বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় ওসির অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ
  •   ভারত-মিয়ানমার থেকে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল কিনবে সরকার
  •   মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ ও কীটনাশক পাওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  •   মশার উপদ্রবে চাঁদপুর পৌরবাসী ॥ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
  •   শাহরাস্তিতে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৪

ভালো-মন্দ দ্বিধাদ্বন্দ্ব

মনজুর সা’দ
ভালো-মন্দ দ্বিধাদ্বন্দ্ব

গতকাল ব্যাগ কেনার জন্য মার্কেটে গেলাম। দোকানিকে বললাম, কালো দেখে ভালো একটা ব্যাগ দেন। সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে বললাম, আরে বাবা, তাকিয়ে থাকার কী আছে! কালো দেখে ভালো একটা ব্যাগ দেন।

দোকানি বলল, ভাই, কালো আবার ভালো কেমনে হয়?

‘উফ রে, বোঝে না! কালো রঙের ভালো মানের ব্যাগ দেখাতে বলছি।’

‘ও এই কথা। আগে বুঝায়ে কইবেন না!’

কয়েকটা ব্যাগ বের করে সামনে মেলে ধরল। একনজর দেখামাত্রই পছন্দ হয়ে গেল। যা কিছুই দেখি, একনজর দেখামাত্রই পছন্দ হয়ে যায়। এ নিয়ে মহা বিপদে আছি।

দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম, দাম কত?

তেইশ শ পঞ্চাশ।

আমি একটা দাম বলি?

বলেন।

সতেরো শ টাকা দিই?

দেন।

টাকা গুনে দিতে দিতে আফসোস করে বললাম, আয়হায়, এটা আমি কী করলাম? দাম বলার সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দিল। মাত্র একটা দামই বলছি। বেশি বলি নাই। দরদাম যত বেশি হবে, জিনিস কিনে তত বেশি মজা।

‘টাকা ভালো করে গুনে নিছেন তো?’

‘জি স্যার, নিছি। সমস্যা নাই।’

‘সমস্যা তো আপনার নাই। সমস্যা আমার। মাত্র একটা দাম কইলাম, সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিলেন মিয়া।

‘স্যার, কিছু কইলেন?’

‘নাহ, আপনাকে আর কী কমু?’

নিজেকে তিরস্কার করতে করতে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। পুরো মার্কেটে চক্কর দিলাম তিনটা। এস্কেলেটর দিয়ে একবার সোজা উঠলাম, আরেকবার উল্টো নামলাম। লোকজন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে দেখছে। আশ্চর্য, তাকিয়ে দেখার কী আছে!

মার্কেট থেকে বেরিয়ে রাস্তার ওপাশে গেলাম। লাল মিয়া চাচার চায়ের দোকানে বসলাম। লোকজন রাজনীতি, রাস্তাঘাট, জনগণ, উন্নয়ন, পতন ও অধঃপতন নিয়ে বড় বড় লেকচার দিচ্ছে। কেউ আমার ব্যাগের দিকে তাকাচ্ছেই না। এত দামি একটা ব্যাগ কিনলাম, কেউ কিছু বলছে না কেন? কী আশ্চর্য!

লাল মিয়া চাচাকে কড়া করে একটা লাল চা দিতে বললাম। চাচা চা দিল। চা এগিয়ে নিতে গিয়ে আস্তে করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, চাচা, ব্যাগটা কেমন হইছে?

‘ভালা, খুব ভালা। আজকাল তো এই সব ব্যাগ পাওয়ান যায় না। খুব ভালা হইছে।’

‘বুঝলাম, চাচার ব্যাগ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।’

চাচা বললেন, ‘চা কেমন হইছে?’

চায়ে চুমুক না দিয়েই বললাম, ‘চিনি একটু কম হইছে। আরও তিন চামচ দিলে ঠিকঠাক হইত।’

‘হুনো ভাতিজা, আরও তিন চামচ দিলে চিনির শরবত হয়ে যাইত। এই লাইনে ১৩ বছর ধরে কারবার করি। কাস্টমারের চেহারা দেখে চিনি মাপি।’ হা হা হা করে দঁাত বের করে হাসতে লাগল।

দ্রুত চা শেষ করে উঠে পড়লাম। রাস্তায় ফেরদৌসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। এটা-সেটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলো। কথা-কাটাকাটি হলো। ছোটখাটো একটা ভিড় জমে গেল। দুজন দুই দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ মনে হলো, একি, ও তো আমার ব্যাগের কথা কিছুই বলল না। এত দাম দিয়ে একটা ব্যাগ কিনলাম। কিছু না বলেই চলে যাবে এটা কোনো কথা?

পেছন থেকে ফেরদৌস ফেরদৌস বলে চিৎকার করলাম। ও পেছনে তাকাল। ভয় পেল। আমাকে আসতে দেখে দিল দৌড়। আমিও তার দিকে দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে বলতে লাগলাম, ‘আমার ব্যাগ, আমার ব্যাগ।’ পেছনে তাকিয়ে দেখি, আশপাশের লোকজনও আমার সঙ্গে দৌড়াচ্ছে। ওদের দৌড়ানোর কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। ওরা শুধু দৌড়াচ্ছে যে তা না, দৌড়ের সঙ্গে আরও একটা শব্দ যোগ করে দৌড়াচ্ছে, ‘ব্যাগচোর! ব্যাগচোর! ব্যাগচোরকে ধ–রে–ন।’

পাশের এক ভাইকে বললাম, আপনারা দৌড়ান। আমি একটু পানি খেয়ে আসি। পরে আপনাদের দলে যোগ দেব।

বেঞ্চে বসে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললাম, আজ ফেরদৌসের কী অবস্থা হয় কে জানে!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়