প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
প্রতিবন্ধীত্ব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রতিবন্ধীত্বের উপর বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। খানার আয় ও ব্যয় জরীপ ২০১০ অনুযায়ী, অক্ষমতার হার মোট জনগোষ্ঠীর ৯.১ শতাংশ, যদিও ২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারী অনুযায়ী এ হার শতকরা ১.৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি হলো এই যে, প্রতিবন্ধী শিশু মূল যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় সেটা তার বৈকল্য নয়, বরং সেটা হলো ব্যাপক বৈষম্য এবং কুসংস্কার। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য। সমাজের সর্বস্তরে এ রূপ একটি বিশ্বাস আছে যে, প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি যা প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অংশগ্রহণের সুযোগকে প্রভাবিত করে। প্রতিবন্ধীকতা বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী শিশু বলতে অসুস্থতার কারণে দুর্ঘটনায় চিকিৎসাজনিত ত্রুটি বা জন্মগতভাবে যদি কারো শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায় বা তুলনামূলকভাবে কম হয় তাহলে সেই শিশু প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তাদের প্রতি সহানুভূতির অভাব। তারাও যে মানুষ, এই বোধ অনেকের মধ্যে দেখা যায় না।
এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্যাপারে সচেতনতার অভাব প্রকট। ওই শিশুদেরও যে বিশেষ প্রতিভা থাকতে পারে, এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। এ কারণে তাদের বেশি অবহেলার শিকার হতে হয়। হাসান (ছদ্মনাম) আমাদের এলাকায়ই থাকে। হাসানের গতমাসে ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সে সঠিকভাবে কথা বলতে পারে না। হাসানের হাঁটতে অনেক অসুবিধা হয়। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এলাকার কেউ তাকে পছন্দ করে না। সবাই তাকে অবহেলা করে। তাকে নিয়ে উপহাস করে। হাসানের মতো এমন অনেক প্রতিবন্ধী শিশু আছে যারা অবহেলিত। আমাদের তাদেরকে অবহেলা করা উচিৎ নয়। তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা উচিৎ নয়। তাদেরও থাকে কিছু ইচ্ছে, কিছু স্বপ্ন। আমাদের উচিৎ তাদের এই অধিকার নিশ্চিত করা। তারা যাতে সমাজে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। তাই বলতে চাই, আমাদের দেশের অনেক মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তাদের অনেকেই জানে না প্রতিবন্ধী শিশুদের কীভাবে যত্ন নিতে হয়। তাদের আলাদা সেবা করতে হয়। সেই জায়গা থেকে গ্রামের পরিবারগুলোতে প্রতিবন্ধী শিশুরা সঠিক সেবাযত্ন পায় না। এজন্যে প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুদের অনেক বেশি সেবাকেন্দ্র তৈরি জরুরি। তাহলে প্রচারণা সঠিক কাজে লাগবে।
মোঃ মেজবাহ উদ্দিন আবির : শিশু গবেষক, ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ), চাঁদপুর।