প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১০
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা-১৮
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ বারবার পেছানোর কারণে মানসিক যন্ত্রণা বাড়ছে
মহামারি করোনার কারণে গতবছর হয়নি এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা অটোপাশ পেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে যথাসময়ে পরীক্ষা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ একাধিকবার ঘোষণা করেও নেয়া হয়নি। বারবার পরীক্ষার তারিখ পেছানোর ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ যেমনি বাড়ছে, তেমনি প্রস্তুতি পড়ছে নেতিবাচক প্রভাবও।
|আরো খবর
সেই সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা'। এইচএসসি শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও সমস্যা নিয়ে এই পর্বে কথা বলা হয় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া তুন নূর মিনফার সাথে। পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, একই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও পড়ালেখার বর্তমান অবস্থার কথা।
চাঁদপুর কন্ঠ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোটা কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি-না? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : নিঃসন্দেহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে বলা হয় 'গেইম চেঞ্জার'। এই খেলায় ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যেমন শক্তপোক্ত, নিখাদ প্রস্তুতি প্রয়োজন, তেমনি মানসিক সুস্থতাও জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাধারণত ৩/৪ মাস সময় পাওয়া যেত, বাধা ধরা সময়! তখন একটা দৃঢ় স্পৃহা কাজ করতো, পড়াশুনার জন্য একটা আলাদা তাড়া কাজ করতো। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ বারবার পেছানোর কারণে নিজের থেকে তাড়ার জোর যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে মানসিক যন্ত্রণা।
চাঁদপুর কন্ঠ : করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিনিয়ত চরম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছি, তবুও নিজের মতন চেস্টা করছি।
চাঁদপুর কন্ঠ : মানসিক অবস্থা কেমন? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যে দীর্ঘদিনের শ্রম, কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের আশা নোয়ে স্থগিত হওয়া পরীক্ষার আশায় থাকা, কথিত অটোপাশ, কথিত আত্মীয়, পরিচিতজনের বাঁকা নজর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা সম্পর্কিত অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত, পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা, স্থগিত হওয়া, বারবার তারিখ পরিবর্তন....আর না বলি! একখাতেই এতো প্রতিকূলতা, বাকির খাতও তো কম নয়। এ অবস্থায় কেমন মানসিক অবস্থা কাম্য?! নিশ্চই ভালো নয়।
চাঁদপুর কন্ঠ : পড়ালেখা যেহেতু প্রায় বন্ধ। বিকল্প কোনো কাজ করছেন কী? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : পড়াশোনা বন্ধ নয়, তবে এর পাশাপাশি যেহেতু আগে থেকেই সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে জড়িত ছিলাম, সে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কিছুটা মনোযোগ দিচ্ছি। নির্দিষ্টি সিলেবাসের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কিছুটা ঘাটাঘাটি করছি, আইটি বিভাগেও কিছুটা নজর দিচ্ছি।
চাঁদপুর কন্ঠ : আপনি কি মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সময়ের দাবী? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : প্রায় দেড় বছর যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময়টায় বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, বিপথগামী হয়েছে। এবছরের ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, করোনাকালীন ১০ মাসে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ০৫ হাজার, একই সময়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ১১ হাজার। এখানকার একটি অংশ কিন্তু শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট কারণে মানসিক পীড়া থেকে এ পথ বেছে নিয়েছে। যার কারণে আমি মনে করি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের ঘরের বাইরে যাওয়া কিন্তু বন্ধ নেই!
চাঁদপুর কন্ঠ : দীর্ঘ দিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : দীর্ঘ এই সময়টাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বলে যেমন "স্টাডি ফ্রম হোম" আমাদের সময় বাঁচিয়েছে, খুব সহজে কম সময়, কম শ্রমে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করা গেছে তেমনি আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ইন্টারনেট আসক্তি, পড়াশুনার প্রতি অনাগ্রহ। আবার অনেকেই সম্মুখীন হচ্ছে সেশন জট নামক অভিশাপের। বেড়েছে নানান প্রকারের পড়াশোনা সংক্রান্ত জটিলতা।
চাঁদপুর কন্ঠ : অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন?
সাদিয়াতুন নূর মিনফা : ফলপ্রসূ তো বটেই।তবে, আপনি যদি হুট করে একজন বাঙালিকে খাবার প্রক্রিয়া সম্পাদনের উদ্দেশ্য হাতে চপস্টিক ধরিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে যেমন আপনার উদ্দেশ্যে বিফলে যাবে, অনলাইন পাঠদানের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। অনলাইন পাঠদান সম্পাদনের জন্য অনেক শিক্ষার্থীরই প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা সংবাদ মাধ্যমে আত্মহত্যাসহ নানান অরাজকতার কথাও জেনেছি। এবার যদি বলি যাদের অনলাইন পাঠদান গ্রহণের সকল সুবিধা আছে তাদের অনেকেই দেখবেন প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব হাসি তামাশা করছে, 'আজকের ক্লাসে ক্যামেরা অফ করে ঘুমায় গেছি।' শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা যদি বলি, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে খুব দায়িত্বের সাথে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে, আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ক্লাস ততক্ষণ চলে যতক্ষণ স্টুডেন্ট ক্লাসে উপস্থিত হতে এবং তাদের স্ক্রিনশট নিতে শিক্ষকদের সময় লাগে।
তাই অনলাইন পাঠদান ফলপ্রসূ হওয়ার জন্যে সরকারি সহায়তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সচেতনতা আবশ্যক, এছাড়া সম্ভব নয়।চাঁদপুর কন্ঠ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? সাদিয়াতুন নূর মিনফা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব কিছুই বর্তমানে দিব্যি চলছে। যেহেতু বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্যে টিকা কার্যক্রমও শুরু হয়েছে তাই বর্তমানে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কারণ দেখছিনা।প্রয়োজনবোধে নিয়মিত প্রত্যেক শ্রেণীর ক্লাস না নিয়ে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শিফটে বিভিন্ন দিনে পরিমিত পরিমানে হলেও ক্লাস পরিচালনা করা জরুরি।