সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৭

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

চৌদ্দ.

মরিশাস। ঝর্ণার স্ফটিক জলের স্বচ্ছধারা, সফেদ সমুদ্র বলাকা। পামগাছের সবুজ আচ্ছাদনে ঢেকে থাকা ছোট ছোট পাহাড়, নানা রঙ্গের ফুল ও পাখি। তার চারপাশে ঘিরে ফিরোজা রঙ্গের শান্ত সমুদ্র। একদা এই দেশে এসে এক বিখ্যাত লেখক বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর প্রথম মরিশাস বানিয়েছেন’।

মরিশাসের পাহাড়ের ওপরে বিশাল অট্টালিকায় বসে এসব কথা ভাবছে জামশেদ। তার কথায় ইমতিয়াজ অনন্যাকে নিয়ে এখানে চলে এসেছে। কারণ কানাডায় তারা নিরাপদ নয়। তারা জানতে পেরেছে ইতোমধ্যে ইরফান, তুষার, নাদের ও চেঙ্গিসকে নিয়ে কানাডায় তাদেরকে খুঁজছে।

মনে মনে সবকিছুরই একটা ছক আঁটে জামশেদ। কীভাবে এই আর্মি অফিসার ও অন্যদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যায় এবং দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া যায় তারই নীলনকশা আঁটছে সে।

দূরে সাগরের সৈকতে অনন্যাকে নিয়ে ইরফান বসে আছে। অনন্যা কোনো কথা বলছে না, শুধুই ঢেউ খেলানো সমুদ্রের দিকে চেয়ে আছে অপলকভাবে।

ইমতিয়াজ নীরবতা ভঙ্গ করলো। তারপর অনন্যাকে বললো, ‘আমি আমার শেষ জীবনে তোমাকেই সঙ্গী হিসেবে রেখে দিতে চাই। কানাডায় আমি তোমাকে কিছুই বলিনি, তোমার শরীরও স্পর্শ করিনি। আমি চাই তুমি তোমার মনের সাথে আমাকে মিলিয়ে যেদিন ভালোবাসবে সেদিনই আমি তোমাকে গ্রহণ করবো।’

এবার কথা বললো অনন্যা, ‘তুমি আমাকে দীর্ঘদিন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো। তারপর যখন ঘুম ভাঙ্গালে তখন দেখলাম এই স্বর্গীয় দ্বীপ মরিশাসের সৈকতে। দ্বীপটা আামার কাছে ভালো লেগেছে, এখানে থাকতেও ভালো লাগবে, কিন্তু ... আমি বুঝতে পারছি না ইরফানকে কীভাবে ভুলে যাবো?’

‘ভালোবাসা এমন একটি আবেগ যার কোনো শেষ নেই। শেষ বলতে কিছুই নেই। তুমি আমাকে ভালোবাসবে এটাই আমার শেষ কথা।’ বেশ সুন্দরভাবে বললো ইমতিয়াজ।

একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো অনন্যা। তারপর বললো, ‘যদি আমায় ভালোই বাসতে তাহলে এভাবে চোরের মতো চুরি করে এখানে নিয়ে এলে কেনো? আমি তো তোমাকে কোনোদিনও ভালোবাসিনি, শুধু তোমার মনের মধ্যে একটা ভালোমানুষির ছায়া দেখতে পেয়ে সেদিন তোমাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম, যাতে তুমি ভালো হওয়ার শেষ সুযোগটি পেতে পারো। কিন্তু তুমি আমাকে আমার প্রিয়জনদের মাঝ থেকে চুরি করে নিয়ে এসে তোমার প্রতি আরও ঘৃণার বিষবাষ্প তৈরি করলে।’

‘পৃথিবীতে ঘৃণা করার অপরাধে কারও মৃত্যুদণ্ড হয়নি, ভালোবাসার অপরাধে হয়েছে। আমি না হয় তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পেলাম। এ আর কি।’

‘তাহলে তুমি ভালোবাসার জন্যে মৃত্যুকেও বেছে নিতে পারো?’

‘একশ’ বার, হাজার বার।’

‘তাহলে তা-ই হোক। তোমার রিভলবারটা দাও। তোমাকে গুলি করে এই সাগরে ফেলে আমি চলে যাই’।

দেরি করলো না ইমতিয়াজ। কোমর থেকে রিভলভারটা অনন্যার হাতে তুলে দিলো। অনন্যা হাত বাড়িয়ে রিভলভারটা নিয়ে গুলি লোড করলো, তারপর ইমতিয়াজের মাথা বরাবর তাক করলো।

‘গুলি করো প্রিয়, গুলি করো। তোমার হাতেই আমি মরতে চাই। জানি মৃত্যু আমার একদিন হবেই, তবে ভালোবাসার মানুষের হাতে হলে তাতে দুঃখবোধ থাকবে না।’

রিভলবার হাতে নিয়ে রহস্যময় হাসি হাসলো অনন্যা। তারপর বললো, ‘কথাটা আমি মিথ্যা প্রমাণ করবো। ভালোবাসার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেবো না। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবো, আর তুমি তোমার সমস্ত পাপের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। যেদিন আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন সেদিন তুমি এক অন্য মানুষে পরিণত হবে। আমি সেইদিনের আশায় থাকবো।’ (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়