সোমবার, ০৩ মার্চ, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৬

আগুনের নদী

মিজানুর রহমান রানা
আগুনের নদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

নয়.

অধরার হোয়াটস অ্যাপে একটি বার্তা এলো। বার্তাটি লিখেছে অনন্যা। বার্তাটি খুবই সংক্ষিপ্ত। ‘অধরা, জামশেদের লোকেরা আমাকে ড্রাগস পুশ করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে মেক্সিকোতে। আমাকে বাঁচানোর কোনো দরকার নেই। তবে তোমাকে আমি ইনফরমেশন দিয়ে যাবো সুযোগ মতো। তুমি পুলিশকে বিষয়টা জানাবা।’

বার্তাটি পড়ে অধরা কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে রইলো। মনে মনে প্রশ্ন করলো, ‘কে এই জামশেদ। কত বড় পাওয়ার তার? কানাডা থেকে একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে উত্তর মেক্সিকোতে, যা কেউ বুঝতেই পারছে না?’

হঠাৎ করেই বেডে চোখ পড়তেই দেখলো ইরফান দুটি চোখ মেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে অপলকভাবে। অধরার চোখ আর ইরফানের চোখ এক হলো। ইরফান বুঝতে পারলো অধরা কিছু একটা লুকাচ্ছে।

‘কী হয়েছে? কোনো খারাপ খবর?’ প্রশ্ন করলো ইরফান।

অধরা বার্তাটি ইরফানকে দেখালো। ইরফান বার্তাটি পড়ে অধরাকে বললো, ‘জামশেদের সময় ঘনিয়ে আসছে। খুব দ্রুতই তার পতন হবে। চারদিকে তার শত্রু। সকল মিত্রকে সে শত্রুতে পরিণত করে ফেলেছে। মানুষ যখন পতনের অন্ধকারে পতিত হয় তার আগে সে এমন কিছু কাজ করে যার জন্যে তাকে চিরতরে পস্তাতে হয়।’

‘আসলে তুমি কে? এতোদিন ধরে তোমাকে দেখছি কিন্তু চিনতে পারছি না ইরফান।’ অধরা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলো।

‘সময় মতো সবই জেনে যাবে, তবে আমি তোমাকে জানাবো না। এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’

‘আচ্ছা। তুমি কি এই জামশেদকে ধরার মিশনে এসেছো? বলো আমাকে। তাহলে আমিও তোমার সাথেই যেতে চাই। দেশের জন্যে একটু যুদ্ধে শামিল হতে চাই জীবন বাজি রেখে।’

ইরফান অবাক হলো। তবে সে জানে এই পথে কে সত্য আর কে মিথ্যা তা বোঝা বড়োই কঠিন। কিছু কিছু নারী এতোই ছলনাময়ী যে, তাদের চোখের দিকে হাজার বছর তাকিয়ে থাকলেও তাদের ছলনার কথা টের পাওয়া কঠিন বিষয়। কতো বাঘা বাঘা ঘুঘু নারীদের ছলনায় কাৎ হয়ে জীবন সাঙ্গ করেছে বেঘোরে। তাই তার পেশায় সহজেই কাউকে বিশ্বাস করার নিয়ম নেই। এই পেশায় নিজকেই শুধু বিশ্বাসের খাতায় রাখতে হয়। অন্ধ বিশ্বাসের কোনোই মূল্য নেই।

‘কী ভাবছো, আমাকে বিশ্বাস করা যায় না?’

‘যেতে পারে। তুমি আমার জন্যে জীবনবাজি রেখে সেবা করছো দিনের পর দিন।’

‘এটা তো একজন চিকিৎসকের জন্যে অবশ্য কর্তব্য।’

‘হয়তো তার বাইরেও কিছু থাকতে পারে।’

‘কী সেটা?’

‘জানি না, তবে সময় মতোই বের হয়ে আসবে হয়তো।’

মুক্তোঝরা হাসি হাসলো অধরা। তারপর বললো, ‘অনন্যা মেয়েটাকে দিয়ে আমাদের কোনো কাজ হবে?’

‘হতে পারে। একটা প্ল্যান করতে হবে। সেই প্ল্যান অনুসারে এগিয়ে যেতে হবে।’

‘তোমার পরিচয়টা তাহলে ফাঁস করবে না?’

‘প্রয়োজন নেই। সময়ই বুঝিয়ে দেবে আমার পরিচয়।’

‘ঠিক তাই। আসলেই সত্যি। সময় সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের পরিচয় তুলে ধরে।’

‘শোনো তুমি অনন্যার সাথে যোগাযোগ রাখো। আর আমরাও উত্তর আমেরিকায় যাবার প্রস্তুতি নেই।’

‘ঠিক আছে।’

দশ.

জামশেদের মনে আজ বেশ আনন্দ। দুই সুন্দরী নারী অপেক্ষা করছে তার জন্যে। মোনালিসা ও অনন্যা বেশ সুন্দরী নারী। তাদেরকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করা হয়েছে। আজ সে আর বেশি সময় অফিসে থাকবে না। দ্রুতই তার কটেজে ফিরবে সে। এমন সময় প্রবেশ করলো নিয়াজ।

‘স্যার একজন নারী ওয়েটিং রুমে আছে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়।’ নিয়াজ বললো।

‘বাহ, বাহ। আমার দরবারে শুধুই নারীদের আনাগোনা। বেশ ভালো তো, নিয়ে আসো তাকে। তিনজন পূর্ণ হোক।’

নিয়াজ ফিরে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে এক নারীসহ প্রবেশ করলো। জামশেদ নারীর দিকে তাকালো। তার মনে হলো, এই নারী বেশ শিক্ষিত ও মার্জিত। সে প্রশ্ন করলো, ‘আমার কাছে কী প্রয়োজনে?’

‘বলছি। আমি একজন ডাক্তার। এখানে এসেছিলাম একটা চাকুরির জন্যে। কিন্তু চাকুরিটা হলো না। তাই আপনার কাছে এসেছি। আপনি যদি একটু সাহায্য করেন তাহলে আমার হয়তো একটা চাকুরি হয়ে যাবে।’

‘ভালো কথা। কী নাম আপনার?’

‘অধরা।’

‘ওহ, তাই। অধরা নামের ডাক্তার এবার আমার কাছে ধরা দিতেই এসেছেন?’ হাসলো জামশেদ। ‘আপাতত আমি জানি না, অন্য কোথায়ও আপনার চাকুরি দিতে পারবো কিনা, তবে আমার কটেজে আপনি চাকুরি করতে পারেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে। করবেন? বেতনও ভালো পাবেন যে কোনো কোম্পানির চাইতে।’

‘হ্যাঁ করতে পারি। সেটা তো আরো অনেক ভালো। হাজার হাজার রোগীর সাথে কাজ না করে শুধুই একজনের সাথে কাজ। সেটা তো অনেক ভালো।’ অধরা উত্তর দিলো।

‘ঠিক আছে। নিয়াজ তুমি ওকে আমার কটেজে পৌঁছে দাও।’

জামশেদের মনের আনন্দ আরো বাড়লো। এবার ত্রিপল অ্যাকশন হবে। থ্রি এক্স। বাহ, চমৎকার তো। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি বলে একটা কথা আছে? সেটাই আজ তার ভাগ্যে জুটে গেলো।

ল্যাপটপে একটা নিউজ পোর্টালে হঠাৎ করে তার চোখ পড়লো একটা খবরের উপর। দ্রুত সে ক্লিক করে খবরটা পড়তে শুরু করলো।

‘সাবেক অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি নজীরের অঢেল সম্পদ অর্জন’। দেশের বিভিন্ন জেলায় রিসোর্ট, বাড়ি, গাড়িসহ সবকিছুরই তালিকা দেওয়া হয়েছে পত্রিকাটিতে। এরপর সে ক্রল করে নিচে দেখলো। আপডেট আরেকটি খবর--আদালত তার সম্পত্তি, ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করার নির্দেশের আগেই নজীর আহমেদ ব্যাংকের সব টাকা তুলে সিঙ্গাপুর পালিয়েছে।

সাথে সাথেই হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠালো জামশেদ। ‘নজীর সাহেব। আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার জন্যে আমার সহযোগিতার হাত সব সময়ই অক্ষুণ্ন থাকবে। আপনাকে আমিই তো এসব অর্জনে আমার লোক দিয়ে সহাযোগিতা করেছিলাম। বিনিময়ে আপনি আমাকে সেইভ করেছেন। এখন আপনাকে সেইভ করারও দায়িত্ব আমার। প্রয়োজন হলে বলবেন, আমার লোক পাঠিয়ে দিবো আপনার কাছে। কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’

কিছুক্ষণের মধ্যে জবাব এলো, ‘প্রিয় জামশেদ। ধন্যবাদ আপনাকে। আমি আগামীকাল কানাডা চলে যাবো। সেখানকার বাড়িতেই উঠবো। টেনশন করবেন না, আমি সব ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। আর আমার সম্পদ দেখার জন্যে এডভাইজার নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে। ওরাই মামলা-টামলা দেখভাল করবে।’

উত্তর পেয়ে আনন্দ পেলো জামশেদ। সে জানে এই লোকটি এখন তার হাতের পুতুল হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশে সে যা করে এসেছে এখন তাকে জামশেদের ক্রীড়নক হয়ে চলা ছাড়া আর উপায় নেই।

জামশেদের চারদিকে সুখবর। তার মনে আনন্দ বাড়ছে। আজ রাতেই একটা পার্টি করতে হবে কটেজে। সেখানে তার জন্যে অপেক্ষা করবে তিন সুন্দরী। থ্রি-এক্স।

জীবনটা কতোই না মধুময়। সারাজীবনই সে এ মধু উপভোগ করেই এসেছে। তারা কাজেকর্মে কেউ বাগড়া দিতে আসতে পারেনি। যদি কেউ কেউ মাঝে মধ্যে জামশেদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে তার পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। বাংলাদেশের ওই এমপিও তার সাথে ঝামেলা শুরু করেছিলো। তাকে সে এমনভাবে মেরেছে যে, গোয়েন্দা-পুলিশ পর্যন্ত বলেছে, এই রকম ঠাণ্ডা মাথার খুনি তারা জীবনে কখনও দেখেনি। মানুষকে এতোটা ভয়াবহ, নিষ্ঠুরভাবে কেউ খুন করতে পারে, এটা এর আগে কেউ দেখেনি।

আজ খুব খুশি নিয়েই কটেজে যাবে সে। তারপর সেখানে পার্টি হবে। পার্টিতে নানা পানীয় থাকবে। কোনোটার কমতি হবে না। সেই পানীয় পান করেই তিন নারীর সাথে একসাথে মিলিত হবে সে, নিয়াজকে সবকিছুই নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো কিছু ব্যত্যয় না ঘটে।

এসব ভেবে ভেবে আকাশের রঙ্গিন সীমানায় ভেসে যাচ্ছিল জামশেদ। এমন সময় নিয়াজের কল এলো, ‘বস, সবকিছু রেডি। ওই তিন নারীকে আপনার পাশের কামরায় রাখা হয়েছে। তাদেরকে সুসজ্জিত করার জন্যে তিনজন মেকআপম্যান রাখা হয়েছে। আপনার সামনে যখন হাজির হবে, তখন তাদেরকে ঠিক আকাশের নীলাচলের পরীর মতোই মনে হবে আপনার। সেই সাথে আপনার পানীয় স্পেশালভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যাতে আজকের রাতটা আপনার চিরদিন স্মৃতির নীলপটে অম্লান হয়ে থাকে।’

‘বাহ, তুমি তো দারুণ সমঝদার নিয়াজ। তোমাকে আমি আজকের পরদিনই প্রমোশন দিয়ে আমার আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবো। আর তোমার জন্যে আমি একটা কটেজ বানিয়ে দিবো, যাতে সারাজীবন তুমি সুখে শান্তিতে বাস করতে পারো।’

‘ঠিক আছে বস। আপনি দ্রুত চলে আসুন। আমরা আপনার জন্যেই অপেক্ষায় আছি।’ (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়