বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৮

নবীন শিক্ষক ও শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ

সুনির্মল দেউরী
নবীন শিক্ষক ও শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ

প্রচলিত বাক্যে শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কালের বিবর্তনে এ পেশার মহত্ত্বের আলোকছটা যেন ফিকে হয়ে আসছে। তাই তো এ পেশায় সহজে আগ্রহ নিয়ে কেউ আর আসতে চায় না। এলেও কিছুদিন বাদে সুযোগ পেলে চলে যায় অন্য পেশায়। ফলে মাঝখানের সময়টুকু তাঁর জন্য হয়ে যায় অলস সময় কাটানোর মতো অর্থহীন। আর শিক্ষক সংকটের এই যুগে তার প্রতিষ্ঠানটি পড়ে মহাবিপাকে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর মাধ্যমে আবার কবে চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষক পাবে তার জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয়। অতি সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিশেষ করে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ থেকে সুপারিশকৃত নবীন শিক্ষকবৃন্দ তাঁদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান সম্পন্ন করেছেন। বাস্তবতা হলো, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাল্লা যতটা ভারী অভিজ্ঞতার পাল্লা ততটাই হালকা। শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যেখানে যোগদান করলেই দক্ষ শিক্ষক হওয়া যায় না। যেহেতু তাবৎ দুনিয়ার ব্যতিক্রমী আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের পরে শিখতে হয় কিভাবে শিক্ষকতা করতে হবে, সেহেতু সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষক বনে যাওয়া অথৈ সমুদ্রে পড়ার নামান্তর। এখানে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবং নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে করে দক্ষ ও আদর্শ শিক্ষকে পরিণত হতে হয়। তাই প্রশিক্ষণ গ্রহণের পূর্বে এমন নবীন শিক্ষকগণের জন্য শুভেচ্ছাসহ আমার নিম্নের পরামর্শসমূহ হতে পারে মোক্ষম দাওয়াই।

সম্মানিত প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, নবীন শিক্ষককে যে বিষয়ে পাঠদান করতে হবে তাঁকে সেই বিষেয়র অথবা যে কোন বিষেয়র একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য সুযোগ তৈরি করে দিন।

প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকগেণর উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার নবীন বা জুনিয়র সহকর্মীকে আপনার অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ঝোলা হতে দু-চারটি গুরুমন্ত্র দিন না, এতে আপনার জ্ঞান বা কদর না কমে বরং বৃদ্ধিই পাবে। আপনি আপনার সহকর্মীর নিকট প্রতিযোগী না হয়ে সহযোগীতে পরিণত হবেন নিঃসন্দেহে। আর জুনিয়র সহকর্মী আপনার শ্রেণিতে অবস্থান করেল আপনার পারফরম্যান্সও উন্নত করেত আপনি আরো সচেষ্ট হবেন বৈকি। এক্ষেত্রে নবীন শিক্ষকের জন্য সতর্কতামূলক পরামর্শ হলো, শ্রেণিতে বসে ভুলেও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের কোন ভুল ধরতে যাবেন না। শ্রেণিতে পিছনের বেঞ্চে বসে আপনি কোন কথাই বলবেন না, শুধু দেখবেন ও শুনবেন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের যে বিষয়গুলো আপনার কাছে ভালো লাগবে সেটা গ্রহণ করে পরবর্তীতে আপনি কাজে লাগাবেন। বাকি সব ঝেড়ে ফেলে দিবেন। যদি এমন হয় যে, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কোন বিষেয়ে একদম ভুল তথ্য বা পুরাতন তথ্য পরিবেশন করেছেন তাহলে সুযোগ বুঝে একান্ত আলাপে বিনয়েরসহিত সঠিক বা হালনাগাদ তথ্য তাঁকে জানিয়ে দিবেন, এতে করে আপনাদের সম্পর্ক সহকর্মীর মাত্রা ছাড়িয়ে বন্ধুতে উন্নীত হবে বলাই বাহুল্য।

হে নবীন শিক্ষক, আপনি যদি দেখেন, রুটিন অনুযায়ী আপনার শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সময় কোন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বা যে কোন সহকর্মী মিলনায়তনে অলস বসে আছেন তাহলে তাঁকে বলুন যে, স্যার, এখানে না বসে যদি আমার ক্লাসে বসে রেস্ট নিতেন তবে আমার খুব উপকার হবে। অর্থাৎ একটু মিষ্টি কথার মাধ্যমে, কৌশলে আপনি আপনার সহকর্মী দ্বারা আপনার পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করিয়ে নিন। এরপর সময়করে তাঁর কাছ থেকে আপনার উন্নয়ন যোগ্য দিক ও সবল দিকগুলো সম্পর্কে জানুন, তাঁর পরামর্শ নিয়ে নিজের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করুন। এই প্রক্রিয়াটি চলমান রাখুন, দেখবেন অল্প দিনের মধ্যেই আপনি দক্ষ শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন।

বিশ্রামরত জ্যেষ্ঠ শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকের প্রতি অনুরোধ, শিক্ষক মিলনায়তনে অলস সময় না কাটিয়ে একজন সহকর্মীর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর শ্রেণি কার্যক্রমটি পর্যবেক্ষণ করুন, তাকে পরামর্শ দিতে পারুন বা না পারুন, আপনার উন্নতি করার অনেক দিক এখনও খুঁজে পাবেন। পাশাপাশি নবীনের কাছ থেকেও পেতে পারেন আধুনিক রসদ। আর এই শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করতে পারেন একটি চেকলিস্ট। যেটি নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারেন। সুযোগ হলে চেকলিস্ট সম্পর্কে লিখবো।

যা হোক, পেশাজীবনে যতই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন না কেন সহকর্মীর দ্বারা শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষেণের এই প্রক্রিয়াটি চলমান রাখলে নবীন-প্রবীণ শিক্ষকবৃন্দের পাশাপাশি লাভবান হবে শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রকারান্তরে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন নবীন শিক্ষক প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠবেন, এই প্রত্যাশায় নবীন-প্রবীণ সকল শিক্ষকের প্রতি রইল নিরন্তর শুভকামনা।

সুনির্মল দেউরী : উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়