বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০২

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা এবং গুণগত শিক্ষার প্রশ্ন

মাহফুজুর রহমান মানিক
জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা এবং গুণগত শিক্ষার প্রশ্ন

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা, ২০২৫ প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো (বিএনকিউএফ) তৈরি করা হলেও এবার তা নীতিমালা হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এ নীতিমালা প্রকাশ করলেও এটি শিক্ষার সব ক্ষেত্র তথা সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসার মধ্যে যোগ্যতার সংগতিপূর্ণ মান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর যোগ্যতা কাঠামো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় প্রয়োজনেই জরুরি। জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালার শুরুতেই তা স্পষ্ট করা হয়েছে। শিক্ষা ও দক্ষতা, যোগ্যতার মাপকাঠি জাতীয়ভাবে নির্ধারণ করার মাধ্যমেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সেভাবে মূল্যায়নের সুযোগ থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হলেও যথাযথ মূল্যায়নের দাবি করার সুযোগ তৈরি হয়। সে জন্য জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা জরুরি ছিল। তবে এ নীতিমালা বিশ্বের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণÑসে প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনি নীতিমালা-পরবর্তী করণীয়ও আলোচনার দাবি রাখে।

বৈশ্বিক উদাহরণ

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো প্রধানত ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার জাতীয় স্বীকৃতি। এ যোগ্যতা কাঠামো বাংলাদেশে কিছুটা নতুন হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের যোগ্যতা কাঠামো অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। আমাদের জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর নাম বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (বিএনকিউএফ)। অনুরূপ অস্ট্রেলিয়ার যোগ্যতা কাঠামো অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (একিউএফ); ইউরোপে ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (ইকিউএফ); নিউজিল্যান্ডে এনজেডকিউএফ; ভারতে এনএসকিউএফ; সিঙ্গাপুরে আছে ওয়ার্কফোর্স স্কিলস কোয়ালিফিকেশন্স (ডব্লিউএসকিউ)।

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো

বাংলাদেশে ২০১২ সালে এ ধরনের কাজ শুরু হয়। তখন অবশ্য জাতীয়ভাবে বিষয়টি চিন্তা করা হয়নি। সে সময় কেবল কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয় ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (এনটিভিকিউএফ)। ২০১৮ সালে এসে উচ্চশিক্ষার জন্য এমন কাঠামোর প্রস্তাব করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এর সঙ্গে ২০১৭ সালে চালু হওয়া বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের একটা সংযোগ আছে। বস্তুত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমেই ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর সূচনা। ২০২১ সালে বিএনকিউএফ কাঠামো অনুমোদিত এবং এর উদ্বোধন হয়, যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও যৌথভাবে এই কাঠামোতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। বস্তুত সেই কাঠামোই এবার নীতিমালা হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।

দশ স্তর

বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোয় জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতার উন্নয়ন, শ্রেণিবিন্যাস ও স্বীকৃতিকে ১০টি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কাঠামো অনুসারে একটি শিক্ষা স্তর থেকে আরেকটিতে স্থানান্তর হওয়া যাবে। চাকরির বাজারেও যোগ্যতা সেভাবে নিরূপিত হবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে এসএসসি বা মাদ্রাসার দাখিল কিংবা কারিগরি শিক্ষার সমমান পাস করলে তার অর্জিত যোগ্যতা স্তর হবে ৩। অনুরূপ এইচএসসি বা মাদ্রাসার আলিম কিংবা কারিগরি শিক্ষার সমমানে অর্জিত যোগ্যতা হবে ৫। আর কেউ যদি এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পর চার বছর মেয়াদি কারিগরি শিক্ষা তথা ডিপ্লোমা অর্জন করে, তবে তার স্তর ৬। চার বছর মেয়াদি অনার্স বা তিন বছর মেয়াদি স্নাতক কিংবা মাদ্রাসার ফাজিল পাসের স্তর ৭। স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্সের স্তর ৯ এবং পিএইচডির স্তর রাখা হয়েছে ১০।

সমান্তরালভাবে আরেকটি বিষয় এখানে রাখা হয়েছে। স্তর ১ হলো ন্যাশনাল স্কিলস সার্টিফিকেট, যা অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ বা সমমানের যোগ্যতা। আর নবম শ্রেণির পর স্তর ২। ন্যাশনাল স্কিলস সার্টিফিকেটেরও দ্বিতীয় স্তর। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নীতিমালায় স্তর ১-এ বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষ কর্মী হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে।

প্রথম স্তর, কর্মীর মান

বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা অনুসারে প্রথম স্তর অর্জিত হবে অষ্টম শ্রেণি পাসের পর। এ স্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষ কর্মী হওয়ার পথ খুলবে। যে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পরও যাতে তার জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তার সূচনা এই স্তরে গড়ে দেওয়া হবে।

অনেক দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, যাতে দেশের সব মানুষের শিক্ষা নিশ্চিত হয় এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পর জনসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার ভিত্তি রচনা করা যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করলে এটি সহজ হয়। সে জন্য অষ্টম শ্রেণির মধ্যে শিক্ষার্থীদের মৌলিক সব বিষয় শেখানো জরুরি।

বলা বাহুল্য, বিদ্যমান ব্যবস্থায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থী বাংলা, ইংরেজি, গণিতের পাশাপাশি ধর্ম, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো শেখে বটে, কিন্তু অর্জিত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী যদি প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয় ঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারে, এর মাধ্যমে তার মধ্যে মৌলিক দক্ষতা অর্জিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে শিক্ষার মানে। হয় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের বিষয়গুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারে না; নয় বাস্তব জীবনে সে জ্ঞান কাজে লাগাতে পারছে না। অর্থাৎ একটা বড় শূন্যতা তৈরি হয়। যার প্রভাব পড়ে কর্মক্ষেত্রেও। যে কারণে আমরা দেখি, কোনো শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণি পাসের পর বিদেশে গেলেও তার স্তর অনুযায়ী সে কাজ করতে পারছে না। এমনকি নবম শ্রেণি কিংবা এসএসসি ও সমমান পাস করে বিদেশে যাওয়ার পরও অনেকে তাদের প্রত্যাশিত কাজ করতে পারছেন না। এখানে শিক্ষার মানের প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি সেভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে না যাওয়ার বিষয়ও আছে। এখানে জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো বাস্তবায়নের শঙ্কা তৈরি হয়। তাই জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা তৈরিই শেষ কথা নয়, বরং এর পরবর্তী করণীয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

নীতিমালা ও করণীয়

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর নীতিমালার উদ্দেশ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানদণ্ডের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। এ সমন্বয়ের জন্য প্রথম করণীয়, আন্তর্জাতিক মান অনুসারে গুণগত মান নিশ্চিতকরণ। সরকার সে লক্ষ্যে কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স সিস্টেম ও তার বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি কেবল নির্দেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অংশীজন। এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ এবং যোগ্যতা কাঠামোর স্তরভিত্তিক দক্ষতা অর্জনে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে।

এ নীতিমালায় সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। অথচ তিন ধারার পাঠ্যক্রম, শিক্ষক মান, অবকাঠামো ও শিক্ষার্থী প্রস্তুতিতে যে ধরনের বৈষম্য রয়েছে, তাও ঘোচাতে হবে। কাঠামোতে ১০ স্তরের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে; কিন্তু শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান ও নীতিনির্ধারকরাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার মূল্যায়নে যে ধরনের মূল্যায়ন কেন্দ্র, মূল্যায়নকারী ও মান প্রয়োজন, সে ধরনের অবকাঠামো সীমিত। তা ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ইত্যাদি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে কাঠামো কার্যকর হবে না।

শিক্ষার সঙ্গে শিল্প খাতের সংযোগ

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো দক্ষতা ও শ্রমবাজারকেন্দ্রিক বলে এখানে শিল্প খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বাস্তবে শিল্প খাতের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ কম। উন্নত বিশ্বে শিক্ষার সঙ্গে শিল্প খাতের তাল মিলিয়ে চলার যে ধারা আমরা দেখি, সেই অনুশীলন এখানে গড়ে ওঠেনি। জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালার মাধ্যমে সেই সুযোগ অবারিত। বিশেষ করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা যেহেতু পুরোটাই শিল্পকেন্দ্রিক, সেহেতু শিল্প খাতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। যোগ্যতা কাঠামোতেও বলা আছে– শেখার ফল, দক্ষতা, সক্ষমতা শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী সাজাতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেন্টার ফর ক্যারিয়ার প্লেসমেন্টের মাধ্যমে জব-ম্যাপিং, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, জব ফেয়ার ও শিল্প বিশেষজ্ঞের সেমিনার নিয়মিত করা উচিত। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল শিল্পের সঙ্গে সংযোগের সবচেয়ে কার্যকর রূপ। শিল্প খাতে শিক্ষক/শিক্ষার্থীর সরাসরি প্রকল্পভিত্তিক কাজ করার ব্যবস্থা দরকার। জাপান, কোরিয়া, জার্মানির মতো বিশ্বের উন্নত কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় এগুলো চালু আছে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় পর্যায়ে ‘স্কিল ফোরকাস্টিং’ তথা ভবিষ্যৎ দক্ষতা ঠিক করা। অর্থাৎ শিল্প খাতে কোন দক্ষতা ২-৫ বছর পর লাগবে, তা নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী মানবসম্পদ তৈরি করা। আমাদের বর্তমান উচ্চশিক্ষা যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী বের হচ্ছে, অথচ তত চাকরিক্ষেত্র নেই। আবার কোনো সেক্টরে মানবসম্পদের চাহিদা আছে, কিন্তু তা তৈরি হচ্ছে না। এ বিষয়গুলোও ভাবা দরকার। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সময়ের চাহিদা নিরূপণ করা না গেলে আমাদের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক সংযোগ

জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো যেহেতু আন্তর্জাতিক বাস্তবতা মাথায় রেখেই নিরূপিত হয়েছে, সে জন্য এর সফল বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সংযোগ জরুরি। আমাদের যোগ্যতার কাঠামোর যেসব স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছাকাছি। এই স্তর অনুসারে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যাতে আমাদের শিক্ষিতদের সাদরে গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারকে নেওয়া উচিত। আমরা জানি, কেউ যখন কানাডায় পড়তে/অভিবাসী হিসেবে যেতে চায়, তখন তাকে বাংলাদেশের সনদ সে দেশের মানদণ্ডে নিরূপণ করতে হয়। সে জন্য এডুকেশনাল ক্রেডিনশিয়াল অ্যাসেসমেন্ট-ইসিএ করতে হয়। ইসিএ করতে গিয়ে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। সরকার এখানে কানাডার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারে। আমাদের স্নাতকোত্তরের মান তাদের স্নাতকোত্তর হিসেবেই দিতে হবে। অন্য দেশও আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর স্তর যাতে বিবেচনা করে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সরকার দরকষাকষি করতে পারে। কারণ এ স্তর অনুযায়ী কোনো শ্রমিক বেতন পেলে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই তার বেতন-ভাতা অধিক হবে। এতে তার পরিবার, সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশও উপকৃত হবে।

নজর দিতে হবে শিক্ষার মানে

সরকার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভিন্ন দেশের সঙ্গে তখনই যোগ্যতার মাপকাঠি বিষয়ে দরকষাকষি করতে পারবে, যখন শিক্ষার মান ঠিক থাকবে। ধরা যাক, কেউ এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিদেশে চাকরির জন্য গেল। আমাদের যোগ্যতা কাঠামো অনুসারে তার ৫ স্তরের দক্ষতা অর্জন করার কথা। কিন্তু এই দক্ষতা তখনই অর্জিত হবে, যখন তার শিক্ষা ঠিক থাকে। স্তর অনুযায়ী শিক্ষার্থীর বিকাশ ঠিকমতো হলেই কেবল শিক্ষার মান অর্জিত হবে। মানসম্মত বা গুণগত শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হবে শিশুর সামাজিক, আবেগিক, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। এটি শিশুকে জীবনের জন্য প্রস্তুত করে; কেবল পরীক্ষার জন্য নয়। এর আগে আমরা দেখেছি, শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ফল লাভের পরও সাধারণ বিষয়গুলো মনে রাখতে পারছে না। তার মানে, শিক্ষায় তার ঘাটতি আছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ছাড়া ভালো ফল করার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের এই মান নিশ্চিতে তাই সামষ্টিকভাবে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার মান নিশ্চিত হলে যেমন শিল্প খাত নির্দ্বিধায় আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের কর্মে নিয়োগ দিতে পারবে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও তাদের কর্মসংস্থান সহজ হবে। জাতীয় যোগ্যতা নীতিমালা কাঠামো এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের পথ খুলে দিয়েছে বলে আমি মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়