রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

চশমাচোর
অনলাইন ডেস্ক

সাবিদ ছুটতে ছুটতে গগনের বাসায় এসে হাজির হলো। গগন তখন একটা বেশ মজার জোকসের বই পড়ছিল।

‘গগন?’ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে সাবিদ।

‘কী হলো?’

‘জলদি আমাদের বাসায় চল, প্লিজ।’

‘কেন?’

‘একটা রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে...প্লিজ চল।’

গগন ভুলেই গিয়েছিল যে সে এই পাড়ার একজন ছোটখাটো গোয়েন্দা। সবাই তাকে গোয়েন্দা গগন নামেই ডাকে। কোনো রহস্যময় ঘটনা ঘটলেই গোয়েন্দা গগনের ডাক পড়ে। প্রথম দিকে ঠাট্টা–ইয়ার্কি করে ডাকত। কিন্তু পরপর পাড়ার বেশ কয়েকটা রহস্য উদ্ঘাটনের পর সবাই বুঝেছে, না, এ ছেলের সত্যি এলেম আছে...গোয়েন্দাই বটে। বিশেষ করে মিউনিসিপ্যালিটির জাদুঘরের কেসটা। জাদুঘর থেকে লাফিং বুদ্ধার ছোট্ট সোনার ভাস্কর্যটা চুরি হয়েছিল।

গগন যখন সাত দিনের মাথায় লাফিং বুদ্ধাকে উদ্ধার করল, তখন সত্যিই সত্যিই চারদিকে ছড়াল তার নাম। থানার ওসি সাহেব তো বলেই বসলেন, ‘গগন, দেখি, এর পর থেকে কোনো জটিল কেসের সন্ধান পেলে তোমাকে ডাকব।’ সেবার এলাকার স্থানীয় পত্রিকায় তার ছবিও ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল এ রকম—‘অবশেষে লাফিং বুদ্ধার ভাস্কর্যটি উদ্ধার করল ক্লাস এইটের গোয়েন্দা গগন’। গগনের নামের বানানটা অবশ্য ভুল ছেপেছিল পত্রিকাটা। গগনের জায়গায় লিখেছিল খগন।

যা–ই হোক, সাবিদের বাসায় যেতে যেতে পুরো কাহিনি শুনল গগন।

‘বুঝলি, প্রতিদিন সকালে আমাদের বাসার সামনের খোলা লনটার চেয়ারে বসে দাদু পেপার পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পেপার রেখে চশমা খুলে একটু ঝিমান...এই ধর পাঁচ–দশ মিনিট। তারপর ফের দ্বিতীয় দফায় পেপার পড়েন। কিন্তু আজ হয়েছে কি, দ্বিতীয় দফায় পেপার পড়তে গিয়ে দাদু দেখেন তার চশমা নেই। নেই তো নেই, একেবারেই হাওয়া।’

গগন দাঁড়িয়ে গেল।

‘কী হলো?’ জানতে চাইল সাবিদ।

‘আচ্ছা বল তো, কোন সে শয়তান নাকে বসে ধরে কান?’

‘মানে? কী বলছিস?’

‘পারলি না তো? এটা হচ্ছে চশমা। আচ্ছা বল তো, কী খেলে চোখ ভালো থাকে? মানে কখনো চশমা পরতে হয় না?’

‘তুই এসব কী বলছিস, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘আহা, বল না।’

‘জানি না।’

‘ঘাস, ঘাস খেলে চোখ ভালো থাকে।’

‘ঘাস তো গরুর খাদ্য।’

‘ওই তো...কখনো দেখেছিস কোনো গরুকে চশমা পরতে?’

ওরা আবার হাঁটতে শুরু করেছে। সাবিদ বলল, ‘তুই মনে হচ্ছে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিসনি...উল্টাপাল্টা জোক বলছিস...’

‘আহা, সিরিয়াসলি নেব না কেন? আমি ড্যাম সিরিয়াস। চল গিয়ে দেখি...চশমা কোথায় গেল। তোর দাদু যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন কোনো ছিঁচকে চোর এসে চশমা নিয়ে চলে গেছে।’

‘না, সম্ভব না। আমাদের লোহার গেট ভেতর থেকে বন্ধ থাকে।’

দুজন বাসায় এসে দেখে সাবিদের দাদু তখনো লনে ঝিম মেরে বসে আছেন। তিনি নাকি চশমা চোখে না দিয়ে ঘরে ঢুকবেন না। কী জ্বালা। ওদিকে সাবিদদের বাসার বুয়া তখন গলা ফাটিয়ে বলছে—

‘এইডা ভূতের কাম! ওই যে গাছটা দেখতাছ, ওইখানে একটা ভূত থাকে...কালা লাম্পা...এইডা হের কাম।’

‘ভূত চশমা নিয়ে কী করবে?’

‘ভূতের চক্ষে কি মনে করো ছানি পড়ে না? হেরা তখন মানুষের চশমা চক্ষে দেয়। এবার গগন হি হি করে হেসে ফেলে।’

‘আহ্, বুয়া তুমি ভেতরে যাও তো।’ সাবিদ এবার ওর দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দাদু, গগন চলে এসেছে। দেখো ও ঠিকই তোমার চশমা বের দেবে। খুব ভালো গোয়েন্দা ও।’ দাদু অসহায়ের মতো তাকালেন গগনের দিকে।

‘পারবে তো বাবা?’

‘দাদু, চেষ্টা করে দেখি।’

এই সময় সাবিদের ভার্সিটিপড়ুয়া ছোট চাচা বের হয়ে এল। তার ভ্রুজোড়া কুঁচকে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সবার ওপর বিরক্ত। এসেই বলল, ‘বাবা, এই যে তোমার চোখের পাওয়ারের কাগজ পাওয়া গেছে। দুই হাজার টাকা দাও। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে নতুন চশমাটা বানিয়ে নিয়ে আসব। পুরানটার আশা বাদ দাও।’

‘আমি টাকা কোথায় পাব?’ দাদু বিড়বিড় করেন। সাবিদ বলল, ‘ছোট চাচা, নতুন চশমা বানাতে হবে না।’

‘মানে? কী বলছিস? বাবা চশমা ছাড়া কানা হয়ে বসে থাকবে?’

‘না, গগন চলে এসেছে। ও ঠিকই চশমা খুঁজে বের করে ফেলবে।’

‘গগনটা কে?’

‘এই যে, আমার বন্ধু গগন। গোয়েন্দা গগন। পাড়ার সবাই ওকে গোয়েন্দা গগন নামেই চেনে।’

‘ধুত্তরি...গোয়েন্দা!’ মুখে একটা কেমন বিশ্রী আওয়াজ করে ছোট চাচা বাসার ভেতরে ঢুকে গেল।

সাবিদ গগনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সরি...কিছু মনে করিস না। ছোট চাচাটা এমনই।’

‘না, ঠিক আছে।’ গগন তখন সামনের গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে। বুয়া বলছিল, গাছটায় চোখে ছানি পড়া একটা ভূত থাকে। সেই ভূতটাই নাকি দাদুর চশমা নিয়েছে।

কী গাছ এটা? শেওড়াগাছ হলে ভূত থাকার সম্ভাবনা আছ। তবে মনে হচ্ছে এটা অন্য কোনো গাছ। খুব সম্ভবত জারুলগাছ। তবে গাছটা সাবিদদের বাসার বাইরে। রাস্তার ধারে। গগন মুখ নামিয়ে দাদুর দিকে তাকাল।

‘কিরে গগন, কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবি?’

‘নাহ।’

‘কিছু বুঝতে পারলি?’

‘পেরেছি।’

‘কী?’

‘বুয়ার কথাই ঠিক।’

‘মানে?’

‘মানে, চশমাটা ভূতেই নিয়েছে। কালো ভূত।’

‘কী বলছিস? ঠাট্টা করছিস তুই?’

‘না, ঠাট্টা না। দাদুর চশমা পাওয়া গেছে।’

‘কোথায়?’

গগন এগিয়ে এসে সাবিদের কানে কানে বলল কোথায় চশমটা আছে। তারপর হাঁটা দিল নিজের বাসার দিকে। এটা কোনো বড় কেস ছিল না। কবে যে লাফিং বুদ্ধার মতো একটা বড় কেস পাবে গগন, কে জানে। এর চেয়ে বাসায় গিয়ে জোকসের বইটা শেষ করা যাক। মজার একটা বই পাওয়া গেছে।

সাবিদ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে গগনের দিকে। ছেলেটার মাথায় এত বুদ্ধি। অথচ তাদের কারও মাথায় বিষয়টা এল না। ও সত্যিই একদিন বড় গোয়েন্দা হবে, শার্লক হোমসের মতো। কিংবা ফেলুদার মতো। সাবিদ আর দেরি না করে লাফ দিয়ে জারুলগাছটায় উঠে পড়ল। গগন বলে গেছে চশমাটা ঠিক কোথায় আছে।

সাবিদের ছোট চাচা বের হয়ে এসে দেখে, দাদু চশমা চোখে দিয়ে পত্রিকা পড়ছেন হাসিমুখে।

‘অ্যাঁ? চশমা পাওয়া গেছে!’

‘হ্যাঁ, গগন বের করে দিয়ে গেছে।’

‘মানে? কোথায় ছিল?’

‘ওই যে, জারুলগাছে। কাকের বাসায়। বুয়ার কালো ভূত।’ বলে হি হি করে হাসে সাবিদ। ছোট চাচার মুখ হাঁ হয়ে যায়।

পাশ থেকে সাবিদ বলে, ‘ছোট চাচা মুখ বন্ধ করে রাখ। তাহলে কিন্তু মশা ঢুকে যাবে কিন্তু। এখানে অনেক মশা।’ ঝপ করে মুখ বন্ধ করে ফেলে ছোট চাচা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়