প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২১, ২০:৫৫
কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা–১২
অনিশ্চয়তা সামনে রেখে দেড় বছরে মানসিক অবসাদ ও হতাশা দেখা দিয়েছে
করোলাকালীন সময়ে শিক্ষা বিপর্যয়ের কারনে শিক্ষার্থীদের ভর্বিষ্যৎ পথযাত্রায় সাধারণ সব শিক্ষার্থীদের যতোটা সমস্যা সসম্মুখীন হচ্ছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ২০২১ সালের এইচএসসি ব্যাচের অটোপাস করা শিক্ষার্থীরা। বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতার যুগে অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে হবে এদের। পিছিয়ে পড়া হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে চাঁদপুর কন্ঠের ধারাবাহীক বিশেষ আয়োজন 'কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা'।
|আরো খবর
এই পর্বে থাকছে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সাহিদুল ইসলামের করোনাকালীন শিক্ষা ভাবনা নিয়ে। জানিয়েছেন শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে তার হতাশা ও প্রত্যাশার কথা৷
চাঁদপুর কন্ঠ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি-না? সাহিদুল ইসলাম : আমি সাম্প্রতি জানলাম সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখ ডেন্টালের পরীক্ষা হবে। আমারতো মেডিকেলের এক্সামের পরে আর তেমন প্রস্তুনি নেওয়া হয়নি। এখন এইটা দেখে এতো বেশি টেনশন হচ্ছে যে আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। একবার প্রস্তুতি নেওয়ার পর যখন পরীক্ষা আবার পেছানো হয়, তখন প্রস্তুতিটা আর ভালো থাকে না। মানসিকভাবেও একটা চাপ সৃষ্টি হয়।
চাঁদপুর কন্ঠ : করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? সাহিদুল ইসলাম : যেহেতু সামনেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা তাই লেখাপড়া করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে আমাদের লেখাপড়া যেভাবে হওয়া প্রয়োজন, সেভাবে চলছে না।
চাঁদপুর কন্ঠ : মানসিক অবস্থা কেমন? সাহিদুল ইসলাম : অনিশ্চয়তা সামনে রেখে দেড় বছরে মানসিক অবসাদ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। ক্রমশই ভেঙ্গে পড়ছি। জানি না এভাবে আর কত দিন চলবে?
চাঁদপুর কন্ঠ : পড়ালেখা যেহেতু প্রায় বন্ধ। বিকল্প কোনো কাজ করছেন কী? সাহিদুল ইসলাম : বিকল্প কাজ কিভাবে করবো? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিতো একবারে বাড়ানো হচ্ছে না। ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে, হচ্ছে। ফলে বিকল্প কিছু করার সুযোগ বা সাহস পাচ্ছি না। মনে করেন, কিছু একটা করতে শুরু করলাম, আর হঠাৎই স্কুল কলেজ খুলে দিলো। তাহলে কি স্কুল কলেজে ফিরে যেতে হবে না? কিছু করতে যে নামলাম সেই পুরো ইনভেস্টটাইতো লস হয়ে যাবে তখন।
চাঁদপুর কন্ঠ : আপনি কি মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সময়ের দাবী? সাহিদুল ইসলাম : অবশ্য এখন যতো তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে, শিক্ষার্থীরা ততটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
চাঁদপুর কন্ঠ : প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আপনার প্রতিক্রিয়া কী? সাহিদুল ইসলাম : মানসিক অবসাদে ভুগছি, দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। পড়ালেখাহীন, কর্মহীন হয়ে এভাবে বেকার বসে থাকা যায়?
চাঁদপুর কন্ঠ : অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? সাহিদুল ইসলাম : ফলপ্রসু হচ্ছে বলে মনে হয় না। অনেকের ফোন নেই, কেউ এমবি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে, কারো এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা। এত শত সমস্যা সমাধান না করে অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দেওয়াটাও ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত ছিলো না। তাছাড়া অনলাইনে পাঠদানে মাধ্যমে শুধু বইয়ের নিদিষ্ট কিছু পাঠই শিখা যায়। শিক্ষার যে প্রধান মানসিক বিকাশ, তা অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে সম্ভব হয় না।
চাঁদপুর কন্ঠ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? সাহিদুল ইসলাম : অবশ্যই অতিদ্রুত খুলে দেয়া উচিত। পদক্ষেপ গুলো এমন হতে পারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথমত ইউনিভার্সিটি, কলেজ খুলে দেওয়ার পর পর্যায়ক্রমিক ভাবে স্কুল, প্রাইমারি সব খুলে দেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন না হলেও অন্তত সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ক্লাস নেয়ার বিবেচনায় করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তা অবশ্যই সরকারি অর্থায়নে হতে হবে।