বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৮

বাংলায় ডিজিটাল কনটেন্টের গুরুত্ব

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার
বাংলায় ডিজিটাল কনটেন্টের গুরুত্ব

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেসকো। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যে ভাষার জন্য বাঙালি জাতি আজ গোটা বিশ্বে এক বিশেষ মর্যাদায় আসীন, উচ্চশিক্ষার সব ক্ষেত্রে সেই বাংলা ভাষার প্রয়োগ খুব একটা নেই। দেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

অথচ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ তাদের নিজস্ব ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছেছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলায় প্রকাশিত কিছু বইয়ের সরবরাহ লক্ষ করা যায়। এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে এসেছিল দেশের স্বাধীনতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং গণতান্ত্রিক মুক্তি। হয়েছে বৈষম্যবিরোধী সফল আন্দোলন।

কিন্তু বাংলা ভাষা ব্যবহারে দেখা যাচ্ছে বিশাল বৈষম্য। ভাষাবিদদের মতে, ভাষাকে সম্মানের সঙ্গে টিকিয়ে রাখতে তা যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সর্বজনীন করার কোনো বিকল্প নেই। আর সে জন্য ভাষা ব্যবহারে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষায়। ব্যাপক হারে তৈরি করতে হবে বাংলায় ডিজিটাল কনটেন্ট, টুলস ও অ্যাপস।

উন্নত দেশগুলোতে কাজকর্ম, গবেষণা, পড়াশোনাÑসবই হয় নিজের ভাষায়। আমাদের দেশে অন্যান্য ক্ষেত্রে আর যা-ই হোক, শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলার ব্যবহার সব সময়ই অবহেলিত হয়ে আসছে। এর মূল কারণ, অন্যান্য ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার টুলস, অ্যাপস, ডিজিটাল কনটেন্টÑসব কিছুই ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ভিত্তিক। এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। আধুনিক সময়ের অতি প্রয়োজনীয় কিছু টুলস; যেমনÑস্বয়ংক্রিয় চ্যাটবট, ভার্চুয়াল সহকারী (গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট), ওসিআর (স্বয়ংক্রিয় পাঠক), স্বয়ংক্রিয় অনুবাদক, কথা থেকে লেখা (স্পিচ টু টেক্সট), লেখা থেকে কথা (টেক্সট টু স্পিচ), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার জন্য ভালো মানের তৈরি হয়নি।

ফলে আমাদের নিজেদের কাছেই এই ভাষার ব্যবহার এবং গুরুত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর কয়েক শ আইটি ও সিএসই গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন এবং তাঁরা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন। তাঁদের সহায়তায় বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বাংলায় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা অসাধ্য নয়। এরই মধ্যে মুক্তপাঠ, কিশোর বাতায়ন ও এটুআইয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগকে আরো জোরালো করতে দেশের নতুন গ্র্যাজুয়েট, প্রযুক্তিবিদ, সফটওয়্যার কম্পানি এবং আইসিটি ডিভিশনের সমন্বয় বাড়ানো দরকার। আরো প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাদলগুলোর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি এবং রাষ্ট্রের সমন্বয় করা। তাহলে হয়তো আমাদের অর্জিত এই ভাষাকে সময় ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্ষা করা যাবে।

কোনো কনটেন্ট যদি ডিজিটাল উপাত্ত আকারে বিরাজ করে, প্রকাশিত হয় বা প্রেরিত-গৃহীত হয়, তাহলে সেসব কনটেন্টকেই ডিজিটাল কনটেন্ট বলে। ডিজিটাল কনটেন্ট বা শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমগুলো হলো অডিও উপকরণ, পিকচার/ইমেজ, ওয়েবভিত্তিক উপকরণ, মাল্টিমিডিয়া এনিমেশন ইত্যাদি। এর মধ্যে ভিডিও উপকরণ ডিজিটাল কনটেন্টের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট, টিভি, সিডি ও ডিভিডি, মোবাইল, ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা আমাদের পাঠসংশ্লিষ্ট ভিডিও ক্লিপ পেতে পারি বা সংগ্রহ করতে পারি। এ ছাড়া বিভিন্ন লেকচারভিত্তিক ও টিউটরিয়ালভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও সংগ্রহ করা যায়। ক্লাসরুমে জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট (ভিডিও) খুবই কার্যকর। অনেক সময় একটি সাধারণ ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে কোনো বিষয়, ঘটনা, রোল প্লে ইত্যাদি ভিডিও করে ডিজিটাল কনটেন্টে ব্যবহার করা যায়। একইভাবে ডিজিটাল কনটেন্টে অডিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। প্রকৃতি, প্রাণী, বিশেষ ঘটনা, সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অডিও ক্লিপ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ডিজিটাল কনটেন্টে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া রেকর্ডার দিয়ে গল্প, কবিতা, ছড়া, সুমিষ্ট কণ্ঠ ও সুন্দর বাচনভঙ্গি রেকর্ড করে সাহিত্যের বিভিন্ন ক্লাসে ব্যবহার করা যায়। উচ্চারণ ও উপস্থাপন ক্লাসে অডিওর কোনো বিকল্প নেই। আবৃত্তি-গান কিংবা কোনো কিছুর ধারা বর্ণনার ক্ষেত্রে মুঠোফোনের অডিও রেকর্ডারই যথেষ্ট।

তাই প্রাথমিক স্তরে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং মাধ্যমিক স্তরে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর মাধ্যমে স্কুল শিক্ষকদের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ জোরদার করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস করতে শিক্ষার্থীরাও খুবই আগ্রহী। এতে পাঠদান সহজ, সাবলীল, আকর্ষণীয় ও আনন্দময় হয়। তাই দূরদর্শী এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষের বাইরে গিয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে এমন সব বাংলা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে, যেখানে থাকবে আকর্ষণীয় অডিও, ভিডিও এবং বহুমাত্রিক রঙিন এনিমেশন। সন্নিবেশিত থাকবে শিশু ও বয়স অনুযায়ী ইন্টারফেস, টুলস, অ্যাপস এবং মিষ্টি কণ্ঠ ও শুদ্ধ উচ্চারণের ধারাবাহিকতা।

লেখক : অধ্যাপক, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়