বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সৌদি প্রবাসীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস
  •   বরিশালে কৃষক দলের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মসূচি পণ্ড
  •   শ্রীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
  •   গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
  •   চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তা

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫

আওকিগাহারা: আত্মহত্যার জঙ্গল

প্রতিবেদক : মো: জাকির হোসেন
আওকিগাহারা: আত্মহত্যার জঙ্গল
ছবি : প্রতীকী

বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কতই না যুদ্ধ করতে হয়। সুখের সন্ধানে কত ত্যাগ ও সংগ্রাম। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্যি, কিছু মানুষ মানসিক দুর্বলতার কারণে জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করেন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন, যা প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি ঘটনা ঘটার সমান। একদিকে যখন বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যা কমানোর চেষ্টা চলছে, ঠিক তখনই জাপানে এমন একটি জঙ্গল রয়েছে, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ১০০ মানুষ আত্মহত্যা করে।

এই জঙ্গলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা পর্যটনের জন্য নয়, বরং এটি কুখ্যাত ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ নামে পরিচিত। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, জাপানের টোকিও শহর থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে, মাউন্ট ফুজির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আওকিগাহারা জঙ্গলটি প্রতি বছর গড়ে ১০০ মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গলটি এতই ঘন যে একে ‘গাছের সমুদ্র’ও বলা হয়। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মৃত মানুষের কঙ্কাল, হাড়গোড়।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজে, তবে আওকিগাহারা জঙ্গলের অবস্থান দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি, এবং মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক, অর্থনৈতিক সমস্যা এর অন্যতম কারণ।

জাপানের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিতে আত্মহত্যা একটি পুরনো প্রথা ছিল। সামন্ত যুগে, সামুরাইরা আত্মহত্যাকে মুক্তির একটি মাধ্যম হিসেবে দেখতেন। ‘সেপুকু’ নামক আত্মহত্যার মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের কাছে যেতেন বলে মনে করতেন। আধুনিক যুগে, অনেক জাপানি এখনও আত্মহত্যাকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখে থাকেন।

১৯৬০ সালে, জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতো ‘কুরোই জুকাই’ নামে একটি ট্র্যাজিক উপন্যাস প্রকাশ করেন, যেখানে এক ব্যর্থ প্রেমিকা জীবনের ইতি টেনে আওকিগাহারা জঙ্গলে আত্মহত্যা করেন। এই উপন্যাসটি জাপানি সংস্কৃতিতে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছিল, বিশেষ করে যারা এই জঙ্গলে আত্মহত্যা করেন, তাদের পরিত্যক্ত সামগ্রীর মধ্যে সেই বইটি অনেকবার পাওয়া গেছে।

এছাড়া, ১৯৭০ সালে জাপান সরকার আত্মহত্যা কমানোর জন্য একাধিক উদ্যোগ নেয়। পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক এবং সাংবাদিকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়, যাদের কাজ ছিল মৃতদেহ খুঁজে বের করা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে মানুষদের সচেতন করা। সেইসঙ্গে, বনে ভ্রমণকারীদের জন্য সিকিউরিটি ক্যামেরা, সাইনবোর্ড এবং সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।

আশেপাশের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন যে, আওকিগাহারা জঙ্গলে রহস্যময় একটি জাদুকরী শক্তি রয়েছে, যা মানুষদের আত্মহত্যার দিকে টেনে নেয়। তাদের মতে, এই জঙ্গল এত গভীর যে, এখানে হারিয়ে গেলে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব, কারণ এখানে প্রযুক্তি যেমন কম্পাস বা মোবাইল ফোনও কাজ করে না।

এই জঙ্গলটি কেবল একটি ভূতুড়ে স্থান নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত উদাহরণ, যেখানে সামাজিক, মানসিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে মানুষ জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মহত্যার এই প্রবণতা কমানোর জন্য সরকার এবং সমাজকর্মীরা নিজেদের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়