প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৬
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দশ.
তিন বন্ধু মিথিলা, রায়ান, আরিয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। এ সময় আকাশ থেকে আসা ভিনগ্রহের সংকেত তিন বন্ধুকে স্তব্ধ করে দেয়। মিথিলা, রায়ান আর আরিয়ান একে অপরের দিকে চিন্তিতভাবে তাকিয়েই থাকে। ঠিক সেই সময় নেক্সাসের সতর্কবার্তা যেনো তাদের হৃদয়ে ধাক্কা দেয়।
প্রোটোকন শান্ত কণ্ঠে বলে, ‘শত্রুরা তোমাদের প্রযুক্তি গ্রহণ করবে না, কারণ তারা ভয় পায়। প্রযুক্তি যদি মানবতার হাতে থাকে, তবে তাদের ক্ষমতা ভেঙে যাবে।’
রায়ান মুষ্টি শক্ত করে বলে, ‘তাহলে আমাদের কাজ হলো এই ভয় দূর করা। মানুষকে দেখাতে হবে প্রযুক্তি কোনো শত্রু নয়, বরং বন্ধু।’
এ সময় নেক্সাস তাদের সামনে এক নতুন মানচিত্র খুলে দেয়। সেখানে দেখা যায় মহাকাশের এক অদ্ভুত গুহা। যার সামনে লেখা আছে ‘কসমিক ভল্ট’। তিন বন্ধু সেদিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে, বুঝতে পারে না কী হচ্ছে!
প্রোটোকন জানায়, ‘ডার্ক কোডের শেষ অংশ এখানে লুকানো আছে। যদি তোমরা এটিকে শুদ্ধ করতে পারো, তবে পৃথিবী নিরাপদ হবে।’
তিন বন্ধু সাহস করে সেই ভল্টে প্রবেশ করে। ভেতরে তারা দেখে অসংখ্য ঝলমলে কোড-চিহ্ন, যেনো তারা জীবন্ত। কিন্তু কিছু কোড কালো ছায়ায় ঢাকা। এগুলো দেখে আরিয়ান প্রশ্ন করে, এগুলো কালো কেন?’
নেক্সাস উত্তর দেয়, ‘এগুলো মানুষের ভয় আর লোভের প্রতীক’।
মিথিলা এগিয়ে গিয়ে বলে, ‘আমরা যদি ভালোবাসা আর সত্য দিয়ে এই কোড পুনর্লিখন করি, তবে অন্ধকার দূর হবে?’
রায়ান উত্তর দেয়, ‘হ্যঁা, সম্ভব। হতেও পারে। দেখি চেষ্টা করে কী হয়।’
আরিয়ানও সায় দেয়। তারা একসাথে কাজ শুরু করে। রায়ান কোডে যুক্ত করে ‘সাহস’, আরিয়ান যুক্ত করে ‘মানবতা’, আর মিথিলা যুক্ত করে ‘সত্য’।
মুহূর্তেই তারা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ধীরে ধীরে কালো ছায়া মিলিয়ে গেছে। অদ্ভুত রঙ্গিন ছাড়া ভেসে বেড়াচ্ছে।
এ সময় কোড শুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে ভল্ট আলোকিত হয়ে ওঠে। নেক্সাস ঘোষণা করে, ‘তোমরা সফল হয়েছো। এখন পৃথিবীতে ফিরে যাও।’
তিন বন্ধু বাস্তবে ফিরে আসে। কিন্তু এবার পৃথিবী বদলে গেছে। মানুষ আর ভ্রান্ত তথ্যের ফঁাদে নেই। ‘সত্যপথ’ প্ল্যাটফর্ম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা আনন্দে শিখছে প্রযুক্তি, বড়রা শিখছে নৈতিকতা।
তিন বন্ধু দেখে, স্কুলে শিশুরা কোডিং শিখছে খেলনার মতো। তারা ছোট ছোট রোবট বানাচ্ছে, যা গান গায়, গল্প বলে, আর গাছ লাগাতে সাহায্য করে।
একটি শিশু মিথিলাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপু, আমরা কি তোমাদের মতো পৃথিবী রক্ষা করতে পারবো?’
মিথিলা হাসি দিয়ে উত্তর দেয়, ‘অবশ্যই পারবে। তোমাদের হাতেই ভবিষ্যৎ।’
ঠিক তখনই আবার আকাশে ভিনগ্রহের সংকেত আসে। কিন্তু এবার তা শত্রুতার নয়, বরং বন্ধুত্বের। বার্তায় লেখা থাকে, ‘তোমরা প্রমাণ করেছো প্রযুক্তি মানবতার জন্য। আমরা তোমাদের বন্ধু হতে চাই।’
তিন বন্ধু বিস্মিত হয়। তারা বুঝতে পারে, ভয় জয় করার পরই বন্ধুত্ব আসে।
প্রোটোকন বিদায় নিতে আসে। সে বলে, ‘আমার কাজ শেষ। তোমরা এখন নিজেরাই পথ দেখাতে পারো।’
এ সময় নেক্সাসও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, কিন্তু তার কণ্ঠে শেষ বার্তা শোনা যায়, ‘তোমাদের হাতে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। মানবতা আর প্রযুক্তি একসাথে থাকলে কোনো শত্রু নেই।’
তিন বন্ধু একে অপরের হাত ধরে দঁাড়ায়। তাদের চোখে আত্মবিশ্বাস, হৃদয়ে আনন্দ। তারা জানে, পৃথিবী এখন শিশুদের হাসি আর মানুষের বিশ্বাসে ভরে উঠবে।
পৃথিবী জুড়ে উৎসব শুরু হয়। শিশুরা গান গায়, ‘প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু, মানবতা আমাদের শক্তি। সত্য পথে চলবো সবাই, ভবিষ্যৎ হবে আলোকিত।’
এবার তিন বন্ধু আকাশের দিকে তাকায়। তারা দেখে তারার ঝলকানি যেনো তাদের হাসি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
আরিয়ান বলে, ‘আমরা জয়ী হয়েছি।’
রায়ান যোগ করে, ‘কিন্তু আসল জয় হলো মানুষের বিশ্বাস।’
মিথিলা হাসি দিয়ে বলে, ‘এটাই আমাদের অদ্ভুত চিন্তাজাল, যেখানে কল্পনা আর প্রযুক্তি একসাথে শিশুদের আনন্দের পৃথিবী গড়ে তোলবে।”
হঠাৎ করেই তারা দেখে তাদের বাবা-মায়েরা এগিয়ে আসছে সেদিকেই। তিন বন্ধু ভয়ে ছুটে পালাচ্ছিলো। কিন্তু তারা বললো, ‘তোমরা পালিয়ো না, দেশের সমস্ত মানুষ তোমাদের জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছে, তারা জেনে গেছে তোমরা পৃথিবীর মানুষের জন্যে এক অবাক করা আবিস্কার বয়ে এনেছো, যা মানব সভ্যতার জন্যে কল্যাণকর।’
এবার তাদের হুঁশ হলো। তারা ফিরে দঁাড়ালো, দেখলো হাজার হাজার মানুষ তাদের পেছনে এগিয়ে আসছে।
প্রায় পনেরো দিন পর। তারা তাদেরকে দেখলো একটি সংস্থায়। সংস্থাটি জানালো তিন বন্ধুর সমস্ত নতুন আবিস্কারকে তারা সেলিব্রেট করবে, আর মানুষের কল্যাণে তা ছড়িয়ে দিবে বিশ্বময়। যাতে মানুষ ক্ষুধায় কাতর না থাকে, রোগ যন্ত্রণায় না মরে, আর মানুষের মধ্যে যাতে সত্য, মানবতা আর বিশ্বাসের বন্ধন তৈরি হয়।
তারা সায় দিলো। তাদের বাবা মায়েরাও খুশি হলো। এরপর একদিন তারা সন্ধ্যার পর আকাশের কালো অন্ধকার ভেদ করে নেক্সাসকে দেখলো তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে...। আর পেছনে প্রোটোকনও রয়েছে।
তারপর তারা অবাক হয়ে দেখলো নেক্সাস আর প্রোটোকন কালো আকাশে ধেঁায়া দিয়ে লিখেছে : ‘‘সত্য, মানবতা আর বিশ্বাস পৃথিবীকে মুক্তি দিবে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর অবিশ্বাস মানবতাকে ধ্বংস করবে।’’ (সমাপ্ত)








