প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১
ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বাধ্যতামূলক হোক ছাদবাগান
ছোট্ট দেশ ভিয়েতনাম। দেশটির মোট সবজি আবাদের অর্ধেকটাই জোগান দেয় ছাদবাগান। অন্যদিকে ভূমিকম্পের দেশ জাপানের টোকিওতে ছাদের আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশে বাগান করাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজধানী ঢাকা এবং চাঁদপুরে মোট ছাদের চার ভাগের এক ভাগেও বাগান নেই।
চাঁদপুর পৌর এলাকার প্রায় ৩০ হাজার ছাদের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে রয়েছে বাগান। কারণ ছাদবাগান নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্থা কাজ করছে না। সরকারের দু-একটি প্রকল্প থাকলেও বাগানের দিকে খুব একটা মনোযোগ নেই।
এদিকে ২০০৮ সালে পাস হওয়া মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী রাজধানীতে ভবন তৈরির নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলা কি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে চাঁদপুর পৌরসভায় করা যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখার দায়িত্ব পৌর প্রশাসনের।
বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা রাখার নিয়ম রয়েছে। বহুতল বলতে আটতলার বেশি ভবনকে বোঝানো হয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ফাঁকা জায়গা রাখার বিধান থাকলেও ছাদবাগানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সেখানে ঠাঁই পায়নি। ছাদবাগানের বিষয়টি আইনে থাকলে বাধ্যতামূলকভাবে তদারকি করতে হতো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)কে বা স্থানীয় সরকার দপ্তরকে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন ভবন নির্মাণ নীতিমালায় ছাদবাগানের বিষয়টি রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বাধ্যতামূলক ছাদবাগানের বিষয়টি রাখা উচিত বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। এর বাইরে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) মাধ্যমে ছাদবাগান বিষয়টি উৎসাহিত করা সম্ভব। কারণ রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে আবাসন নিয়ে কাজ করে। এর বাইরে ছাদবাগানের বিষয়টি নিয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করতে পারেন স্থপতিরা।
তবে আইনে না থাকলেও বাগান করার উপযোগী ভবন রিহ্যাবের সদস্যরা তৈরি করছে বলে জানিয়েছে রিহ্যাবের সদস্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ছাদবাগানের বিষয়ে কিছু বলা নেই। তবে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা রাখার নিয়ম রয়েছে। ঢাকার মতো দূষণের শহরে ছাদবাগান বাধ্যতামূলক করলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তো।
রিহ্যাবের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাদের বিষয়টি আইনে না থাকলেও ভবন তৈরির সময় ছাদকে বাগানের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এর বাইরে ভবনের বারান্দা এবং ফাঁকা জায়গায় সবুজায়ন করার ব্যাপারেও স্থপতিদের বিশেষভাবে বলা হয়। আধুনিক ভবনগুলোতে ছাদবাগানের জন্যে আলাদাভাবে জায়গাও রাখা হয়।
বাগান বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদবাগান উৎসাহিত করতে দুটি প্রকল্প রয়েছে। তাদের কাজের পরিসর খুবই ছোট। তবে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরাসরি এবং অনলাইনে ছাদবাগান বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। চাঁদপুরে ছাদবাগান বিষয়ক প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। দক্ষ প্রশিক্ষকও নগণ্য। ছাদবাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণও সহজলভ্য নয়। এ ছাড়া ছাদ ভেঙ্গে যাবে বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাবে—এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে অনেকের। বহু মালিকানাধীন ভবনে একক ব্যক্তি চাইলেও বাগানের জন্যে ছাদ ব্যবহার করতে পারেন না। এমনকি ছাদবাগান নিয়ে গবেষণারও ঘাটতি রয়েছে।
ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ছাদে বাগান করার প্রতি আগ্রহ কম মালিকদের। সিটি করপোরেশন ও কৃষি সম্প্রসারণের যৌথ উদ্যোগেরও সংকট রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরেকটি বিষয়ের প্রতি জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বৃষ্টি প্রবণ হয়ে উঠেছে। অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এখনই কৃষির ওপর জোর দিয়ে বহুতল ভবনের ছাদেও সবজি বাগান করার সময় এসেছে। এভাবে সর্বোচ্চ সবজি বাগান গড়ে উঠলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় থাকবে সবজির দাম।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাসনাত সোলায়মান বলেন, ছাদবাগান বিষয়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে আমাদের দেশে। প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ছাড়াও আইনি বাধ্যবাধ্যকতা না থাকা ছাদবাগানের অন্যতম অন্তরায়। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি নিলে এবং ছাদবাগান বিষয়ক হেল্পডেস্ক চালু করলে নগরবাসী উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ সাজ্জাদ ইসলাম বলেন, ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ আইনে ছাদবাগানের বিষয়টি উল্লেখ নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় ভবন নির্মাণ নীতিমালায় ছাদ বাগানের বিষয়টি নির্দিষ্টভাবে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।