প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:২৪
কবি হেলাল হাফিজ স্মরণে প্যাপিরাস পাঠাগারের সাহিত্য আড্ডা ও আলোচনা সভা

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ ঐতিহাসিক ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার কবি হেলাল হাফিজ স্মরণে সাহিত্য আড্ডা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে প্যাপিরাস পাঠাগার। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) বিকেলে চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ চাঁদ টাওয়ারে অবস্থিত প্যাপিরাস পাঠাগার কার্যালয়ে এ আড্ডার আয়োজন করা হয়।
|আরো খবর
পাঠাগারের প্রধান পরিচালক মিজানুর রহমান স্বপনের সভাপতিত্বে এবং প্রতিষ্ঠাতা অ্যাড. রফিকুজ্জামান রণির সঞ্চালনায় প্রেম, দ্রোহ ও প্রেরণার কবি হেলাল হাফিজের ‘জীবন ও সাহিত্য’ সম্পর্কে আলোচনা করেন পাঠাগারের উপ-সভাপতি ফেরারী প্রিন্স, উপদেষ্টা অ্যাড. মাহমুদ হাসান কবির, দিলীপ ঘোষ, মোহাম্মদ শাহ আলম, সদস্য নাজমুল ইসলাম, রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম, খেলাঘর চাঁদপুরের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির কাঞ্চন, চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির নিয়ন্ত্রণ পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল্লা কাহাফ, কলেজ শিক্ষক মানসুরা বেগম আছমা, আবৃত্তিশিল্পী আমির হোসেন বাপ্পি, ভাসানী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংঘের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম রাজিব, সাহিত্যানুরাগী আকবর হোসেন লিটন, জুলেখা এবং সাংবাদিক জামাল আখন্দ।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাড. রফিকুজ্জামান রণি বলেন, হেলাল হাফিজ খুব কম লিখতেন। তবে যা লিখতেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতো। দেশের প্রায় প্রতিটি সংকটকাল উত্তরণে তাঁর কবিতা প্রেরণা জুগিয়েছে। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানেও ছাত্রজনতাকে তাঁর কবিতা এগিয়ে চলার সাহস জুগিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় তিন-চারবার কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে আমার দেখা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে গেলে প্রায়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। খুব আন্তরিক ছিলেন। আমাদের মতো তরুণদের খুব সহজে কাছে টেনে নিতেন। মনে আছে, মজাচ্ছলে তিনি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘চাঁদপুরে এতো পাটওয়ারী কেন?’
সভাপ্রধান মিজানুর রহমান স্বপন বলেন, হেলাল হাফিজ তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে অমর হয়ে থাকবেন। আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তাঁর কবিতা আমাদের শক্তি এবং সাহস জুগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রেম, দ্রোহ ও প্রেরণার কবি হেলাল হাফিজের ‘জীবন ও সাহিত্য’ সম্পর্কে প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা। সব শেষে চা-চক্রের আয়োজন করা হয়। গত ২৭ নভেম্বর কবি হেলাল হাফিজের ছোটভাই হেহাল হাফিজ মৃত্যুবরণ করেন। অনুষ্ঠানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শোক প্রস্তাব আনা হয়।
উল্লেখ্য, প্রেম, দ্রোহ ও প্রেরণার কবি হেলাল হাফিজ ৭ অক্টোবর ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন নেত্রকোণায়। বাংলাদেশী একজন আধুনিক কবি তিনি। কবি হিসেবে বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়া পর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রায় ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’-এর দুটি পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় থাকে। তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ২০২৫ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে কবি মৃত্যুবরণ করেন।








