রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৮

সহজ সুখ

ফাতিহা মহসিন
সহজ সুখ

মুক্ত ও স্বাধীনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আজকাল কসকস, গেজগেজ, পচপচÑএসব আওয়াজ মুখ দিয়ে আপনাআপনি, মনের অজান্তেই বের হয়ে আসে। রোধ করা খুবই দুষ্কর। ‘কয়লা যায় না ধুলে, অভ্যাস যায় না মলে’। একটু আগেই রান্নাঘর থেকে শোবার ঘরের দিকে আসার সময় ঠিক তা–ই হলো। এসব উদ্ভট আওয়াজে কৌতূহলী বিড়ালগুলো বাতাসের গতিতে ঘরে এসে হাজির, আমার আগেই। বিছানাজুড়ে মুক্ত, স্বাধীন, ফারহান আর তাদের প্রকৃত জননী এম্ব্রে। তারা কিছু একটা করবে। জানি না কী, কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে না। জীবন কখনো কখনো এমন সাদামাটা রহস্যের মধ্যেই সুন্দর। সব সময় সব জেনেবুঝে গিলে খেয়ে মাথায় একগাদা আগডুম-বাগডুম দিয়ে জটলা পাকানোর কী দরকার? থাকুক না এমন নিঃশব্দ সরলতার কোমল কিছু মুহূর্ত, যেখানে ভাবনা আমার শিমুলডালে হয়তো লালচে আগুন জ্বালবে না, আকাশি নীলে মনকে ছুঁয়ে নির্ভার সুখে ভাসবে। একটা মসৃণ, শান্ত ধারার মতো; কিছুতেই আটকে থাকবে না। যা-ই হবে, যেমনই হবে, তেমনই সব গ্রহণ করবে গভীর বিশ্লেষণের তত্ত্ব ছাড়াই।

যাহোক, এখনো ভ্যাবলার মতো দঁাড়িয়ে আমি। আচমকাই একরাশ স্নিগ্ধ ভাবনা মনে ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিল। ওদের মায়াভরা, অনুসন্ধিৎসু চোখগুলোয় চোখ পড়তেই যেন ভাবনাগুলোয় একটা ডমিনো ইফেক্টের সৃষ্টি হলো।

চিন্তার ডমিনোসারিতে কিছু সুন্দর ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। ভাবছি, ছোট্ট একটি অর্থহীন আওয়াজ কেমন করে এই ক্ষুদ্র প্রাণের অমূল্য হৃদয়কে হাজারো মিষ্টি অর্থে রাঙিয়ে তুলছে। বাবার আদরের একটু মৃদু স্পর্শ তাদের মনের গহিনে যেন আবার কিছু দুষ্টুমি করার একরাশ শক্তি সঞ্চার করে চলছে। একটা ছোট্ট চড়ুই উড়ে যাচ্ছে বারান্দার পাশ দিয়ে, তাতেই যেন চোখে তাদের স্বপ্নের দীপ্তি খেলে যাচ্ছে। চুলায় ধেঁায়া ওঠা মাছের গন্ধ যেন মধুর অভ্যর্থনা জানাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে। অধীর অপেক্ষার পর একটুখানি আহারেই হৃদয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দ উল্লাসের সুর। এত অল্পেই এতটা তৃপ্তি, প্রশান্তি, ভাবা যায়? এমন ছোট ছোট সাদামাটা মুহূর্তেই যেন তারা খুঁজে পাচ্ছে স্বর্গীয় সুখ। কী       অদ্ভুত সুন্দর না ব্যাপারটা?

অন্যদিকে আমরা মনুষ্যজাতি, অদম্য অশান্তিতে, চিরন্তন তৃষ্ণায় যেন আল্লাহর প্রতিটি নিয়ামত অস্বীকার করে চলেছি একনিষ্ঠভাবে। আমরা কি আদৌ বুঝি যে খাবারের প্লেটে তিন-চার পদের মুখরোচক খাবার থাকা, পছন্দের একটা জামা পরে ঘুরতে যাওয়া, কিছু সময়ের জন্য একটা গল্পের বইয়ে ডুব দেওয়া, সন্ধ্যায় এককাপ গরম ধেঁায়া ওঠা চায়ের উষ্ণতায় মা-বাবার সঙ্গে বসে একটু গল্প করা, জানালা দিয়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে হাতটা ভেজানো, বারান্দায় একচিলতে বাগানে ছোট্ট একটা ফুলের হাসি, রাতে একটা নিশ্চিত, নির্বিঘ্ন ঘুমÑজীবনের এই সহজ, মৌলিক আনন্দগুলোই আমাদের আর আনন্দ দিচ্ছে না। নিরন্তর চাহিদার তাড়নায়, ক্রমবর্ধমান এই না পাওয়ার হাহাকারে নিজেদের একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছি আমরা। লোভ, অহংকার ও খেয়ালিপনায়, উন্মত্ততার অন্তরালে প্রশ্নবিদ্ধ করছি আশরাফুল মাখলুকাতের শ্রেষ্ঠত্ব। তবু ক্লান্ত, অস্থির এই প্রাণ বোঝে না, আকুলভাবে আকাশ ছেঁায়ার তরে সে যতই ধায়, শেষে সে মাটিতেই ফিরে যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়