শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০

রাহাতের স্বপ্ন

সেহজাদি আরওয়া
রাহাতের স্বপ্ন

রাহাতের বাবা একজন সরকারি চাকুরীজীবী। ওনার পূর্ব পুরুষ রা সকলেই সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। সেখান থেকে সকলে সরকারি চাকুরীটাকে বেছে নেয়। আর মূল্যায়ন ও করে সব চেয়ে বেশি। কিন্তু রাহাত চাচ্ছে নিজের মতো করে কিছু করবে। তার স্বপ্ন নিজের অবস্থান থেকে ব্যবসায়িক হবে। পাশাপাশি সময় কাটানোর জন্য একটা লাইব্রেরী দিবে। তাতে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের বাজ্যিক জ্ঞান আহরণ হবে। রাহাত পার্টটাইম একটা জব করে সেখানে সাত হাজার টাকা বেতন পায়। কিন্তু রাহাতের বাবা মোটেও এটা পছন্দ করতেন না। তিনি সব সময় রাগান্বিত হয়ে বলতেন আমাদের বংশে এসব নেই। তুমি এসব চিন্তা এখন বাদ দাও। তোমার পড়াশোনা ভালো। রেজাল্ট ও ভালো। বিএসসি পরীক্ষা দেও ভালো একটা রেজাল্ট করলে দেখবা খুব ভালো একটা সরকারি চাকুরি পাবে। তাতে তোমার ভবিষ্যত প্রজন্ম অনেক উজ্জ্বল হবে। রাহাতের বাবা কোনোভাবেই তার স্বপ্নকে মূল্যায়ন করেনা। তিনি সব সময় বলতেন আমার আত্মীয়দের ছেলে-মেয়েরা বিএসসি দিয়ে ভালো রেজাল্ট করে কতো চাকরি করে সুন্দর জীবন কাটাচ্ছে। তারা তোমার মতো অহেতুক ব্যবসায়িক হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। রাহাত অনেক নীরব প্রকৃতির মানুষ। সে এসবে বিরক্ত বোধ করলেও কিছু বলেনা। কেননা এগুলো নিত্য দিনের কথা। শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তার একজন শিক্ষক আছেন ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের কাছে সকল সমস্যা খুলে বললো। তিনি বলেন, তুমি যদি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারো তাহলে বহুলোকের প্রশংসার সম্মুখীন হবে।

তাই তুমি তোমার নিজের দিকে নজর দাও। প্রতিষ্ঠিত করো নিজেকে দেখবে তোমার পরিবার গর্ব করবে। রাহাতের স্বপ্ন পূরনের জন্য এ শিক্ষকের কাছে সব সময় সাপোর্ট পায় তাতে তার অনেক সাহস হয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এভাবে পার্টটাইম চাকুরীতে চার মাস কেটে যায়। বসের সাথে কথা হয়েছিল চার মাস পূর্ণ হলে তাকে প্রমোশন দিবে। কিন্তু চার মাস হওয়ার পর তার সাথের সকলের কাছে ই-মেইল চলে আসছে। শুধু তার কাছে আসেনি। তখন রাহাত বসের সাথে কথা বলতে যায়। বস বলেন, তুমি কয়েকদিন অফিসে দেরিতে এসেছো তাই তোমার প্রমোশন হবে না। রাহাত বলে আমি দেরিতে এসেছি সঠিক। কিন্তু আমি অফিসের কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরেছি। রাহাত রেগে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। বাসায় ফিরলো কিছতা রাত করে। দেখে বাবা বসে আছে। সে কখনো বাসায় দেরি করে যায় না। আজকে প্রথম। বাসায় গিয়ে দেখে তার বাবা বসে আছে খুব রাগি চেহারা নিয়ে। রাহাতকে দেখে তার বাবা বলে উঠলো তোমার চাকরিটা কী চলে গেছে? রাহাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমার নীরবতায় বাবা উত্তর খুঁজে নিয়ে বকাবকি করে যাচ্ছেন। আরো বলে তখন বলিনি এসব পার্টটাইম চাকরি না করে বিসিএস পরীক্ষা দিতে, ভালো করে পড়াশোনা করতে। দেখতে সুন্দর একটা রেজাল্ট হতো এসব বলে চলে যায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকদিন কেঁটে যায়। নতুন কোন চাকুরী মিলাতে পারেনি। বাসায় বাবার বকাঝকা, আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। আবার মা বলে পাশের বাসার ছেলে দুটো বিসিএস দিয়ে চাকুরী করতেছে। আবার কেউ স্কলারশিপে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। আর তুমি কী করো বল। আমাদের সমাজের কাছে ছোট করা ছাড়া আর কিছু ই জাননা তুমি।

এদিকে রাহাতের বাবা সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি শেয়ারে পত্রিকার অফিস ও চালাতেন। বিভিন্ন জায়গায় মারামারি, লুটপাট, ছোট ছোট কিশোর গ্যাং, নারী নির্যাতন, অসামাজিক কাজ করা এসব খবর বাসায় এসে নিয়ে বলে দেখো তোমাদের মতো ছেলেরা বাবা-মায়ের কথা না শুনে এসব কু-কর্মের কাজ করে বেড়ায়। রাহাতের বাবার অফিসে সবার আগে এসব খবর গুলো ছাপানো হতো। তার জন্য তিনি কয়েবার পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে রাহাতের এসব পছন্দ না। কেননা তার বাবা অনেক মিথ্যে সংবাদ ও প্রচার করতেন। রাহাতের মন্তব্য হলো সঠিকভাবে খোঁজ খবর নিয়ে পত্রিকা ছাপানো উচিত। এতে করে যুব সমাজ ধ্বংসের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে।

এসব বানোয়াট সংবাদ প্রচার করতে দেখে রাহাত মোবাইল চালানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেভাবে আমি একা তো এতো কিছুর সমাধান দিতে পারবোনা। সকালে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তাহলে তো আমরা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পরবো। পরিবার,আত্মীয়-স্বজনেরা কী ভাববে এসব কথা চিন্তা করতে করতে রাহাত মানসিকভাবে আর ঠিক থাকতে পারেনি। তাকে তার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহত্যা কে। সে জানে আত্মহত্যা করা মহাপাপ এবং এটা করলে কোন সমাধান আসবেনা। তবুও সে এই পথটাই বেছে নিলো কেননা তাকে প্রতিনিয়ত কঠিন যন্ত্রনা পোহাতে হবে না। মৃত্যুর আগে

সে একটা চিটি লিখে যায় তার বাবা-মায়ের কাছে...

প্রিয় বাবা- মা,

যতক্ষণে এ চিঠিটা তোমরা হাতে পাবে ততক্ষণে আমি আর এ দুনিয়ায় থাকবোনা।

সমাজের সকলের ভাবনা নিয়ে তোমরা সব সময় ব্যস্ত ছিলে। নিজের ছেলের কী চাহিদা কখনও জিজ্ঞেস করোনি। যখনি বাসায় আসতাম সমাজ কী বলবে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী কী বলবে ভালো চাকরী নেই কী হবে ভবিষ্যৎ। কোন চিন্তা নেই তোমার এসবের ভিড়ে হারিয়ে গিয়ে কেমন আছি। খেয়েছি কিনা এ কথাটা জিজ্ঞেস করতেও ভুলে গেছো তোমরা। বাবা তোমার ছেলে কী করতে চায়, কী হতে চায়, কী করলে তার ভালো হবে একটু সাহস দিয়ে সামনে এগিয়ে না দিয়ে সারাক্ষণ রাগারাগি করে গেছো।

‘বাবা আজ আর আমি নেই’

কী হবে সমাজের ভবিষ্যৎ।

তোমার সমাজ কী তাহলে চলবেনা? তোমার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কী কিছু বলবেনা? তোমার অফিসে কী সকলের মুখোমুখি হতে অসুবিধা হবেনা? আর মা পাশের বাসার আন্টি কী এখন আর কথা শুনাবেনা?

আমাকে নিয়েই যেহেতু এতো সমস্যা তোমাদের চলে গেলাম চিরতরের মতো। আর বাবা আরেকটা কথা আমার এ মৃত্যুর খবরটা তো আর তোমার আগে কেউ জানবেনা তাই সবার আগে তোমার পত্রিকায় ছেপে বড় বড় পুরস্কারপ্রাপ্ত হইয়ো। আর থাকো তোমরা তোমাদের সমাজ সংস্থা নিয়ে।

ইতি তোমাদের

অকৃতজ্ঞ ছেলে, রাহাত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়