প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
রফিকদের সংসার খুব সাজানো গোছানো। রফিক, তার দুই বোন ও বাবা-মা মিলে তাদের সুন্দর সংসার। তবে দামি কোনো আসবাবপত্র দিয়ে তাদের ঘর সজ্জিত নয়, তবুও তাদের ঘরে একটা পরিপূর্ণতা রয়েছে। রফিকের বাবা সারাদিন বাইরে কাজ করে রাতে যখন ঘরে ফিরে, এক নিমিষেই যেন তাদের সকল ক্লান্তি-শ্রান্তি-অভাব-দুঃখ দূর হয়ে যায়। সময়টা যেন তাদের পক্ষেই চলছে।
হঠাৎ একদিন রফিকের বাবা না ফেরার দেশে চলে গেলেন। তাদের ঘরে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। রফিকের মা স্বামীর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান, প্রায় পাগল হয়ে আছেন। সংসারের সব দায়দায়িত্ব এসে পড়লো রফিকের কাঁধে। রফিক এখন ধীরে ধীরে বাবার অভাববোধ করছে। রফিকের খুব করে মনে পড়ছে বাবার কষ্টের কথা, সে এখন উপলব্ধি করছে একা একা সংসার চালানো কতা কঠিন কাজ। রফিকের মনে পড়ছে, তার বাবা সারাজীবন ব্যয় করেছেন তাদের ভাই-বোনদের পড়াশুনার খরচ, সংসারের ব্যয়ভার ও তাদের নানান আহ্লাদণ্ডআবদার মেটাতে মেটাতে।
রফিকের মনে তার বাবার দেওয়া একটি স্মৃতি উকি দিয়েছে আজ। একবার রফিক বাবার কাছে লাল রঙের সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরেছিল। সংসারের সব খরচ মেটানোর পর বাবার হাতে কোনো কানাকড়িও ছিল না।
এরই মধ্যে রফিকের ছোটো বোন টুম্পা অসুস্থ হয়ে পড়ায় টাকা ধার করে তার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। কিন্তু রফিক ছিলো খুব নাছোড়বান্দা, তাকে সাইকেল কিনে দিতেই হবে। রফিকের জেধের কাছে হার মেনে সেবার তার বাবা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে তাকে সাইকেল কিনে দিয়েছিল। রফিকের হাতে সাইকেল দেওয়ার সময় শুধু তার বাবা একটা কথাই বলেছিল, ‘তোকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। জীবন চলার পথে কেউ তোর সঙ্গী হবে না।’
রফিক এখন তার বাবার কথার মর্ম অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছে। বাবার মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজন কেউই তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এখন পুরো সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে নিজেকেই। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এলে রফিকের বিমর্ষ লাগে, চারপাশটা খুব শূন্য শূন্য লাগে। তখন রফিক ঘরের এক কোণে সযত্নে রাখা পুরনো বাইসাইকেলটার পাশে গিয়ে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকে। রঙ উঠে জং ধরা সাইকেলটা স্পর্শ করলে যেন সে তার বাবার অস্তিত্ব টের পায়। ওর কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তার বাবার সেই মর্মবাণী, ‘তোকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। জীবন চলার পথে কেউ তোর সঙ্গী হবে না।’ এ কথাটা মনে পড়লেই রফিকের শরীর হিম হয়ে আসে, বাবার ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় তার সারাটা ভুবন।