সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৫

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

দশ.

চারদিক থেকে আর্মি বাহিনী হোটেলে প্রবেশ করলো। ইরফান ও তুষার ছুটে এসেই তিন বোনকে অক্ষত অবস্থা দেখতে পেয়ে বেশ খুশি হলো। তারপর ইরফান অনন্যাকে প্রশ্ন করলো, ‘ইমতিয়াজ কোথায়?’

অনন্যা কোনো কথা বললো না। সে কাঁদতে কাঁদতে ইরফানকে জড়িয়ে ধরলো।

রুবিনা তাকিয়ে আছে তুষারের দিকে। তুষারও অপলক দৃষ্টিতে রুবিনার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার তার জীবনে এমন অস্পরা মাধবী তেমন একটা দেখেনি। ভাবনার জগতে তলিয়ে গেলো

সে। এ সময় কথা বললো রুবিনা, ‘আপনার নামটা কি জানতে পারি?’

তুষার রুবিনার প্রশ্নে মোহগ্রস্তের মতো উত্তর দিলো, ‘তুষার। তুষার আহমেদ।’

এ সময় কথা বলে উঠলো অনন্যা। রুবিনাকে বললো, ‘ওনাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। একজন সাংবাদিক। আমাদের বাবার অজানা কাহিনী উনিই পত্রিকায় পাতায় প্রকাশ করেছেন, সারাদেশের মানুষকে জানিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা।’

‘ওহ, তাই নাকি। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ মি. তুষার।’

তুষার হাসবে কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। এভাবে এই পরিস্থিতিতে সে তার স্বপ্নে দেখা মানবীর সাথে জীবনের কথা ভাগ করছে, এটা ভাবতেই তার মনে একটা শিহরণ চলে এলো। পরক্ষণেই আবেগ থেকে নিজকে সামলে নিলো সে।

আর্মি কমান্ডো দল পুরো হোটেল তল্লাশি করে হরকত, রাসেলসহ ইমতিয়াজের পুরো বাহিনীকে গ্রেফতার করলো। কিন্তু ইমতিয়াজকে খুঁজে পেলো না।

সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তুষার ও ইরফানের পায়ের কাছে। পাশে বসে আছে অনন্যা ও তার দু বোন রুবিনা ও তাসফিয়া। এ সময় কথা বললো অনন্যা, ‘আপনাকে নিয়ে যাওয়ার পর কী হয়েছিলো?’

--‘ওরা আমাকে গুলি করে সাগরে ফেলে দিলো।’

--‘তাহলে আপনি বাঁচলেন কীভাবে?’

--'সেটাই তো রহস্য। যিনি আমাকে তৈরি করেছেন তিনিই বাঁচিয়েছেন। তবে, এই কাজে সহযোগিতা করেছে আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসার। পাশে ছিলো আমার বন্ধু তুষার আহমেদ।’

‘এটা কীভাবে সম্ভব?--

ইরফান হাসলো।

তুষার বললো, ‘তোমাদেরকে তোমাদের বাবা-মা খুঁজছে। গতকালের পত্রিকায় তোমাদের ছবি ছাপানো হয়েছে। নিখোঁজ সংবাদ।’

--‘তাই নাকি?’

উত্তর দিলো ইমতিয়াজ, ‘হ্যাঁ। মোবাইল নাম্বারও দেওয়া হয়েছিলো। আমি তোমার বাবা নাদের সাহেবের সাথে কথা বলেছি।’

‘ও মাগো।’ তাসফিয়া চিৎকার করে উঠলো। ‘বাবা তো আমাদের সামনে পেলে মেরেই ফেলবে।’

--‘আরে তা-না। তারা তোমাদের নিখোঁজের বিষয়ে কান্নাকাটি করছেন। আজ তিনদিন খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে থানায় থানায় ছুটছেন বলে আমাকে জানালেন।’

'তুমি--মানে আপনি কী বলছেন?’ প্রশ্ন করলো অনন্যা।

‘তুমি--মানে আপনি?’ শুনে হাসলো ইরফান। এবার লজ্জা পেলো অনন্যা। কখন যে ইরফানের মাঝে সে হারিয়ে গেছে, আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে, সে নিজেই জানে না।

অনন্যার দিকে তাকিয়ে তাসফিয়া বললো, ‘আপু তুমি কি বুঝতে পারছো, তুমি ইরফান ভাইয়াকে ...।’

‘চুপ কর তাসফিয়া।’ এবার ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বলুন, বাবাকে কী বলেছেন?’

বলেছি, 'তোমরা সাগরের জলে হারিয়ে গিয়েছো।’ ইরফানের দু’চোখে হাসির ঝিলিক।

‘তাহলে তো তারা মরেই যাবে মনে হচ্ছে।’ অনন্যা বললো।

--'হ্যাঁ, এটা ঠিক। বাবা-মায়ের বুকের ধন তোমরা তিন কন্যা। এভাবে হঠাৎ নিরুদ্দেশ্য হয়েছো বলেই তো তারা পেরেশান। তার ওপর আমি যদি বলি তোমরা সাগরের জলে হারিয়ে গিয়েছো তাহলে তো হার্ট অ্যাটাকই করবে বলে মনে হচ্ছে।’

‘ভাইয়া বলেন না, কী বলেছেন?’ তাসফিয়া উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলো।

--'হ্যাঁ। বলেছি আমি তোমাদেরকে নিয়ে আজ রাতেই মাইক্রোবাসে করে রওনা দেবো। সকালেই তারা তাদের বুকের মণিদেরকে সামনে পাবেন।’

সকাল দশটা। বিশাল একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামলো। একে একে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো তুষার আহমেদ, ইরফান ও তিন কন্যা। বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন তাদের বাবা নাদের সাহেব ও মা মেরি মরিয়ম। তাদেরকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বাবা-মা ও কন্যাদের সে কী কান্না!

ইরফান তাদের কন্যার কান্নার ধ্বনি শেষে আনন্দের ধ্বনি প্রকাশ হতেই অনন্যার বাবাকে বললো, ‘তাহলে ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি। আপনাদের আমানত তো ফেরত পেলেন।’

নাদের সাহেব জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ এই বয়সে উপনীত হয়েছেন। তুষার ও ইরফানকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। এবার সামনে পেয়ে তাদেরকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন, ‘বাবা তুমি যা করছো সেটা তো ধন্যবাদ দেওয়ার মতো নয়। তবে, তার চেয়েও বেশি কিছু হতে পারে। আসো, সকালের নাস্তাটা খাওয়ার পরই কথা হবে।’

তারপর তুষারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি সাংবাদিক তুষার আহমেদ না? ওহ, তোমার কাছেও তো আমি মহাঋণী। তুমিই তো আমাকে সারাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছো। তোমার ঋণ পরিশোধ করার মতো না।’

তুষার আমতা আমতা করতে লাগলো, ‘না। এ আর এমন আর কী? এটা তো আমার পেশা। অন্যরা যা করতে পারে না, আমিই সেটা করার দায়িত্ব নেই, এই আরকি?’

কথাগুলো শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো রুবিনা। তারপর নাদের সাহেবের পাশ কেটে তুষারের কাছে এসে বললো, ‘খুবই খুশি হবো, যদি ইরফান ভাইসহ আপনি আজকের দিনটা আমাদের বাসায় বেড়িয়ে যান।’

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়