সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৯

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

সাত.

হরকত ইমতিয়াজকে কল দিলো। ‘বস, মেয়েগুলানরে হোটেল সৈকতের একটি রুমে রাখা হয়েছে।’

‘মুখে স্কচটেপ দিয়েছিস তো?’ প্রশ্ন করলো ইমতিয়াজ।

‘হ্যাঁ বস। আমি এতোটা বোকা নই যে, স্কচটেপ ছাড়া তাদেরকে বাঁইন্দা ফালায়া রাইখ্যা দিমু।’

‘গুড। তোর মাথায় গোবর ছাড়া বুদ্ধি আছে। শোন আমি ঠিক রাত দশটায় আসবো। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোমতো পাহারা দিবি। যাতে কেউ টের না পায়। ক’দিন ধান্ধা শেষ করে তারপর সোজা কানাডায় নিয়ে যাবো। তোর ভাগ ঠিক মতো পেয়ে যাবি বুঝলি।’

‘হ, বস। বুঝতাছি। সব ঠিক আছে। আপনে আসেন। আপনের লাইগা বইসা আছি।’

কথা শেষ হতেই রাসেল প্রশ্ন করলো, ‘মিয়া ভাই। আপনে আর আমিই তো কামডা কইরা মায়াগুলারে বেইছা দিতে পারতাম। বসেরে জানান লাগলো ক্যান।’

‘ব্যাটা, বুদ্ধি মাথায় রাখিস্। পায়ে রাখিস্ না। আমরা উঠায়া আনলে ওসি প্রদীপ কি আমাগোরে ছাইড়া দিতো? আমরা চলি ডালে ডালে আর ওসি প্রদীপ চলে পাতায় পাতায়। খবর পাইলে আমাগোরে ঠাঙ্গায়া ওই মায়াগুলারে নিয়া যাইতো। হাতের মুরগি ফসকাইয়া যাইতো। বুঝবার পারস না।’

‘হ, কথাডা ঠিক।’ মাথা দোলালো রাসেল।

‘এবার যা, এহন তো মাত্র ৫টা বাজে। ওগোরে নাশতা পানি দিয়া আয়। রাত দশটায় বস আইবো। এই পর্যন্ত তো ওগোরে দানাপানি দিয়া বাঁচায়া রাখন লাগবো।’ আদেশ দিলো হরকত।

হোটেল সৈকতের একটা বেশ আরামদায়ক কামরা। সেখানে অনন্যা, রুবিনা ও তাসফিয়া বন্দি। সবারই হাতপা বাঁধা। মুখে স্কচটেপ। কেউ কারো সাথে কথাও বলতে পারছে না, নড়াচড়াও করতে পারছে না। শুধু একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর ওদের চোখের পানি টপটপিয়ে পড়ছে।

ওরা ভাবছে, কী ভুলটাই না করেছে এভাবে বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়িয়ে। এখন তাদের উপায় কী হবে?

এ সময়ই দরজা খুলে প্রবেশ করলো রাসেল। তার হাতে খাবার পাত্র। আঙ্গুর, আপেলসহ নানা ফল। সে এসে মিষ্টি হাসি দিয়ে তিন বোনের সামনে খাবারগুলো রাখলো। তারপর আস্তে আস্তে বললো, ‘তোমাগো মুখের স্কচটেপ খুইলা দিতাছি। খাবার খায়া নাও। যদি কোনো অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করো তাহলে আমার পকেটের পিস্তলটা শুধু তিনটা আওয়াজ করবো। আর তোমরা কিছু বলারও সময় পাবা না।’

কথা শুনে তিনবোনই মাথা ডানে বামে করে সায় জানালো।

রাসেল আশ্বস্ত হলো। তারপর তিন বোনের মুখের স্কচটেপ খুলে দিলো। তারপর বললো, ‘খাও, খাও। রাতে বস আসবো। তোমাদের জন্যে সুখবর। বস তোমাদেরকে কানাডায় নিয়া যাইবো। ভালো চাকুরি দিবো। এক মাসের বেতন দিয়া একটা প্ল্যাট কিনা ফেলতে পারবা।’

‘তাই নাকি?’ অনন্যা মুখের বাঁধন খোলা পেয়ে কথা বললো, ‘তাহলে তো ভালোই হলো। তোমরা এভাবে আমাদেরকে উঠিয়ে আনলে কেন? আমরা তো নিজের ইচ্ছেতেই যেতে পারতাম।’

‘এভাবে না আনলে তো তোমাদের সাথে থাকা ডাকাতটা তোমাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে মাইরা সাগরে ফেলে দিতো। বুঝলা না?

‘তাই নাকি?’ ভয়ে শিউরে উঠে তাসফিয়া বললো।

‘হ, কথা ঠিক। তোমাদের সাথে যে লোকটা আছিলো ওর নাম জামশেদ ডাকাত। তারে আমি চিনি। হেরলাইগাই তোমাগোরে এমনে নিয়া আসছি। আর ডাকাতটারে থানার লকারে ঢুকাইছি।’

‘ওরে মাগো, আল্লায় বাঁচাইছে।’ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো রুবিনা।

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়