শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩

ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের পরিণতি

আকিব শিকদার
ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের পরিণতি

ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের পিতা-মাতা আর মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, দুটোই জগতের জন্য ক্ষতিকর। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম, আমাদের বন্ধু ফয়সাল বাবার সাথে রাইস মিলে চাল ভাঙতো। আমরা যখন ঘুড়ি ওড়াতাম, আমাদের বন্ধু ফয়সাল পাকা উঠানে ধান শুকাতে দিতো। আমরা যখন বনভোজনের বাসে চড়তাম, সে চড়তো গঞ্জের হাটে বস্তাভর্তি চাল বেচতে নেবার ট্রাকে।

আমরা যখন স্কুলে যেতাম, সেও যেতো। আমাদের পাশে মনমরা হয়ে বসে থাকতো, যেন পৃথিবীতে তার জন্মটাই হয়েছে মুখ গোমরা করে রাখার জন্য। আমরা যখন পুকুরে গোসল করতে এসে ডুবসাঁতারে হইহুল্লোড় করতাম, সেও আসতো। তার বাবা তাকে ফিরিয়ে নিতো পেটাতে পেটাতে। তার বাবার ছিল ঘ্যানঘ্যানে স্বভাব। কাজ রেখে খেলতে যাস কেন! স্কুলে কত ছেলে ভালো রেজাল্ট করে, তোর নেই কেন! পিতার ঘ্যান ঘ্যানানোর জ্বালায় তার মন হয়ে উঠছিল অতিষ্ঠ। তাই কখনো কখনো ক্ষেপে গিয়ে বাবার অবাধ্য হয়ে পড়তো সে। অবাধ্যতার চূড়ান্ততায় একদিন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল শহরে, পোশাক কারখানায়। সারা মাস খেটে-খুটে বেতন যা পেতো, থাকা খাওয়া বাদে সব পাঠাতো বাবার ঠিকানায়। তবু তার বাবার ঘ্যানঘ্যানানি কমেনি! একদিন বাবার সাথে তার হাতাহাতি হয়ে যায়। বাবার ঠোঁটের নির‌্যাতন মেনে নিতে পারছিল না হয়তো। বাবাকে রাগের মাথায় মেরে বসে দুটো ঘুসি, সাথে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ঘরের বেড়ায়। তার বাবা টাল সামলে চোখে টলমল জল নিয়ে বলেছিলÑ‘তোর মরণ যেন হয় রাস্তার শিয়াল কুকুরের মতো।’

পথের কুকুরের মতোই মরণ হয়েছিল ফয়সালের। মোটরসাইকেলে চড়ে লং রোড পাড়ি দেবার সময় একটা ট্রাক তাকে রাস্তাতে থেতলে দিয়ে যায়। ট্রাকের চাকা গিয়েছিল তার মাথার উপর দিয়ে, আর মগজটা রাস্তার পিচের সাথে মিশে চিকচিক করছিল। আমাদের বন্ধু ফয়সালের লাশ পড়েছিল রাস্তাতে শিয়াল কুকুরের মরদেহর মতোই। সেদিনের পর থেকে তার বাবাকে আর কখনো ঘ্যানঘ্যান করতে দেখিনি। একদম নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল লোকটা। শুধু আমাদেরকে দেখলে কিছু একটা বলতে চেয়েও থেমে গিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। আর আমরা মনে মনে বলতামÑ‘ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের পিতা-মাতা আর মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, দুটোই জগতের জন্য ক্ষতিকর।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়