প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে বিবাহবিচ্ছেদের হার বাড়ছে। আর এই বিবাহবিচ্ছেদে নারীরাই এখন এগিয়ে আছেন। বিচ্ছেদ কেন বাড়ছে? আর কেনইবা নারীরা এগিয়ে আছেন তা নিয়ে নানা কথা রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে এটা সচেতনতার ফল না কথিত আধুনিকতার প্রভাব না অন্য কিছু।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই বিবাহ বিচ্ছেদ করে আবার অনেকেই সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতন সহ্য করে সংসারজীবন পার করেন। নারীর শিক্ষায়ন সচেতনতার কারণে এখন আর পুরুষ দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে না। নির্যাতনের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হার কম হলেও বর্তমানে পরপুরুষ পরনারী (পরকীয়া) আসক্ত হওয়ার কারণেই বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হয়।
বর্তমান সমাজ যে রোগে আক্রান্ত তা হলো পরকীয়া প্রেম। যা সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
পরকীয়া কি?
সাধারণত বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষ বা মহিলার সাথে প্রেম বা যৌন মিলনকে পরকীয়া প্রেম বলে। বর্তমানে পরকীয়া ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরকীয়া প্রেমে পুরুষের তুলনায় নারী বেশি আসক্ত বর্তমানে ১৭ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ শতাংশ নারী পরকীয়া প্রেমে জড়িত আছে। (সূত্র: শিকাগ বিশ্ববিদ্যালয়)
পরকীয়া মূল কারণ কি?
বয়সগত অসামাঞ্জস্যত, বিবাহের পূর্বে প্রেম ভালোবাসা জড়িত, প্রাক্তন কে ভুলতে না পারা। বর্তমানে পরকীয়া সম্পর্ক কে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার টিকটক ইমো হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি।
জীবন সঙ্গী কাছে না থাকায় উদাসীন জীবন যাপন। ধর্মীয় রীতিনীতি না মেনে চলার, স্বামী ও স্ত্রীর প্রতি সংসার জীবনের প্রতি অনাগ্রহ, তিক্ততা ও একঘেয়েমি চলে আসা। দাম্পত্য জীবনে নানাবিদ সমস্যা, একে অপরকে বুঝতে না পারা, সহনশীলতা মনোভাব না থাকার কারনেই পরকীয়া প্রেমের সূত্রপাত।
পরকীয়া পরিত্রান
বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের বয়সগত অসামাঞ্জস্যতার দূর করে হবে। অসংস্কৃতির আগ্রাসন বিবাহবহির্ভূত ছেলে মেয়ের চলাফেরা রোধ করতে হবে। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ পরকীয়ার এই ভয়াবহ পরিণতি বিবেচনা করেই ইসলাম ব্যভিচারের জন্য অত্যন্ত কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
হত্যাজনিত অপরাধের পরেই ইসলামে অপরাধের মাত্রা এবং ভয়াবহতা বিচারে ব্যভিচারের শাস্তির অবস্থান। ইসলামে অবিবাহিত নারী পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি বেত্রাঘাত হলেও বিবাহিত নারী কিংবা পুরুষের অবৈধ প্রণয় বা সম্পর্ক অথবা পরকীয়ার শাস্তি পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা।
পরকীয়া প্রেমের ফলে সংসার জীবন, পরিবার ও সমাজে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে।
পরকীয়া প্রেমের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজারো পরিবার। বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে স্বপ্নের সুখের দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যায়।
মূলত ক্ষতিগ্রস্ত কারা
প্রতিনিয়ত বিবাহের বিচ্ছেদের সংবাদ শুনতে হয়। নারীদের কাছ থেকে এখন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন বেশি আসলেও বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য আবার নারীদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বেশি। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে নারীকে সমাজের কাছে হেনস্তা হতে হয় নানাভাবে। বলা হয় ‘চরিত্রদোষের’ কথা। আর দ্বিতীয় বিয়ে করতে গিয়েও পড়তে হয় নানা প্রশ্নের মুখে।
বিবাহবিচ্ছেদ কখনো কখনো অনিবার্য হয়ে উঠতেই পারে। স্বামী বা স্ত্রীর মনে রাখা উচিৎ তাদের বিচ্ছেদ যেন অন্যের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। আর নিজেদের মধ্যে শুরু থেকেই বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে। থাকতে হবে স্বচ্ছতা। থাকতে হবে সহনশীলতা এবং সমঝোতার মানসিকতা। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সুস্থির হয়ে। অস্থির সময়ে নয়। রাগ বা অস্থিরতার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলে তা আসলে অনেক সময়ই সঠিক হয় না।
তবে বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান শিকার হন সন্তানরা। তারা বেড়ে ওঠে ‘ব্রোকেন ফ্যামিলির’ সন্তান হিসেবে। যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। তারা এক ধরনের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে’ ভোগে।
মনোচিকিৎসকরা মনে করেন, ‘সন্তানরা যদি বাবামায়ের স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। তারা সমাজকে, পরিবারকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে। তাদের মধ্যে জীবনবিমুখতা তৈরি হয়। যা ভয়াবহ’।