শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪

কে ও

সুমাইয়া শিমু
কে ও

শীতের প্রায় মধ্যরাত। পুরো শহর শীতের কারণে ঘরের ভেতর লেপ কম্বলের ওম রেখে ঘুমাচ্ছে। শহরের শেষ প্রান্তে যে বিশাল বাড়িটা দাঁড়িয়ে সেটাও এই মুহূর্তে গভীর ঘুমে। ওটার সামনে দিয়ে যেই রাস্তা গেছে সেটাও বাকি শহরের রাস্তাগুলোর মত শুনশান। শহর থেকে যে রাস্তাটা বেরিয়ে অন্য শহরের দিকে এগিয়ে গেছে, সেটা গেছে এই বাড়ির সামনে দিয়ে, কিন্তু কিছুটা এগিয়ে গেলেই পরে ঘন আর বড় জঙ্গল। এই গণবন শেষ হলে শুরু হয় পাহাড়ের রাস্তা যার এদিক খাড়া পাথুরে দেয়াল আরেক দিক দিয়ে গভীর খাদ। পাশের শহরে যাওয়ার আরো একটা রাস্তা আছে যেটা খুব চওড়া আর সুরক্ষিত তাই বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা সবাই বর্জন করে। এই কারণেই বনের মাঝে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ।

হঠাৎ দেখা গেল সে অন্ধকার ঘুমন্ত বাড়ির মেনগেট খুলে একটা ঘোড়ার গাড়ি বেরিয়ে এলো কিন্তু গাড়ির কোচোয়ানকে দেখা গেল না। আর অদ্ভুত ব্যাপার বিনা কোচায়ানেই গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকলো জঙ্গলের দিকে। কিন্তু সেই শুনশান রাতে কেউ ছিল না। রাস্তায় যে বাধা দিতে পারে সেই কোচায়ান বিহীন গাড়িকে সেই ভয়ংকর রাস্তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার থেকে। আর সেই বন্ধ গাড়ির ভেতর সেই মুহূর্তে একজন অসহায় মেয়ে বসে যার হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। এই মুহূর্তে সে এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা দিয়ে সে ঘোড়ার গাড়িটা খুব জোরে দৌড়াচ্ছে, আর ভেতরের মুখ আর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আধমরা হয়ে থাকা মেয়েটি অনবরত ধাক্কা ঠোকা খাচ্ছে কখনো গাড়ির বন্ধ জানানো হয় কখনো গাড়ির সিটে। যখন ওকে ঠেলে গাড়িতে তোলা হয়েছিল তখন ওকে সিটের উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু গাড়ির স্পিড আর ঝাকুনি ওর বাঁধা শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করলো না। আরো অসহায় ভাবে ঘরিয়ে পড়ে গেল গাড়ির ভেতর। বেখাপ্পাভাবে গড়িয়ে পড়াতে ওর মাথাটা খুব জোর লাগলো। মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠতে চাইলেও আওয়াজ বেরোলো না। ওদিকে ঘোড়া দুটো তখন পাগলের মত ছুটে চলেছে। যেন পেছন থেকে কোন অপ্রাকৃতিক কিছু তারা করছে ওদের, যাদের থেকে ওরা পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছে। এই দৌড়াদৌড়ির মাঝে কখন যে বন পেরিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি এসে পড়েছে সেটা খেয়াল করার মত কেউ রইল না। আর একটু পরে সেই তারা খাওয়া ঘোড়ার গাড়ি পথের ফাঁকে ঢাল সামলাতে না পেরে পাহাড়ি রাস্তার পাশের খাদে হারিয়ে গেল। শুধু মাঝ রাতের প্রকৃতির সাক্ষী রইল এক গাড়ির দুর্ঘটনার।

আশ্চর্যর বিষয় কি জানো? দিনের বেলা কোন গাড়ি বা ওই মেয়েটাকে বা কোন চিহ্ন কিছুই ছিল না ওখানে। এখানে যে কোন দুর্ঘটনা করেছে তার চিহ্নটুকুও ছিল না।

মাহি তা দেখে রীতিমতো ভয় পেতে লাগলো। ভয়ে তার শরীর যেন অবশ্যই আসলো। মাহি চিৎকার দিয়ে জেগে উঠলো, উঠে দেখে আশেপাশে কেউ নেই, কেউ না। রাত যখন ৩ঃ৪৫ মিনিট। মাহির পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। মাহির হাত পা অনবরত কাঁপছে। মাহির মুখ দিয়ে যেন কোন কথা বের হচ্ছে না। চিৎকার করে মাকে ডাকছে, কিন্তু মাহির কণ্ঠস্বর যেন সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে না। ভয়ে ভয়ে রাত কেটে সকাল হল। মাহি ও স্বাভাবিক হলো। আজ মাহি ভার্সিটিতে যাবে না। রাতের ঘটনায় মাহির মনটা আজ বেশ খারাপ। সারাদিন এদিক ওদিক করে মনটাকে একটুও ভালো করতে পারলো না। এক তৃপ্তি অবকাশ নিয়ে মাহি নিজেকে সামনে নিল। মাহি ভাবলো সেটা তার মনের ভুল সেটা শুধুই একটা দুর্ঘটনা শুধুই একটা স্বপ্ন আর কিছুই না। মাহি এই দুর্ঘটনা কাউকে জানালো না কাউকে না। একটা স্বপ্নের কথা কাউকে বলল না। আজ আরিয়ানের বার্থডে। আরিয়ান মাহির ভার্সিটি বন্ধু। যদিও বন্ধু তবে মাহি আরিয়ানকে খুব ভালোবাসে। একতরফা ভালোবাসা বলা চলে। তাই আজ দিনটি মাহি কোনোভাবে মিস করতে চায় না। মাহি নিজের মনের কথা আজ আরিয়ানকে বলতে চায়। তাই যেকোনো মূল্যে হলেও আজ মাহি আরিয়ানের জন্মদিনে যাবে। তাই বিকেলবেলা রেডি হয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে মাহি আরিয়ানের পাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হল। এই আসরের খানিকটা পর মাগরিবের একটু আগে। মাহির বাড়ি থেকে আরিয়ানের বাড়ি ৩০ কিলো দূরত্ব হবে। সন্ধ্যার পর পরেই পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। মাহি একাই যাচ্ছে। মাহির আজকে এইভেবে ভালো লাগছে যে , আজ তার ভালোবাসার কথা আরিয়ানকে জানাবে। গাড়ি চালাচ্ছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে মাহির। খানিকটা এগোতে দেখতে পেল একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে লিফটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে ফুসফুস করে বেরিয়ে যাওয়া গাড়িগুলো দাঁড়াচ্ছে না। মাহি ভাবছে পেরিয়ে চলে যাবে। কি দরকার অচেনা অচেনা মেয়েকে লিফট দেওয়ার। বাম হাত ঘুরিয়ে ঘড়িটা দেখল সবে সন্ধ্যে সন্ধ্যে হয়ে আসছে। একটু পরে আরিয়ানের বাড়িতে পার্টি শুরু হবে। আর মাহি কোনো ভাবি সে পার্টিতে দেরিতে পৌঁছাতে চায় না। কিন্তু তবুও মেয়েটার কাছাকাছি পৌঁছাতে গাড়ির স্পিড কমালো। মেয়েটাও এগিয়ে এসে বলল - আমাকে একটু লিফট দেবেন প্লিজ?

জানালা ফাঁক করে মাহি বললো কোথায় যাবেন?

একটু এগিয়ে যাব। এই ব্রিজটা পার হলেই নেমে যাবো।

-বেশ উঠে আসুন। আমি তো এখান দিয়েই যাচ্ছি। আপনার বাড়ির সামনে আপনাকে নামিয়ে দিতে পারব। গাড়ির দরজা খুলে দিল মাহি। মেয়েটা উঠে ওর পাশেই বসলো। মেয়েটা উঠে বসতেই মাহি ওকে ভালো করে দেখলো। মেয়েটির পরনে গায় লাল রঙের স্লীভলেশ পার্টিওয়্যার সাথে ম্যাচিং গহনা আর হিল জুতো। মনে হচ্ছে কোন পার্টিতে যাচ্ছে। মাথায় কালো রঙের এক বিশাল হ্যাড যার কারণে মুখের কিছুটা অংশ ঢাকা পড়ে গেছে। গাড়ির দরজা বন্ধ করতেই মেয়েটি অবশ্য হ্যাড খুলে কোলে রাখলো। যার ফলে ওর মুখটা ভালো করে দেখতে পেল মাহি।

এত সুন্দরী আকর্ষণীয় চেহারা এর আগে মাহি কোনদিন দেখে নাই। মেয়ে হয়েও ভীষণভাবে আকর্ষিত হলো মেয়েটির দিকে। সব থেকে আকর্ষিত করছে মেয়েটির মদিরাক্ষী দুটো। এত নেশাতুর ওর চোখ দুটি যে ওকেই নেশাগ্রস্ত করে ফেলছে। মেয়েটি বলল- কি হল চলো!

অ্যাঁ...হ্যাঁ বলেই মাহি গাড়ি চালিয়ে দিলো। গাড়িটা যত এগিয়ে যাচ্ছিল ততই যেন মাহি মেয়েটার দিকে আরো আকর্ষিত হচ্ছিল অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে। মনে হচ্ছিল যেন এই ব্রিজ শেষ না হয়। এই অচেনা-অজানা মেয়েটার প্রতি মাহির মায়া যেন চিরস্থায়ী হয়ে উঠেছিল কিছু সময়ের জন্য। এরকম কেন মনে হচ্ছে তা অবশ্য মাহি বুঝতে পারল না। হঠাৎ ওর মনে হল ওর বা হাতের উপর মেয়েটির হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ও ছোঁয়া মাহির শরীরে অদ্ভুত শিরশির অনুভূতি এনে দিল। এরকম অদ্ভুত অনুভূতি আগে কখনো হয়নি মাহির। একটা মেয়ের ছোঁয়া যে এত মায়াবী এত স্নিগ্ধতা হতে পারে তা মাহি আগে অনুভব করেনি। ওদিকে মেয়েটির হাত খেলা করতে করতে মাহির কাঁধে চলে আসে। মাহি বুঝতেই পারেনি কখন যে ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছে। মেয়েটির হাত বোলাতে বোলাতে মেয়েটির মুখ মাহির কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল- কি খুব আকর্ষণীয় আমি? আমার চোখ নেশাযুক্ত? এগুলো বলতে বলতে মাহির যে জ্ঞান ফিরলো। মাহি দেখতে পেলো গতরাতে স্বপ্নে সেই রাস্তা তার সামনে দিয়ে সেই ঘোড়ার গাড়ি ছুটছে। আর তার পিছনেই মাহির গাড়ি ছুটছে। মাহি এবার ভালো করে মেয়েটির দিকে তাকালো। মাহি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল। এ তো কোন স্বাভাবিক মেয়ে নয়। এতো শয়তান না না না ভ্যাম্পায়ারের মতো লাগছে। না না কেমন যেন লাগছে। মাহির শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যেতে লাগল। মেয়েটির কশের দু'পাশে দুটো দাঁত দেখা যাচ্ছে। মাহি আতঙ্কে বলেই ফেলল--- কে... কে... কে আপনি...?

মেয়েটি মাহির দিকে তাকিয়ে খুব অদ্ভুতভাবে হাসলো। তারপর খুব ফেসফেস গলায় বলল কি আমি খুব মায়াবী আকর্ষণীয় না? কিন্তু আমার থেকে তুমি বেশি আকর্ষণীয় আমার কাছে। আমি তোমাকে খুব কাছের করে পেতে চাই। বলার সাথে সাথে মাহির হাত চেপে ধরে অন্য হাতে ওর গলাটা চেপে ধরে ওর মাথাটা ওর কাছে টেনে এনে ঘাড় থেকে শরীরের সব রক্ত চুষে নেয় মেয়েটি। মাহি চিৎকার দেওয়ার আগে সব শেষ হয়ে যায়। তার সাথে সাথে সেই ঘোড়ার গাড়িটি এবং মাহির গাড়িটিও ওই খাদেই পড়ে যায়। কিন্তু মাহির খোঁজ কেউ পেল না। আর না ওর গাড়ির। আরে না ওই মেয়েটির। মাহির সাথে কি ঘটেছিল কেউ জানে না কেউ না। কে ছিল এই মেয়েটি? কে ও?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়