প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৮
উর্দু সাহিত্যে প্রবীণ জীবন

উর্দু সাহিত্যে প্রবীণের সুঃখ-দুঃখ, সম্মান-অসম্মানকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। নিচে ৫ টি উপন্যাস, ৫টি ছোট গল্প, ১০টি কবিতা পাঠকের বিবেচনার জন্যে তুলে ধরা হয়েছে।
|আরো খবর
(ক) Aag Ka Darya– কুররাতুল আইন হায়দার
এখানে প্রবীণ চরিত্ররা ইতিহাসের ধারক।
তাদের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন সময়ের প্রবাহে প্রাচীন অভিজ্ঞতার গুরুত্ব, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে উপেক্ষিত। প্রবীণরা ঐতিহ্য ও প্রজ্ঞার ধারক।
(খ) Ujadey Log– আবদুল্লাহ হুসেইন
দেশভাগ পরবর্তী শরণার্থী জীবনে প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে আত্মপরিচয় সংকটে পড়ে। বার্ধক্য অসহায়ত্ব ও শেকড়চ্যুতির বেদনা।
(গ) Godhuli–রাজিন্দর সিং বেদী
এখানে বার্ধক্যকে অস্তগামী সূর্যের মতো বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রবীণ চরিত্ররা জীবনের শেষ প্রান্তে সম্পর্কের ভাঙ্গন টের পান।
নিঃসঙ্গতা ও জীবনের অস্তকাল।
(ঘ) Khuda Ki Basti– শওকত সিদ্দিকি
সমাজে গরিব প্রবীণদের সংগ্রাম ও অবহেলা কেন্দ্রীয়। বার্ধক্য এখানে দারিদ্র্য ও অনাহারের প্রতীক।
প্রবীণতা=সামাজিক শোষণের শিকার।
(ঙ) Sheher-e-Azaab–ইন্তিজার হুসেইন
প্রবীণ চরিত্ররা ভাঙ্গা শহর ও সংস্কৃতির স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচে।
প্রবীণতা=স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের রক্ষক।
২. ছোটগল্পে প্রবীণ জীবন(ক) Aakhri Sailab– কুররাতুল আইন হায়দার
প্রবীণ চরিত্র স্মৃতি ও দুঃখ নিয়ে বাঁচে।
বার্ধক্য=অতীতের ভার বহন।
(খ) Toba Tek Singh– সাদাত হাসান মান্টো
পাগলা গারদে প্রবীণ চরিত্ররা দেশভাগের শিকার। বিভাজনের ফলে তাদের জীবনের মানচিত্র ভেঙ্গে পড়ে।
প্রবীণতা=রাজনৈতিক অস্থিরতায় আত্মপরিচয়ের সংকট।
(গ) Thanda Gosht –সাদাত হাসান মান্টো
এখানে এক প্রবীণ নারী চরিত্র সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র বহন করে।
প্রবীণতা=সমাজের নৈতিক ভাঙ্গনের প্রতীক।
(ঘ) Boo–ইসমত চুগতাই
প্রবীণ নারীর অভিজ্ঞতা যৌবনের স্মৃতির সাথে মিশে থাকে।
প্রবীণতা=অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষা ও একাকিত্ব।
(ঙ) Khol Do–সাদাত হাসান মান্টো
প্রবীণ পিতার অসহায়ত্ব এখানে কেন্দ্রীয়।
বার্ধক্যে সন্তান হারানোর বেদনা ও অসহায় পিতৃত্ব।
৩. কবিতায় প্রবীণ জীবন(ক) Budha Darakht– ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
প্রবীণ গাছকে বার্ধক্যের প্রতীক করা হয়েছে।
বার্ধক্য সময়ের সাক্ষী।
(খ) Phir Koi Shajar– আহমেদ ফারাজ
প্রবীণ বয়স মানে পতনশীল গাছ, তবুও অভিজ্ঞতার ছায়া দেয়।
(গ) Safar–মজাজ লখনবী
জীবনের যাত্রাপথের শেষে প্রবীণ বয়সকে ‘দীর্ঘ ক্লান্তি’ হিসেবে চিত্রিত।
প্রবীণতা=অন্তিম যাত্রা।
(ঘ) Raat Yun Dil Mein –ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ
স্মৃতিচারণের কবিতা, প্রবীণ বয়সে প্রেম-অতীতের স্মৃতি আলো হয়ে জ্বলে।
প্রবীণতা=স্মৃতির আলো-অন্ধকার।
(ঙ) Khuda Se– আল্লামা ইকবাল
কবিতায় প্রবীণ বয়সকে আত্মিক জাগরণের পর্যায় বলা হয়েছে।
প্রবীণতা=আধ্যাত্মিকতা ও ঈশ্বরচিন্তার উন্মেষ।
(চ) Boodha Aadmi– বশির বদর
এই কবিতায় এক প্রবীণ মানুষের নিঃসঙ্গতা ও অবহেলা ফুটে উঠেছে।
তিনি চারপাশে মানুষের ভিড় দেখলেও আসলে একা। কারণ বয়সের কারণে তার কথা কেউ গুরুত্ব দেয় না।
তার স্মৃতিই একমাত্র সঙ্গী। সমাজে প্রান্তিক হয়ে যাওয়া। সন্তান ও পরিবার থেকেও দূরে সরে যাওয়া।
শারীরিক দুর্বলতা + মানসিক শূন্যতা।
(ছ) Intezaar–পারভীন শাকির।
পারভীন শাকির এখানে প্রবীণ বয়সকে অপেক্ষার সময় হিসেবে দেখিয়েছেন।
বিশেষ করে প্রবীণ নারীর জীবন—যেখানে তিনি অতীতের প্রেম ও স্মৃতি মনে করে অপেক্ষায় থাকেন, কিন্তু বর্তমান তাকে আনন্দ দেয় না।
নারীর বার্ধক্যের একাকিত্ব। অতীতের প্রেম স্মৃতি হয়ে থাকা।
জীবনের শেষভাগে অপেক্ষা=নিঃসঙ্গতার প্রতীক।
(জ) Zindagi Ke Safar Mein–কাইফি আজমি
কাইফি আজমি প্রবীণ বয়সকে জীবনের দীর্ঘ যাত্রার শেষ অধ্যায় হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
যৌবনে মানুষ স্বপ্ন দেখে, সংগ্রাম করে। কিন্তু বার্ধক্যে এসে সেই স্বপ্নের অনেকটাই মলিন হয়ে যায়। প্রবীণরা পথের ক্লান্ত যাত্রী হয়ে পড়ে।
জীবনের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা, স্বপ্নভঙ্গ ও ক্লান্তি।
(ঝ) Budhapa–জোশ মালিহাবাদি।
জোশ মালিহাবাদি এক বিদ্রোহী সুরে বার্ধক্যকে বর্ণনা করেছেন।
শরীর হয়তো দুর্বল, কিন্তু আত্মা শক্তিশালী থাকে।
তিনি বলেছেন, প্রবীণ বয়স মানেই হার মানা নয়—বরং মানসিক শক্তি দিয়ে নতুন প্রজন্মকে পথ দেখানো। শরীর বনাম আত্মার দ্বন্দ্ব। প্রবীণ বয়সে সংগ্রামী মনোভাব।
(ঞ) Yaadein–গুলজার
গুলজারের কবিতায় প্রবীণ বয়স মানে স্মৃতির ভাণ্ডার। একজন প্রবীণ মানুষ তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মনে মনে পুনরুজ্জীবিত করেন।
বর্তমান তার কাছে শূন্য, অতীতই তার আনন্দ ও বেদনার আশ্রয়।
প্রবীণ জীবনচিত্র :
অতীতের প্রেম, সুখ-দুঃখ স্মৃতি হয়ে থাকে।
বার্ধক্যে বর্তমানের চেয়ে স্মৃতি বড়ো।






