শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০

দুঃখী পাখি
মোহাম্মদ তাইয়্যেব হোসাইন

অনেকদিন ধরেই মা পাখি আর বাবা পাখিটার মনে খুবই আনন্দ আর খুশি। নিশ্চয় তার কোনো কারণ আছে। হ্যাঁ অবশ্যই আছে। কারণ তাদের ঘর আলোকিত করে এসেছে দুটি ছোট্ট ছোট্ট ছানা। কী সুন্দর ছানাগুলো। দেখতে খুব আদর লাগে। নরম নরম গা। সারাটা দিন কিচিরমিচির আওয়াজ ব্যতীত কোনো ভাষা নেই। অবশ্য ভাষাগুলোও অনেক মধুর। মানুষের কাছে না হলেও পাখিদের কাছে হবে। মানুষের কথা বলে কী লাভ, তারা তো নিজের লাভ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। যাই হোক মূল গল্পে আসি, মা পাখি আর বাবা পাখি খুব আদর আর যতœ করে তাদের বড় করে তুলছে। বাবা পাখি সারাদিন বাহির হতে খাবার জোগাড় করে আনে আর মা পাখি নরম নরম সুস্বাদু খাবারগুলো নিজ ঠোঁট দিয়ে বাচ্চার মুখে দেয়। বাচ্চারাও তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। এভাবে এক এক করে অনেকদিন কেটে গেলো। বাচ্চাগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো।

একদিনের কথা, ভোরবেলা বাবা পাখিটা বাহিরে চলে গেলো। সূর্য একটু একটু উঁকি মারছে পূর্ব আকাশে। হঠাৎ কিসের শব্দে মা পাখিটার ঘুম ভাঙলো। উঠে দেখে, একদল লোক বনে এসে কী বিষয়ে জানি কথা বলছে। কিছুক্ষণ পর তারা চলে যায়। লোকগুলো চলে যাওয়ার পর সারা বনে খবর হয়ে গেলো যে, আজ থেকে এই বনটা নাকি কাটা শুরু করবে। তাই পাখির রাজা ঈগল ঘোষণা দিলো যে এখনি বন ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে। রাজার ঘোষণায় এক এক করে সব পাখি বন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। একদিকে মা পাখিটা অস্থির হয়ে উঠলো কখন তার স্বামী আসবে। স্বামীকে ছাড়া তো আর যাওয়া যাবে না।

বনের মধ্যে প্রায় সব পাখি চলে গেছে ইতোমধ্যে। শুধু দুই একটা আছে। তারাও যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে। একটা পাখি এসে মা পাখিটাকে বললো, ‘তোমরা যাবে না? এখনও যে বসে আছো? লোকগুলো তো কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।’ মা পাখিটা সব বললো পাখিটাকে। পাখিটাও আর কিছু বললো না।

সারা বন খালি হয়ে গেছে। এখনও তার স্বামী আসেনি। এদিকে ছানাগুলোও কিচিরমিচির আওয়াজ শুরু করে দিয়েছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়। বেশ কিছুক্ষণ পর স্বামী ফিরে এলো। এসে সব শোনে স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বললো, ‘তোমাকে আমার জন্যে কে বসে থাকতে বলছে? ছানাগুলোর যদি কিছু হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি কর।’ মা পাখিটা আর বাবা পাখিটা আর দেরি না করে ছানাগুলো নিয়ে যখনি উড়াল দিবে ঠিক তখনি একটা ঢিল এসে পড়লো বাবা পাখিটার মাথায়। সাথে সাথে বাবা পাখিটা মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগলো আর চিৎকার দিয়ে দিয়ে মা পাখিটাকে বললো, ‘তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও। আর এক মুহূর্তও দেরি করো না। নয়তো তুমিও মারা পড়বে।’ মা পাখিটাও স্বামীর কথামতো ছানাগুলোকে নিয়ে বাসস্থানের খুঁজে আকাশ পানে উড়াল দিলো।

শত শত রাস্তা পাড়ি দিয়ে চলছে মা পাখিটা। ছানাগুলো তার ঠোঁটে। খুব ক্লান্ত মা পাখিটা। এক জায়গায় এসে নামলো মাটিতে। ছানাগুলো ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েছে। খাবার না পেলে মারা পড়বে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে কিছু খাবার জোগাড় করলো মা পাখিটা। নিজেও কিছু খেলো এবং ছানাদেরও খাওয়ালো। যাই হোক, আবার ছানাদের ঠোঁটে নিয়ে আকাশপথে উড়াল দিলো মা পাখিটা। যেকোনো একটা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। সূর্য প্রায় ডুবে পড়েছে। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা বনে এসে পৌঁছালো মা পাখিটা। অনেক কষ্টে একটা ঘর তৈরি করলো। এতোক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে। ছানাগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে বাহিরে গিয়ে একটা গাছে বসে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলো মা পাখিটা। তার স্বামীর কথা মনে পড়ছে। নিজের প্রাণ দিয়ে সে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছে এই গভীর বনে। স্বামীর কথা মনে পড়তে দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। এভাবে রাতের আঁধার মুছে দিনের আলো উঁকি মারলো পৃথিবীতে। এবার মা পাখিটা নিজেই ছানাগুলোর দেখা-শোনা করতে লাগলো। এভাবেই অনেক দিন কেটে গেলো।

একদিন সকালে মা পাখিটা খাবারের উদ্দেশ্যে বের হলো। ছানাগুলোকে বাসায় রেখে গেলো সে। অনেকক্ষণ পরে কিছু খাবার নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো মা পাখিটা। প্রায় বাসার কাছাকাছি আসতেই একটা তীর এসে পড়লো মা পাখিটার ডান চোখে। সাথে সাথে রক্তে লাল হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো মা পাখিটা। মাটিতে পড়ে ছটফট করতে লাগলো সে। আর চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো, ‘ওহে নিকৃষ্ট মানুষের দল, আমি তোমাদের কী করেছিলাম যে তোমরা আমাকে এভাবে তীর ছুড়ে মারলে। আমার চোখের রক্ত দেখতে খুব ভালো লাগে কি তোমাদের? কেনো তোমরা আমার ছানাগুলোকে এতিম করলে? তারা তো এখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় হাউমাউ করে কান্না করবে? তাদের কান্নার আওয়াজ অনেক ভালো লাগে তোমাদের? এখন কী হবে আমার আদরের ছানাগুলোর? তাদের এখন কে খাবার এনে দেবে?’ এইসব বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো মা পাখিটা। এতিমের কাতারে দাঁড়ায় ছোট্ট ছোট্ট ছানাগুলো। অন্যদিকে ছানাগুলোরও ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। তারা ছটফট করতে লাগলো। এমন সময় এলো এক বিশাল বাতাস। ভয়ঙ্কর বাতাস ছানাগুলোকে উড়ে নিয়ে ফেলে দিলো বহু দূরে। সাথে সাথে তাদের জীবনের বাতিও নিভে গেলো। আর এভাবে চারটি মৃতদেহ পড়ে থাকলো চারদিকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়