্দা তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন তার সাথে।

হঠাৎই তীব্র আলোয় ভেসে গেল চারপাশ। ওমর ছোটবেলা থেকেই অন্ধকার ভয় পায়। কিন্তু আজ আলোটাই ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিলো তার মনে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সবাই যে যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করলো। পেছনে আলোর পেছনটা থেকে আগুনের ফুলকি নিয়ে ছুটে এলো বুলেট। দৌড়ে বুলেটের গতিকে হারিয়ে দিতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগলো একের পর এক দেহ! ওমরও পড়ে গেল কারো ধাক্কায়। মাথায় কিছু একটা ঠুকে গেল তার। রক্তে ভেসে যেতে লাগলো তার শরীর। উজ্জ্বল আলোয় ভেসে গেলেও তার দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গেল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়