বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮

ডিজিটাল ভূত

মিজানুর রহমান রানা
ডিজিটাল ভূত

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

নয় :

রাত প্রায় ১১টা বাজে। খাটের ওপর শুয়ে আছে অনিক। সে হিস্টেরিয়াগ্রস্থের মতো হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করছে। যেনো মোবাইল টিপছে। চোখ দুটি ফ্যাকাশে এবং কোটরাগত।

পাশে বসে আছে মামা সুজন, মা সুমি বেগম ও ভাবী রুমা বেগম। অনিকের হাত ছোঁড়াছুড়ি দেখছে সবাই।

সুজন : আমার ভাগ্নেটার কি হলো। কবিরাজ তো তার রোগের মাত্রা আরো দুই ডিগ্রি বাড়িয়ে দিলো মনে হচ্ছে!

সুমি বেগম : হায়রে কবিরাজ। ঝাড়ুর বাড়ি দিতে দিতে আমার পোলাডারে শেষ করে ফালাইছে।

রুমা : আমার পোলামাইয়াডারেও তো পাইলাম না। ব্যাটায় ৫০ হাজার টাকা চায়, যেনো ওর ঘরেই আমার পোলামাইয়াডা আছে। টাকা দিলেই দিয়া দিবো।

সুমি বেগম কান্না করতে করতে বলে : কি অইলো আমার বাবুটার গো।

সুজন : আরে আপা কান্না থামাও। কান্না করে কোনো লাভ আছে। হুদা হুদাই কবিরাজরে দিয়া ভাগ্নেডারে ঝাড়ুর বাড়ি খাওয়াইলা।

এ সময় হঠাৎ অনিক কথা বলে উঠে। চোখ গোল গোল করে বলে উঠে।

অনিক জানালার দিকে তাকিয়ে বলে : মা মা ওই দেখো ভূত, ডিজিটাল ভূত।

এ সময় হঠাৎ করেই কালো কি একটা যেনো জানালা দিয়ে বের হয়ে যায়।

অনিক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে বলে : মা গো ভূতটা চইলে গেছে। ওই যে, জানালা দিয়া পালাইছে।

এ কথা শুনে রুমা বেগম ভয়ে কুঁকড়ে উঠে। সুজন মামা খিলখিলিয়ে হাসে।

সুজন : আপা, এইসব ভূতটুত নিয়া পইড়া থাকবা, নাকি পোলাডারে ডাক্তার দেখাইবা?

রুমা : হ্যাঁ, ঠিকই কইছেন, পোলাডারে ডাক্তার দেখান দরকার।

সুমি বেগম : তাহলে চল, কাল সকালেই সদর হাসপাতালে নিয়া যাই।

রুমা : হ্যাঁ চলেন, কিন্তু আমার পোলামাইয়ার কি অইবো? কান্না শুরু করে রুমা বেগম।

সুজন : আরে ভাবী কাঁদবেন না, কাঁইন্দা কোনো লাভ নাই। ভাগ্নেরে ডাক্তার দেখাইয়া আগামীকালই আপনের পোলামাইয়ারে খুঁজতে বাইর হমু। ঠিক আছে?

রুমা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বলে : হ্যাঁ, ভাইজান। ঠিক আছে। আর কাঁদুম না।

দশ :

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল। ডাক্তার মাসুম সাহেবের চেম্বার। উদ্বিগ্নভাবে চেয়ারে অনিকের মা সুমি বেগম, মামা সুজন ও ভাবী রুমা বেগম বসে আছেন। পাশের একটা বেডে অনিক শুয়ে শুয়ে নিজের হাতকেই মোবাইল হিসেবে টিপছে।

ডাক্তার চেয়ারে বসলেন। তারপর মা সুমি বেগমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন :

ডাক্তার : এই সমস্যা কতদিন থেকে?

সুমি বেগম : গতকাল থেকে ডাক্তার সাহেব।

ডাক্তার : মোবাইল টিপছে কতদিন থেকে?

সুমি বেগম : এটা তো কয়েকবছর থেকেই করছে সে।

ডাক্তার : শিশুদেরকে কেনো মোবাইল টিপতে দেন?

সুমি বেগম : আসলে মোবাইল দিলে তারা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে, আর জ্বালাতন করে না। আমি নিশ্চিন্তে রান্নাবান্না, কাজকর্ম করতে পারি।

ডাক্তার : ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষায় যে রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা গেছে দীর্ঘদিন মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় তার ব্রেনের মোটর নিউরনে সমস্যা হয়েছে।

মামা : না, না ডাক্তার সাহেব ওকে মোটর সাইকেলে আনিনাই। অ্যাম্বুলেন্সে করে এনেছি। ঝাঁকি লাগেনি।

ডাক্তার কঠিন দৃষ্টিতে মামার দিকে তাকালেন। রুমা বেগম হেসে উঠলেন।

ডাক্তার : হাসবেন না। আপনারা শিশুদেরকে নষ্ট করছেন, আর হাসছেন। ছোটবেলা থেকেই একটা স্মার্টফোন ধরিয়ে দিচ্ছেন। তাতে কি হয় জানেন?

সুমি বেগম : জ্বি-না ডাক্তার সাহেব। একটু বুঝিয়ে বলুন।

ডাক্তার : বাচ্চারা মোবাইল দেখলে কি ক্ষতি হয় তাহলে জেনে নিন। প্রথমতঃ স্মার্টফোন থেকে নির্গত হয় একপ্রকার রেডিয়েশন। এই রেডিয়েশন তার মস্তিস্কের ক্ষতি করে। দ্বিতীয়তঃ পড়াশোনার ক্ষতি হয়। ছোটরা বেশিক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে, অনবরত গেম খেললে তার মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তৃতীয়তঃ একাকী হয়ে পড়বে। ফলে শিশুর হাতে সবসময় ফোন দিলে, সে এই ডিভাইসের সঙ্গেই বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলবে। মোবাইলে ভূত দেখতে দেখতে তার মনের ভেতরে একটা ভূতের বসবাস শুরু হয়। পরে সে বাস্তবেও ভূত দেখে আর স্বপ্নেও সেটাই দেখে। চতুর্থতঃ শিশুরা বেশিক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকলে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। আর এই অবসাদ থেকে ..।

অনিক চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় হঠাৎ করে চোখ খুলে সে। তারপর বলতে থাকে-

অনিক : ভূত, ওই যে ডিজিটাল ভূত। ওই যে কবিরাজ ...।

এই কথা বলতে বলতে সে উঠে বসে, তারপর ভোঁ করে দৌড় দেয় দরজা দিয়ে..

কেউ কিছু বুঝার আগেই ভূতের পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে অনিক হাসপাতালের বাইরের রাস্তায় চলে আসে। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়ানো ছিলো কবিরাজ ও জামশেদ। অনিক ছুটতে ছুটতে এসে কবিরাজের সাথে থাক্কা খায়। কবিরাজ তার হাত ধরে ফেলে। তারপর জামশেদকে বলে :

কবিরাজ : জামশেদ ধর ওরে। ওর মা আমাগো ট্যাকা না দিয়া লইয়া আইছে। ওরে বস্তায় ভইরা ট্যাকা উসুল করমু।

জামশেদ অনিককে ধরে ফেলে। এরপর একটা গাড়িতে উঠিয়ে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পরই ছুটতে ছুটতে মামা, মা সুমি বেগম ও ভাবী রূমা বেগম আসে। এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। কিন্তু কেউই বলতে পারে না।

সুমি বেগম হাউমাউ করে কান্না করতে করতে বলে : হায় হায়রে আমার পোলাডায় কই গেলে রে...।

সুজন : আরে আপা, কান্না কইরো না। মানুষজন বেবাক তাকায়া আছে। ভাগ্নে আমার ডিজিটাল ভূতের পাল্লায় পড়ছে। ভূতের আছর ছুইটা গেলে ফিইরা আইবো।

মা কান্না ভুলে কঠিন দৃষ্টিতে মামার দিকে তাকিয়ে থাকে।

রুমা বেগম তাকে সান্ত্বনা দেন। এরপর একটা রিকশায় করে বাসায় চলে যান।

এ সময় একটা টিয়া পাখি উড়ে উড়ে ধীরে ধীরে হাসপাতালের দিকে যায়। চারদিকে একটা চক্কর দেয়। তারপর ছাদে বসে হাসপাতালের রোগীদের আসা-যাওয়ার দৃশ্য দেখতে থাকে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়