প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬
পথে যেতে যেতে
টানা তিনদিনের ছুটি। ট্রেনের ঘ-বগিতে করে কক্সবাজার যাচ্ছি। রাতেই আমাদের প্রায় চল্লিশজনের একটা টিম রওনা দিয়েছে। উদ্দেশ্য তাদের সাথে একত্রিত হবো। সবাই লেখালেখির সাথে যুক্ত। ট্রেনে আমার সামনের সিটে এক অপরিচিত দম্পতি যাচ্ছেন। সাথে তাদের পাঁচ বছরের ছেলে সিয়াম আর তিন কি চার বছরের মেয়ে আদ্রিতা। আদ্রিতা খুবই লাফালাফি আর দুষ্টমি করছিল চলন্ত ট্রেনে। জিজ্ঞেস করলাম, কী নাম তোমারা তুমিতো অনেক দুষ্টমি পারো। আর কী কী পারো তুমি? গল্প?
আদ্রিতার তখন লম্বায় মরি মরি অবস্থা। সে মায়ের পাশে গিয়ে চুপ করে আমার দিকে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে। আদ্রিতার স্নেহময়ী জননী বললেন, আংকেলকে তোমার নাম বলো। আর বলো তুমি কী কী করতে পারো। সিয়াম বসে বসে আমাদের কথা শুনছিল। আদ্রিতা তার নাম বললো, আর বললো, আমি গল্পও জানি। বললাম, তাই নাকি? আমাকে একটা গল্প শোনাবে? তখনই সিয়াম লাফ দিয়ে ওঠে, আমিও পারি। আমিও গল্প বলবো। পরিচিত হলাম সিয়ামের সঙ্গে। শুরু হলো চলন্ত ট্রেনে চার-পাঁচ বছরের দুই শিশুর ভাঙা আর অপরিপূর্ণ বচনে গল্প বলা ও শোনা। তাদের গল্প শুনতে শুনতে ভাবনায় ডুব দিই। স্বল্প কয়েক কেজির দুটো মাংসপিণ্ড। অথচ তার ভিতরে লুকিয়ে আছে জগতের সীমাহীন বৈচিত্র্য। কী মধুর কলকল মুক্তো ঝরা হাসি। আধো-আধো কথা। এ যেন সপ্ত আকাশের আরশে আজিম থেকে ডেনে ভেসে আসে। তাদের সুকোমল স্পর্শ আর মায়াময় চাহনি নিমিষেই হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। সে জন্যই হয়তো হেনরি ওয়ার্ড বলেছিলেন, ‘শিশুরা হচ্ছে এমন কিছু হাত, যার দ্বারা আমরা স্বর্গ স্পর্শ করতে পারি।’
এসব ভাবতে ভাবতেই অনুভবের মরা নদীতে ভাবনার জোয়ার আসে। বুঝতে পারি, মানুষ কেন সংসারি হয়, কেন জগতের সমস্ত কিছু পায়ে দলে সন্তানের কাছে ছুটে যায়। ওদের গল্প শুনতে শুনতে গন্তব্যে প্রায় পৌঁছে গিয়েছি। ওদের বাবা-মা শুধু অবাক হয়ে দেখলেন, অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে ঘোট দুটি শিশু কীভাবে আনন্দে সময় পার করে দিয়েছে। অবশেষে দুজনকে স্নেহসিক্ত বিদায় নিয়ে গন্তব্যে রওনা হলাম।