প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৭
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার চিরন্তন বন্ধন

একজন বাবার কাছে তার মেয়ে কেবল সন্তান নয়, সে যেন দেবী লক্ষ্মীর মতোই পবিত্র এবং আদরেরÑএ কথাটি বাবা-মেয়ের সম্পর্কের গভীরতম দিকটি প্রকাশ করে। এ সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বন্ধনগুলোর মধ্যে অন্যতম। যখন একটি মেয়ে ছোট থাকে, বাবার হাত ধরে সে পৃথিবীর পথে প্রথম পা ফেলে, প্রথম হাঁটা শেখে, নতুন করে পৃথিবীকে চিনতে শুরু করে। বাবা তখন শুধু একজন অভিভাবক নন, তিনি হয়ে ওঠেন এক পরম আশ্রয়। তার বুকে মাথা রেখে মেয়েটি সব ভয়-ভীতি ভুলে যায়, সবসময় দূর হয়ে যায়। সেই ছোট্ট হাতটি যখন বাবার আঙুলকে শক্ত করে ধরে, তখন বাবা অনুভব করেন এক স্বর্গীয় প্রশান্তি। তার মনে হয়, তিনি যেন কোনো দেবী-প্রতিমাকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন, যার পবিত্রতা এবং নিষ্পাপতা তার জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছে।
এ বন্ধন শুধু সময়ের সাথে সাথে বাড়ে না, এর গভীরতাও বাড়ে। একজন বাবা তার মেয়ের মধ্যে লক্ষ্মীর মতো পবিত্রতা, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি দেখতে পান। তিনি বিশ্বাস করেন, তার জীবনে এ মেয়ে যেন এক আলোকবর্তিকা, যে তার ঘরকে আলোকিত করেছে, তার জীবনকে এক ভিন্ন ধরনের আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে। এ অনুভূতিতে কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না, থাকে শুধুই বিশুদ্ধ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। বাবা তার মেয়ের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেন, যে কঠোর পরিশ্রম করেন, তার পেছনে কোনো প্রতিদানের আশা থাকে না। তার একমাত্র চাওয়া হয় মেয়ের মুখের হাসি দেখা। সেই হাসি তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্জন। এই ভালোবাসা কোনো শর্তে বাঁধা নয়, এটি চিরন্তন, সীমাহীন এবং নিঃস্বার্থ। এটি শুধু একটি দায়িত্ব পালন নয়, এটি একটি পবিত্র বন্ধন, যা’ একজন বাবা পরম আনন্দের সাথে পালন করেন।
মেয়েটিও তার বাবার মধ্যে খুঁজে পায় এক অসীম শক্তি এবং নির্ভরতার উৎস। বাইরের কঠিন পৃথিবীতে যখন কোনো বাধা বা বিপত্তি আসে, যখন সে দিশাহারা হয়ে পড়ে, তখন বাবার কাঁধই হয় তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। সেই কাঁধে ভর করে সে পৃথিবীর সব ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবিলা করার সাহস পায়। বাবার দেওয়া ভালোবাসা তার কাছে এক অদৃশ্য বর্মের মতো কাজ করে, যা তাকে সব ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করে। এই ভালোবাসা কোনো কিছুর বিনিময়ে পাওয়া যায় না, এটি নিঃশর্তভাবে হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়। এটি এমন একটি বন্ধন যা রক্ত বা অন্য কোনো সম্পর্কের চেয়েও অনেক বেশি দৃঢ় এবং আবেগপূর্ণ। এটি শুধু ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার এক অনন্য উদাহরণ, যা প্রতিটি মেয়ের জীবনকে সম্পূর্ণ করে তোলে। বাবার ভালোবাসা একজন মেয়েকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, তাকে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়।
যখন একটি মেয়ে সফল হয়, তার সেই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে তার বাবার। তিনি নীরবে তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেন, তার পাশে থেকে তাকে সাহস দেন। এই সম্পর্ক এতটাই গভীর যে, এর প্রতিটি মুহূর্ত এক একটি স্মৃতি, যা সারাজীবন ধরে সযত্নে লালন করা হয়। বাবার দেওয়া প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি শিক্ষা, প্রতিটি ভালোবাসা একটি মেয়ের জীবনে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকে। এটি এমন এক বন্ধন যা সময়ের সাথে সাথে আরও মধুর হয়। একজন মেয়ের জন্য তার বাবা হলেন তার প্রথম নায়ক, তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
বাবা এবং মেয়ের এ বন্ধন এক পবিত্র প্রতিশ্রুতি, যা’ জীবনভর অটুট থাকে। একজন বাবা তার মেয়ের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন, শুধু তাকে খুশি দেখার জন্যে। যখন মেয়েটি বড় হয়, তার প্রতিটি নতুন ধাপে বাবা এক নতুন আনন্দ খুঁজে পান। তার মেয়ের বিয়ের দিন যখন সে শ্বশুরবাড়ি যায়, তখন বাবার চোখ দিয়ে যে আনন্দের অশ্রু ঝরে, তা কেবল এক ভালোবাসা আর ত্যাগেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি জানেন যে তার লক্ষ্মী আজ অন্য ঘরে যাচ্ছে, কিন্তু তার মনের গভীরতম স্থান থেকে তিনি সবসময় তার মেয়ের মঙ্গল কামনা করেন।
এ বন্ধন শুধু জৈবিক নয়, এটি আত্মিকও। এটি ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার এক অনন্য উদাহরণ। বাবা তার মেয়ের জন্যে শুধু একটি নিরাপদ আশ্রয় নন, তিনি তার কাছে এক পরম বন্ধু, একজন শিক্ষক এবং একজন পথপ্রদর্শক। এ সম্পর্ক প্রতিটি মেয়ের জীবনে এক সম্পূর্ণতা নিয়ে আসে। এটি এমন এক বন্ধন যা কখনো শেষ হয় না, বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা’ আরো উজ্জ্বল এবং গভীর হয়। বাবা-মেয়ের এ পবিত্র সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি, যা আমাদের মানবিকতা এবং ভালোবাসার গভীরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।







