সোমবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৫

সোনালি শৈশবের স্মৃতিচারণ

এসএম বাশার
সোনালি শৈশবের স্মৃতিচারণ

খুবই মনে পড়ে শৈশবের সোনালি দিনগুলোর কথা। এখনকার সময়ের মতো তখনকার জীবনমান এতো আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর ছিলো না। তাই এখনকার মতো মোবাইল-কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের শৈশবের মূল্যবান সময় কেড়ে নিতে পারেনি।

কিশোর বয়সের কিছু সুন্দর স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। খুব মনে আছে ভরা শীতের প্রভাতে কাঁপা শরীরে শিমুল ফুল কুড়ানো সে ছেলেবেলা। মক্তবে যাওয়ার পূর্বেই প্রতিদিন শিমুলতলে দেখা যেতো একঝাঁক কিশোরের আনাগোনা। সদ্য ঝরা শিমুল ফুল কুড়ায়ে সবার মনে প্রকাশ পেতো কী যে সীমাহীন উচ্ছ্বাস!

শিমুল ফুল বাড়িতে রেখে হাতমুখ ধুয়ে রওনা হতাম মক্তবে, আরবি শিখতে। জোরালো শব্দ করে একই সুরে কেরাত পড়তাম সবাই মিলে। মক্তব ছুটি হলে কে আগে বাড়ি ফিরবে তা নিয়েও চলতো দৌড় প্রতিযোগিতা। বাড়িতে ফিরে মায়ের হাতে তৈরি মজাদার সব নাস্তা খেতে কী যে মজা হতো।

কুড়িয়ে আনা শিমুল ফুল দিয়ে বাড়ির উঠোনে পাটি সাজিয়ে দোকান বসাতাম, আর ছোটরা হরেক রকম গাছের পাতা কুড়িয়ে ফুল কিনতে আসতো, পাতার বিনিময়ে (পাতাকেই কাল্পনিক টাকা ভাবতাম) ছোটদের ফুল দিলে কী যে খুশি হতো সবাই।

এখনকার কিশোররা হয়তো শিমুল কুড়াতে যায় না। আমাদের মত খুব সকালে জেগেও উঠে না তারা। সময়ের সাথে হয়তো তাদের ইচ্ছেরও পরিবর্তন হয়েছে খুব। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছোটরা হারাচ্ছে তাদের সোনালি কিশোর।

সন্ধ্যা হলে নেমে আসতো ঘন আঁধার। পাড়া-মহল্লায় সেভাবে তখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়নি। হারিকেনের মৃদু আলো জ্বালিয়ে সবাই নিয়ম করেই রোজ সন্ধ্যায় পড়তে বসতো। প্রতিটি ঘর থেকেই উচ্চকণ্ঠে পাঠের শব্দ আসতো। যেনো কোনো এক অজানা প্রতিযোগিতা শুরু হতো পড়াশোনার।

চাঁদনি রাতে বাড়ির উঠোনে পাটি বিছিয়ে বড়রা ছোটদের নিয়ে সাজাতো গল্পের আসর। সে কী ভয়ানক গল্পরে বাবা। কখনো রাক্ষসের গল্প, কখনো-বা রাজকুমারি-রাজপুত্রের গল্প! সবাই নিশ্চুপে এক ধ্যানে শুনে যেতো সেসব গল্প রূপকথা। এই প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীরা কখনো এর মজা উপলব্ধি করতে পারবে না।

আমাদের সময়ের সে দুরন্ত কিশোর আজ সময়ের স্রোতে বিলুপ্ত হয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মনোরম শিশুরা হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রনির্ভর। সে উদীপ্ত কিশোর আর হারিয়ে যাওয়া পাঠ্যবইয়ের প্রিয় কবিতাগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।

আমাদের সময় আমরা যে সকল খেলা খেলতাম আজকাল তার নামই জানে না ছোটরা। কী ভাবছেন? আমি শত বছর আগের অতীত নিয়ে লিখছি! আমি তো কেবল বিশ বছর কিংবা তারও কম সময়ের অতীত নিয়ে লিখছি। এতো অল্প সময়ে কী এক তুমুল পরিবর্তন নেমে এলো। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যদিও সহজ করেছে তবে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। এজন্যই হয়তো বলা হয় প্রতিটি জিনিসের একটি ভালো ও একটি খারাপ দিক রয়েছে। ভাবছি এই প্রজন্মের কিশোরদের কে শোনাবে আমাদের সে দুরন্ত শৈশবের ইতিহাস।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়