বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৬

বুড়ি মায়ের ইফতার

মো. তাইয়্যেব হোসাইন
বুড়ি মায়ের  ইফতার

জুবায়ের এবার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র, সবগুলো রোজা রাখার নিয়ত করেছে এই বছর। গত বছর অসুস্থতার কারণে অনেকগুলো রোজা রাখতে পারেনি, এবং তার আম্মু তাকে অনুরোধ করে বেশ কিছু রোজা ভাঙতে বাধ্য করেছিল। তবে এবারের রমজান জুবায়েরের জন্য এক নতুন অনুভূতি নিয়ে এসেছে। সে ঠিক করেছে, এবারের রমজানে সে সবগুলো রোজা রাখবে, কারণ সে জানে, রোজা রাখার সাওয়াব অসীম।

একদিন, স্কুলের টিফিন টাইমে, জুবায়েরের স্কুলের বড় ভাই মিনহাজ উদ্দিন তাকে একটি হাদিস বই দিয়েছিল। বইটি হাতে নিয়ে, জুবায়ের বাসায় এসে খুশিতে গম্ভীর মন নিয়ে পড়তে শুরু করল। হঠাৎ, একটি হাদিস তার চোখে পড়ল যা তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করল। হাদিসে বলা ছিল, “যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে, এবং ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।”

এটি পড়ে জুবায়ের এক মুহূর্তও দেরি না করে তার মাকে জানাল, "আম্মু, আজ আমি প্ল্যাটফর্মে থাকা বুড়ি মাকে ইফতার করাবো।"

তবে তার মা প্রথমে একেবারে রাজি হননি। মা চিন্তা করছিলেন, "কীভাবে একটি ছোট ছেলে একা প্ল্যাটফর্মে যাবে, বুড়িমার সাথে ইফতার করবে?" কিন্তু জুবায়ের হাল ছেড়ে না দিয়ে, সে তার মা কে হাদিসটি পড়ে শোনালো। "আম্মু, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার সওয়াব বড় হবে।" তার মা শুনে একটু ভাবলেন এবং তারপর তার ছেলে জুবায়েরের খোলামেলা মনোভাব দেখে তিনি রাজি হয়ে গেলেন।

তিনিই বললেন, “তুমি যেহেতু ইচ্ছা করেছো, তবে যেও, আল্লাহর রহমত থাকবে তোমার সঙ্গে।"

ইফতারের আগেই জুবায়ের তার ইফতারি নিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে রওনা দিল। সেখানে পৌঁছে সে দেখতে পেল বুড়িমা এক গ্লাস পানি নিয়ে বসে আছে, এবং তার চোখে অপেক্ষার ভাব ছিল।

বুড়ি মায়ের কাছে যেতে, জুবায়ের তার হাতে থাকা ইফতারি বক্সটি এগিয়ে দিল। বুড়িমা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল এবং একটু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুকরিয়া বলল, "এটা কি তুমি? আমি জানতাম না, তুমি আমাকে এতটা সাহায্য করবে।"

বুড়িমা অনুরোধ করলো তার সাথে যেন ইফতারি করে। জুবায়ের কোনো ভাবনা না করে বুড়ি মায়ের সাথে ইফতার করার জন্য বসে গেল। সে জানতো, এই ছোট্ট কাজের মাধ্যমে সে শুধু একটি ভালো কাজ করছে না, বরং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাওয়াবও অর্জন করছে। বুড়িমা তাকে নিয়ে ইফতারের পূর্বে দোয়া করলেন এবং তারা একসাথে ইফতার করল।

জুবায়ের বুঝল, ভালো কাজ কখনো ছোট হয় না, এবং সে জানত যে, সে এই এক ছোট্ট কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অনেক সওয়াব পেতে যাচ্ছে।

পরে সে বাড়ি ফিরে এসে, মা কে জানালো, "আম্মু, আমি আজ বুড়ি মায়ের সাথে ইফতার করেছি, আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুজনকে সব সময় ভালো রাখুক।" তার মায়ের চোখে সুখের আকাশ ভেসে উঠল, এবং সে জানাল, "আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছেলে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।"

এই ঘটনার পর, জুবায়েরের মধ্যে আরো এক ধরনের পরিবর্তন আসলো। সে প্রতিদিন আরও ভালো কাজ করার চেষ্টা করত, আর মায়ের কাছে বারবার বলত, "আম্মু, আমি যেন আরও ভালোভাবে রোজা রাখি এবং আরও মানুষকে সাহায্য করতে পারি।"

জুবায়েরের এই ছোট্ট কাজটি শুধু তাকে নয়, তার আশেপাশের সবাইকেও প্রেরণা দিল। সে শিখল, জীবনে ভালো কাজ করতে কোনো বড়ো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন নেই, ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়