শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০২

এ সপ্তাহের লেখক

‘সাহিত্যের মাধ্যমে মাটি ও মানুষের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরতে চাই’

আবদুর রাজ্জাক
‘সাহিত্যের মাধ্যমে মাটি ও মানুষের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরতে চাই’

বাংলা সাহিত্যে নতুন প্রজন্মের পদধ্বনি প্রতিনিয়ত ভেসে আসে। কিন্তু সেই ভিড়ের ভেতর কিছু কণ্ঠস্বর আলাদা হয়ে ওঠে নিজস্ব স্বরে, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে। আবদুর রাজ্জাক তেমনই একজন, যিনি কবিতা ও প্রবন্ধÑদুই ধারাতেই সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনানন্দ দাশের কাব্যভাবনা তঁাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রকৃতি, নদী, নারী, সমাজ, মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না এবং শেকড়ের অনুসন্ধান তঁার লেখার অন্তঃপ্রবাহ। তিনি একই সঙ্গে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যপত্র চন্দ্রদ্বীপ, যেখানে নবীন-প্রবীণ সৃজনশীলতার মিলনে গড়ে উঠছে নতুন সাহিত্যভুবন। তঁার লেখালেখি শুধু রূপ-রসের অনুসন্ধান নয়, বরং মানুষের অন্তর্গত ব্যথা, নীরবতা ও ভালোবাসার শিল্পিত প্রকাশ।

কোন বিষয় আপনাকে লেখক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে?

কবিতা আমার কাছে কেবল শব্দের বিন্যাস নয়, বরং এক অনন্ত জীবনানুভূতির প্রবাহ। বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশের কবিতা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তঁার কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য, নদীর রহস্য, নারীর মায়া, মানব-মানবীর চাওয়া-পাওয়ার অন্তর্লীন ব্যথা, জীব আত্মা ও পরম আত্মার নৈকট্য কিংবা দূরত্ব, সমাজের বৈষম্য ও শেকড়ের অনুসন্ধানÑসব মিলিয়ে এক অবিস্মরণীয় আবেশ থাকে। এই আবেশই আমাকে লেখক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, সাহিত্য কেবল রূপ-রস-গন্ধ নয়; এটি মানুষের সংগ্রাম, আকাঙ্ক্ষা এবং অমোঘ নিয়তির কাব্যিক দলিল।

সম্প্রতি কী কী বিষয় নিয়ে লিখছেন?

যেহেতু প্রবন্ধ সাহিত্য ও কবিতা আমার পছন্দ, তাই সাম্প্রতিক সময়ে আমি মূলত প্রবন্ধ ও কবিতা লিখছি। প্রবন্ধে আমি সাহিত্য-ভাবনা, সমাজ ও মানুষের চেতনার প্রশ্নগুলিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করি। আর কবিতায় আমি খুঁজে ফিরি একান্ত নিঃসঙ্গতার কথা, প্রকৃতির ভেতর লুকানো অনন্ত ভাষার ইঙ্গিত।

আপনার প্রথম বইটি কবে করবেন?

আমার প্রথম বই হবে একটি কাব্যগ্রন্থ। এর সম্ভাব্য নাম ঠিক করেছি ‘পাখিদের অনশন’। নামটি এসেছে মানুষের জীবনে হারানো স্বপ্ন আর অপূর্ণতার প্রতীকী চিত্র থেকে। যেমন পাখিরা উড়ে চলে যায়, তেমনি মানুষের হৃদয়ের ক্ষুধা থেকে যায় চিরকাল।

সর্বশেষ কী বই পড়েছেন?

সর্বশেষ আমি কবি মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ‘মিথ্যুক আবশ্যক’ এবং মাইনুল ইসলাম মানিকের ‘কুরুক্ষেত্রের ঘড়ি’ পড়েছি। শুধু পড়িনিÑআমি সেগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং রিভিউ লিখেছি। আমার কাছে পড়াশোনা কেবল ভোগের জন্য নয়, বরং সাহিত্যকে বিশ্লেষণের আলোয় নতুন করে দেখার একটি উপায়।

লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

প্রবন্ধ সাহিত্যে আমার প্রবল আগ্রহ। ভবিষ্যতে আমি প্রবন্ধকে কেন্দ্র করে সাহিত্যচিন্তাকে আরও বিস্তৃত করতে চাই। একই সঙ্গে কবিতার ভেতর দিয়ে মানুষের নীরব কান্না, প্রকৃতির অনন্ত প্রতিধ্বনি এবং সমাজের অন্তঃসলিলা সত্যগুলো প্রকাশ করার স্বপ্ন দেখি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে সাহিত্যের মাধ্যমে মাটি ও মানুষের গভীর সম্পর্ককে গবেষণার আলোয় নতুনভাবে তুলে ধরা।

অবসর সময়ে কী করেন?

অবসর আমার কাছে নিছক বিশ্রাম নয়, বরং একান্ত আত্মসমীক্ষার সময়। আমি গান শুনি, কবিতা পাঠ করি, প্রকৃতির কাছে চলে যাই। নদী আমার জীবনের প্রিয়তম সঙ্গী। যখনই সময় পাই, নদীর তীরে যাই এবং তার সঙ্গে কথা বলিÑনিঃসঙ্গতার কথা, ভালোবাসার কথা, ভাঙনের কথা। প্রকৃতির নীরব স্রোত আমার সমস্ত অব্যক্ত বেদনা শুষে নেয়। তখন মনে হয়, আমি যেন পৃথিবীর একান্ত নিজস্ব ভাষায় কথা বলছি। সবকথা ফুরিয়ে গেলে তবেই বাড়ি ফিরি।

আপনাকে পাঠক ফোরামের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

আমার পক্ষ থেকে চঁাদপুর কণ্ঠ পরিবারকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে তুলে ধরার জন্য।

লেখকের আসন্ন কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে কিছু কথা : পাখিদের অনশন। আবদুর রাজ্জাকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ পাখিদের অনশন পাঠকের জন্য অপেক্ষারত। নামটির ভেতরেই রয়েছে এক গভীর প্রতীকÑঅপূরণীয় আকাঙ্ক্ষার ক্ষুধা, মানুষের অন্তহীন শূন্যতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানব-হৃদয়ের অনন্ত সংলাপ। এই গ্রন্থে নদীর নীরব স্রোত, প্রকৃতির রঙ, সমাজের অন্তর্লীন বৈষম্য এবং ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গতা মিলেমিশে গড়ে তুলবে নতুন এক কাব্যলোক। পাঠক এর ভেতর দিয়ে খুঁজে পাবেন হারানো স্বপ্নের প্রতিধ্বনি ও অনন্ত জীবনের অমোঘ রূপকল্প।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়