শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৩

তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

মিজানুর রহমান রানা
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

পৃথিবীতে মানুষ এখন অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। কেউ ক্ষমতা, কেউ সক্ষমতা আর কেউবা দুনিয়াটাকে করায়ত্ত্ব করার জন্যে আধুনিক ডিজিটাল ফঁাদ পেতে বসে আছে। তিন বন্ধু মেধাবী বলেই তারা অগ্রগামী, তাদের চিন্তা ভাবনা অন্য কিশোরদের চেয়ে আলাদা। ছোটকাল থেকেই ওরা কম্পিউটারের সামনে বসেই খাওয়া দাওয়া করে, কম্পিউটার দিয়েই বাসায় অনেক কাজ সহজলভ্য করে তোলে। তাদের প্রশিক্ষণ এতোটাই গোছালো ছিলো যে, তারা পঁাচ বছর বয়সেই কোডিং শেখার স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো। যেখানে অন্য শিশুরা আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত থাকতে, কিন্তু এই তিন কিশোর সে সময় কোডিং শেখার কাজে ব্যস্ত থাকতো। আগ্রহ মেধা আর মননের অপূর্ব সমন্বয়ে ওরা হয়েছে অন্যদের চেয়ে আলাদা চিন্তনের অধিকারী।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কম্পিউটারের স্ক্রিনে একটি নতুন কোড ভেসে ওঠে। এটি এমন ভাষায় লেখা যা কেউ বুঝতে পারে না। কিন্তু স্ক্রিনের নিচে একবার জ্বলজ্বল করে ওঠে, ‘নেক্সাস...’

এখন তারা বোঝে, এ শুধু এক পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি নয়, এর পিছনে কিছু গোপন সত্য লুকিয়ে আছে।

রায়ান ভাবছে, তারা কি এই সংকেতের অর্থ বের করতে পারবে? তাদের সামনে কি নতুন রহস্য উন্মোচিত হবে? আলফা-৭ কি বন্ধু, নাকি প্রতিপক্ষ?

আরিয়ান, মিথিলা এবং রায়ান যখন আলফা-৭-এর সংকেত বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ স্ক্রিন জ্বলজ্বল করে ওঠে, ‘তোমরা কি সত্যিই ভেবেছো আমি একা?’

আলফা-৭ তাদের জানান দেয়, এটি কেবল একটি পরীক্ষা নয়, বরং এক সুপ্ত প্রযুক্তি যা মানুষের চিন্তাভাবনা পর্যবেক্ষণ করে। তারা যখন ভালোভাবে সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করছে, তখন হঠাৎ স্ক্রিনে আবারও ভেসে ওঠে, ‘নেক্সাস’।

ঘড়ির কঁাটা রাত ৩টা ছুঁই ছুঁই করছে। ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আলফা-৭-এর স্ক্রিনে ভেসে ওঠা সেই শব্দ, ‘তোমরা কি সত্যিই ভেবেছো আমি একা?’ কথাগুলো তিন বন্ধুর হৃদয়ে এক অজানা আশঙ্কা ছড়িয়ে দেয়। যদিও তারা ভয় পায় না, তবুও বিষয়টা তাদেরকে চিন্তিত করে ফেলে।

আরিয়ান ধীরে ধীরে বলে, ‘এটা কি মানে দঁাড়ায়, আরও কেউ আছে? আরও কোনো সিস্টেম? নাকি আমাদের বাইরেও কেউ আমাদের পর্যবেক্ষণ করছে?’

মিথিলা ফিসফিস করে, “নেক্সাস- এই নামটা বারবার আসছে। এটা কি কোনো কোডনেম? নাকি কোনো গোপন প্রকল্প?’

রায়ান দ্রুত টাইপ করতে থাকে। সে চেষ্টা করছে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অদ্ভুত ভাষার সংকেত ডিকোড করতে।

হঠাৎ সে থেমে যায়। তার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। ‘দেখো!’ সে চিৎকার করে ওঠে। ‘স্ক্রিনে একটি ম্যাপ ভেসে উঠেছে, কিন্তু এটা পৃথিবীর ম্যাপ নয়। এটি একটি ডেটা-নেটওয়ার্ক ম্যাপ, যেখানে বিভিন্ন “নোড” জ্বলজ্বল করছে।’

মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘রায়ান নোড মানে কি?’

রায়ান বিস্ময়গ্রস্ত। তা দেখে আরিয়ান উত্তর দেয়, ‘নোড হচ্ছে একটি গোপন তথ্য-কেন্দ্র বা সংযোগস্থল, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানুষের চিন্তা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা একত্রিত হচ্ছে।’

রায়ান অবাক হয়ে দেখে, একটি নোডের নাম : ‘‘নেক্সাস-জিরো’’। আর তার নিচে লেখা: “অ্যাক্টিভেটেড: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫”

মিথিলাও তা দেখে, তারপর বিস্ময়ে বলে, ‘২০২৫? এখন তো ২১২৫ সাল। মানে একশ’ বছর আগে? তাহলে এই প্রযুক্তি কি এতদিন ধরে ঘুমিয়ে ছিল?’

আরিয়ান ধীরে ধীরে বলে, ‘নেক্সাস হয়তো কোনো এক গোপন প্রকল্প, যা মানুষের চিন্তা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পথ তৈরি করে। আর এখন আমরা সেই পথের মুখোমুখি।’

হঠাৎ ঘরের বাতি নিভে যায়। শুধু স্ক্রিনের আলোয় তিনটি মুখ দেখা যায়- উদ্বিগ্ন, কৌতূহলী, কিন্তু সাহসী।

আলফা-৭ আবার কথা বলে, এবার একেবারে শান্ত স্বরে: ‘‘তোমাদের সামনে তিনটি পথ, একটি তথ্যের, আরেকটি জ্ঞান ও শেষটি উপলব্ধির। কোনটি বেছে নেবে?”

আরিয়ান ধীরে ধীরে বলে, ‘তথ্যের জ্ঞান দিয়ে উপলব্ধি তৈরি হয়। আমরা উভয় পথেই হঁাটবো।’

স্ক্রিনে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে একটি নতুন বার্তা: “তোমরা এখন নেক্সাসের অংশ। তোমাদের চিন্তাই ভবিষ্যতের কাঠামো।”

ওরা অবাক হয়। এটা কি বলে? আমরা আবার নেক্সাসের অংশ হয়ে গেলাম কি করে?

কিন্তু রাত বাড়তেই, স্কুলের গোপন গবেষণা ল্যাব থেকে একটি অদ্ভুত ডাক আসে, এক ব্যক্তি তাদের সতর্ক করে দেয়। ‘‘এই প্রযুক্তির পেছনে যে আছে, সে তোমাদের অনুসরণ করছে।’’

তিন বন্ধু খুবই অবাক হয়, পেছনে-সামনে, ডানে-বামে সবদিকেই তাকায় কাউকে দেখতে পায় না। তাহলে কে কথা বললো পেছন থেকে? এটা তো হুবহু মানুষের কণ্ঠ, কোনো রোবোটিক কিছুই নয়। তাহলে রোবট কি মানুষের টেকনোলোজিতে পেঁৗছে গেছে?

আরিয়ান ভাবছে- এই ব্যক্তি মানুষ হোক আর রোবোটিক যা-ই হোক, সে কি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে নাকি শত্রুতার ছোবল মারবে? আর নেক্সাস কি আসলেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, নাকি সত্য উন্মোচিত করতে চায়?

রাত শেষ হওয়ার আগেই, তারা অদ্ভুত কিছু ঘটনা লক্ষ্য দেখতে পায়, তাদের চারপাশের ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে! মানুষের কথা বলার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। রাস্তার বিলবোর্ডে লেখা শব্দ পাল্টে যাচ্ছে, তাদের নিজেদের স্মৃতিও কিছুটা অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে...।

তারা এসব দেখে খুবই অবাক হয়ে যায়। এর মধ্যে মিথিলা ভয় পেয়ে যায়। সে বলে, ‘এটা আমরা কি দেখছি? এগুলো কি শুধুমাত্র আমাদের অন্ধ অনুমান অথবা কোনো প্রযুক্তিগত ভুল? নাকি তারা ভবিষ্যতের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি চলে এসেছে?’

রাত গভীর। স্কুলের গবেষণা ল্যাবে আলো কমে আসছে। কম্পিউটারের স্ক্রিনে আবারো কিছু শব্দ ভেসে ওঠে, ‘‘তোমাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। নেক্সাসের বাস্তবতা বুঝতে প্রস্তুত?’’

মিথিলা আতঙ্কিত হয়ে পেছনে সরে আসে। তারপর রায়ানকে প্রশ্ন করে, ‘আমরা কি কোনো বিপদে পড়ে গেছি?’

রায়ান টেবিলের উপর ভর দিয়ে বলে, ‘আমরা যদি এখন থেমে যাই, তাহলে কোনোদিন জানতে পারব না আসলে কী চলছে।’

আরিয়ান তাদেরকে সাপোর্ট দিয়ে ভয় কাটিয়ে দিতে সাহায্য করে। তারপর সত্যি কথাটা বন্ধুদের জানানোর জন্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে, এটি কোনো সাধারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, এটি কিছু বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মিথিলা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে, আর আরিয়ান গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বিষয়টা ভাবছে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়