শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল
অনলাইন ডেস্ক

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ সারেয়া খাতুনের কোল আলো করে জন্ম নিলো ছোট্ট একটু শিশু। নাম তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।সবাই তাকে আদর করে খোকা বলে ডাকতো। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান আর মায়ের নাম সারেয়া খাতুন। গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন তিনি। তার ৪ ভাই ২ বোন। ৬ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ছোট বেলায় খোকা যেমন বুদ্ধিমান ছিলো তেমন দুষ্টুও ছিলো বটে ।ছোট কাল থেকেই সে দয়ালু স্বভারের ছিলো। সবাইকে সবসময় সাহায্য করতেন। সাত বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমান গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তাঁর স্কুল জীবন আরম্ভ করেন। নয় বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে ম্যাট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। তিনি ইসলামীয়া কলেজে ছাত্র সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। এই সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন।১৯৪৬ সালে সাম্প্রতিক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে সেচ্ছাসেবক হিসেবে অসীম ভূমিকা পালন করেছিলেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ব বাংলায়( বাংলাদেশ) চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালের ৪ই জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

তবে এর ভিতরেও একটি বিষয় হলো আমরা যদি মুজিবের শৈশব কালে ফিরে যাই তবে তার আলোকে বলবো প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষন থেকে স্বাধীনতার জন্য উত্তাল ভারতের অগ্নিগর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব শৈশব কাল থেকেই জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষন ও নির্যাতন দেখেছেন। মানুষের দুঃখ, কষ্ট থেকে তাদের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।অল্পবয়স থেকেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন- শোষনের হাত থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে মুক্তি হলেও বাঙালির ওপর জেঁকে বসে থাকে পাকিস্তান ঔপনিবেশিক শাসন শোষন। নিপীড়ন -নির্যাতন, ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র শুরু থেকেই বাঙ্গালির ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে।অন্যায়ের বিরুদ্ধে তখন থেকেই প্রতিবাদী হয়ে উঠে বাঙ্গালি। ছাত্র জীবন থেকেই মুজিবুর বাঙ্গালির মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন।বাঙ্গালির স্বাধীন দেশ ফিরিয়ে দিতে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক জনসভায় শেখ মুজিব সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই প্রস্তুত থাকো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি ঘরে ঘরে দূর্গ ঘরে তোলো। বঙ্গবন্ধুর এই গুরুত্বপূর্ণ চূড়ান্ত নির্দেশ বাঙ্গালি জাতিকে উজ্জীবিত করে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে।

এই রাজনৈতিক জীবন তিনি শুধুমাত্র জনগনের দুঃখ, কষ্ট দূর করার জন্যই বেছে নিয়েছিলেন। বাঙ্গালির প্রতি চরম নির্যাতন যেন চোখে দেখার মতো ছিলো না।রাজনীতিতে এসে তিনি অধিক সময় কারাগারে বন্ধি ছিলেন বাঙ্গালি মুক্তির দাবিতে। ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেও বাদ পড়েননি তিনি। তবুও তিনি বাঙ্গালি লড়াই এর কথা ভূলেননি। মুক্তিযোদ্ধার জন্য তৈরি করতে চরম কষ্ট আর উপেক্ষা পাড়ি দিতে হয়েছিলো তাকে।

তার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামে বাঙ্গালিরা সেনারা তৈরি হয়েছিলো। ৫২,৫৪,৬২,৬৬ এর আন্দোলন আর ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান আর ৭০ এর নির্বাচনে বিজয় সবই জাতির সংগ্রামী ইতিহাস। আর এই কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রামে বলিষ্ঠ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন।১৯৭১ সালের ২৫ই মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বাত্মক হামলা চালালে শুরু হয় বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালি পায় একটি স্বাধীন সার্বভোমত্ব বাংলাদেশ।

এই খুশি কতটা দিন থাকবে বাঙ্গালিরা জানতো না। তারা তাদের মুজিবকে কতদিন পাশে পাবে সেটাও জানা ছিলো না। স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন দেশকে আনতে না আনতেই প্রাণ দিতে হলো জাতির জনক কে। পাকিস্তানি বন্ধিদশা থেকে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসেন। তারপরেও তিনি থেমে থাকেননি। তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য অর্থাৎ দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় মানবতার শত্রু, স্বাধীনতা বিরোধি, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘাতক চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারকে নিমর্মভাবে হত্যা করে।

তবে, আজ ২০২৩ সালের ১৭ই মার্চ বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী। আজ জাতীয় শিশু দিবস। এই দিন টিকে ঘিরে হাজারো রাজনীতিবিদ হতে শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগন হতে ব্যাপক আলোচনা সভা বসে এবং তার সাথে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ব্যাপক হারে দেশ বাসির জন্য আয়োজন করা হয়েছে।প্রশাসনের ভিতরে যা যা কর্মসূচি করা দরকার তাই করছে। সাথে বাহিরেও নানান কর্মসূচি হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান চিরকাল থেকেই যাবে। তার প্রতিটি মূল্যবান কথাই বাঙ্গালি জাতিকে তার লক্ষ্যে পৌছাতে উৎসাহিত করে।

বঙ্গবন্ধুর কিছু বানী যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে তা হলো :

‘কোন জেল জুলুমই আমাকে টলাতে পারিনি,কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আমাকে বিব্রত করে তুলেছে।’

‘আমি সব ত্যাগ করতে পারি কিন্তু তোমাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে পারবো না।’

‘যার মনের মধ্যে আছে সাম্প্রদায়িকতা সে হলো বন্য জীবের সমতুল্য।’

‘চরম ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া কোনো জাতির মুক্তি আসেনি।’

‘যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত তাকে কেউ মারতে পারেনা।’

‘সর্বশেষ একটা কথাই বলবোই আমাদের জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরই সেরা।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়