রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০

আসছে ঈদ
সুমাইয়া শিমু

দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এর একটি ঈদ-উল ফিতর, আর অন্যটি ঈদ-উল আযহা, যাকে কোরবানীর ঈদও বলা হয়।

বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদ-উল ফিতরকে এবং এক কথায় সবার কাছে পরিচিত ঈদ হিসেবে।

এই সময়টিতে বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে- অর্থাৎ সারা বছরে যত পণ্য আর সেবা কেনাবেচা হয়, তার বড় অংশটি হয় এই সময়ে।

ঈদ ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও এই ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদের প্রচলন শুরু হয়নি।

ঈদ মানে আনন্দ। বাঙালির সংস্কৃতিতে সব মানুষের আন্তরিক মিলনমেলা ও হৃদ্যতার মেলবন্ধন যে কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়, তার মধ্যে ঈদ অন্যতম। বছরে দুটি ঈদ উদযাপিত হয়, একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আজহা। তবে ঈদুল আজহার তাৎপর্য মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট বিশেষ অর্থ বহন করে থাকে। ঈদুল আজহাকে আবার কোরবানির ঈদও বলা হয়। কারণ এই ঈদে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ ও নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা চালায়।

কোরবানির পরিচয় : ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর আসে পবিত্র কোরবানির ঈদ। ইসলাম ধর্মে কোরবানির দিনকে ঈদুল আজহাও বলা হয়। কোরবানি আরবি শব্দ, আরবিতে কুরবানুন বা কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি। কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিনটি দিনে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে হালাল পশু জবেহ করাই হলো কোরবানি। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানির অন্যতম তাৎপর্য।

কোরবানির ইতিহাস ও প্রচলন : পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি হলো মানবগোষ্ঠীর আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)-এর দুই পুত্রের মাঝে সংঘটিত হওয়া কোরবানি। এখান থেকেই কোরবানির প্রথম প্রচলন শুরু হয়। তবে পবিত্র ইসলামে আমরা হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আঃ)-এর স্মরণে কুরবানি করে থাকি।

এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কতিপয় সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কোরবানি কী? হজরত রাসূলে মকবুল (সাঃ) বললেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর সুন্নাত। সাহাবারা বললেন, এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। (ইবনে মাজাহ-৩১২৭)।

কোরবানির গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ইবরাহিম! স্বপ্নে দেওয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সু¯পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম”। (সূরা সাফফাত, আয়াত নং ১০৪-১০৭)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে নবী! আপনি বলুন- আমার নামায, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সারা জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য নিবেদিত”। (সূরা আনআম : ১৬২)।

সূরা আল-কাওসারের ২নং আয়াতে নির্দেশ এসেছে- “সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কোরবানি কর।” হযরত উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) মদীনায় ১০ বছর অতিবাহিত করার সময়ে প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (আহমদ ও তিরমিযী)।

সূরা কাওসারের ছোট্ট একটি আয়াতের মাধ্যমে ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ এক সাথেই এসেছে। সুতরাং কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যগুলো পর্যালোচনা করলে এখানেই সু¯পষ্ট হয় যে, ইসলামে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম শেয়ার বা নিদর্শন।

ঈদ উল আজহার যে কোরবানি দেওয়া হয় তার মাধ্যমে মানুষের মনের পরীক্ষা হয়, কোরবানির রক্ত-মাংস কখনই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। শুধু দেখা হয় মানুষের হৃদয়কে। ইরশাদ হচ্ছে, “এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর, এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।”[আল হাজ্জ্বঃ আয়াত নং ৩৭]।

ঈদের মধ্যে আছে সাম্যের বাণী, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের পরিচয়। পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয় মানুষের মন। সামাজিক কল্যাণ সাধনে সংশোধিত মানব চরিত্র বলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। হজ পালন কোরবানি ও ঈদুল আজহা উৎসবের একটি বিশেষ অংশ।

কোরবানি হলো একটি ছাগল, ভেড়া, দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে কোরবানি করা যায়। বন্য পশু হালাল হলেও কোরবানি করা যাবে না; যদিও তা কেউ লালনপালন করে থাকুক না কেন। কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বা এক বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাহলে চলবে। কোরবানির পশু তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম; খুঁত থাকলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।

যেকোনো মুসলিম নারী-পুরুষ কোরবানির পশু জবাই করতে পারেন। কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। না পারলে কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। জবাইয়ের সময় উপস্থিত থাকতে পারলে ভালো। মহিলারাও জবাই করতে পারেন। জবাইয়ের দোয়া পড়া সুন্নত, না জানলে বা না পড়লেও কোরবানি হয়ে যাবে। জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম বলার প্রয়োজন নেই।

নিজ গৃহে পালিত পশু দ্বারা কোরবানি করতে পারলে উত্তম। কোরবানির পশু নিজ অর্থে কেনা যায়, যেকোনো কেউ কোরবানির পশু বা এর মূল্য হাদিয়া দিলেও হবে; এতেও ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে।

ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। পবিত্র এ দিনটিতে আল্লাহর প্রিয় জিনিস হিসেবে পশু উৎসর্গ করা হয়। কোরবানির ভেতর দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে অগ্রসর হয় মুসলমান সম্প্রদায়। কোরবানির অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ করা। পশু কোরবানি হচ্ছে তার মাধ্যম।

ত্যাগের মহিমার এক প্রতীকী আচার এ কোরবানি যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের প্রতীক কোরবানি। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরের পশুশক্তি, কামণ্ডক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকে কোরবানি দিতে হয়।

ঈদুল আজহায় করণীয় দিকসমূহ : ইসলামের এ দুটি উৎসবের দিন শুধু আনন্দ-ফুর্তির দিনই নয়। বরং এ দিন দুটোকে আনন্দ-উৎসব এর সাথে সাথে জগৎসমূহের প্রতিপালকের ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা সুসজ্জিত করা।

যিনি জীবন দান করেছেন, দান করেছেন সুন্দর আকৃতি, সুস্থ শরীর, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি, পরিবার-পরিজন, যার জন্য জীবন ও মরণ তাকে এ আনন্দের দিনে ভূলে থাকা হবে আর সব কিছু ঠিকঠাক মত চলবে এটা কীভাবে মেনে নেয়া যায়?

তাই ইসলাম আনন্দ-উৎসবের এ দিনটাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত-বন্দেগী, তার প্রতি শুকরিয়া-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দ্বারা সু-সজ্জিত করেছে। তাই ঈদুল আজহায় যে সমস্ত বিষয় আমাদের করণীয় রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হল

গোসল করা : ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করা সুন্নাত। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল (সাঃ) ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

উত্তম পোষাক পরিধান : ঈদের দিন রাসূল (সাঃ) ভাল পোষাক পরিধান করতেন। হাদীসে আছে রাসূল (সাঃ) এর লাল ও সবুজ ডোরার একটি চাদর ছিল, তিনি তা দুই ঈদ এবং জুমুয়ার দিন পরিধান করতেন। অপর দিকে রাসূল (সাঃ) তার সকল দাসীকে ঈদের দিনে হাতে পায়ে মেহদী লাগানোর নির্দেশ দিতেন।

বিধায় সামর্থ অনুযায়ী নতুন পোষাক ক্রয় করা অথবা পুরাতন পোষাকটাকে পরিষ্কার করে ইস্ত্রি দিয়ে ব্যবহার করা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পোষাকের ব্যবস্থা করা। প্রতিবেশী শিশুদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী পোষাকের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

সুগন্ধি ব্যবহার : সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নাত। আর ঈদের দিনে রাসূল (সাঃ) বিশেষ ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। রাসূল (সাঃ) এর তিনটি পছন্দনীয় জিনিসের মাঝে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনের পোষাক পরিধানের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা। সুগন্ধি মানে এলকোহল মিশ্রিত ভ্যাপসা গন্ধ সম্পন্ন স্প্রে নয়, বরং দেহনাল উদ বা আতর ব্যবহার করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়