বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ২১:২৩

প্রাণের শহর চাঁদপুর

মাহমুদ হাসান খান
প্রাণের শহর চাঁদপুর

দারুণ শিহরিত বোধ করছি। কী লিখব, কোথা থেকে শুরু করব ভাবতেই যেন কেমন একটা নাড়ির স্পন্দন অনুভব করছি। আমি লেখক নই। কী লিখতে কী লিখব। তা-ও আবার আমার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা যে শহর চাঁদপুর, যাকে সেই ২০১৪ সালে ফেসবুক ব্যবহার করার শুরু থেকেই আমি ভালোবাসা দিয়ে নাম রেখেছিলাম ‘আমার প্রাণের শহর চাঁদপুর’। আজ সেই প্রাণের শহর চাঁদপুর নিয়ে ফিচার লেখা! বেশ দারুণ ব্যাপার।

সেই ১৯৬৬/৬৭ থেকে বলতে পারব এই শহরের বেড়ে উঠার গল্প। জন্মেছিলাম ১৯৫৯ সালে ঠিক শহরের প্রাণ কেন্দ্রে চিত্রলেখা সিনেমা হলের মোড়ে (বর্তমানে যা চাঁদপুর সরকারি কলেজের মোড়)। চাঁদপুর কলেজের নিউ হোস্টেল রোডের মাথায় (বর্তমানে শহীদ জিয়া ছাত্রাবাস)।

পড়ালেখার হাতেখড়ি গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছোট ওয়ান দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শুরু। তারপর বড় ওয়ান এভাবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত গণি স্কুলে প্রাথমিক পর্যায় শেষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে হাসান আলী হয়ে সপ্তম শ্রেণিতে এসে চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় (টেকনিক্যাল স্কুল নামে যার পরিচিতি) থেকে মাধ্যমিক স্কুল পাস করি শিল্পকলা বিভাগে।

ছোট্ট শহর। হাতে গোনা কিছু মানুষ। কলেজের এই গেট থেকে সেই গেট মনে হতো কত দূর। আর চোখের সামনে চাঁদপুর কলেজটাকে মনে হত আকাশের মত উঁচু এক বিশাল দালান। মূল ভবনের তৃতীয় তলার নির্মাণ কাজ চোখের সামনে দেখা। কত দিন লাগিয়ে তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে তা ঠিক মনে নেই, তবে অনেক সময় লাগিয়ে একটু একটু করে গড়ে তোলা আজকের চাঁদপুর সরকারি কলেজের তৃতীয় তলা, যা খুব পরিষ্কার মনে আছে। কলেজের সামনের দিকের দুই প্রান্ত দিয়ে দোতালা থেকে তৃতীয় তলায় উঠার সিঁড়ি ছিল। কলেজ মাঠ থেকে সিঁড়ি দুটো খুব সুন্দর লাগতো।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা (ছেলে-মেয়ে) সিংহভাগই পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত। খুব ভালো লাগতো স্কুল ছুটির সময়টা সবাই দল বেঁধে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার দৃশ্য ছিল খুবই মনোরম। দলে দলে বন্ধু-বান্ধবীরা গল্প করতে করতে কত পথ হেঁটে চলে যেত টেরই পেতাম না।

বর্তমান সরকারি কলেজের মোড় থেকে কালিবাড়ি মোড় ছিল অনেকটা ঢাকা থেকে দিল্লির দূরত্ব! কালীবাড়ি মোড়, বর্তমান হকার্স মার্কেটের সামনে থেকে মুড়ির টিন নামক বাসগুলো ছেড়ে যেত প্রায় ঘণ্টা বিরতিতে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। কালীবাড়ি মোড় থেকে মাতৃপীঠ স্কুলের মোড় হয়ে চিত্রলেখা সিনেমা হলের মোড় হয়ে তালতলা হয়ে কুমিল্লা আসা-যাওয়া করত বাসগুলো।

আর লঞ্চঘাট বলতে কিছুই ছিল না। ছিল স্টিমার ঘাট। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অল্প কয়েক বছর আগে তৈরি হয় আধুনিক নৌ-টার্মিনাল। যা আজ মাছ ঘাটের কাছে ধ্বংস স্তূপ হয়ে আছে নদীতে অর্ধেক তলিয়ে যাওয়ার কারণে।

কলেজ মোড় থেকে স্টিমার ঘাটের আসা যাওয়ার বাহন ছিল রিকশা। পথ শেষ হতো না। রিকশা চলছে তো চলছেই। ভাড়া ছিল ২৫ পয়সা (১৯৬৮/৬৯ সালের কথা)।

বড় স্টেশন বা মোলহেড আসার কথা কখনোই ভাবতাম না। কারণ এতদূর আসা সে ছিল চিন্তার বাইরে। আজকের হকার্স মার্কেটটা ছিল একটা খুব সুন্দর লেক। কালীবাড়ি মোড় থেকে বর্তমান শহীদ মিনার পর্যন্ত ভরাট করে ফেলায় শহরের সৌন্দর্য অনেকটা মলিন হয়ে যায়। বর্তমান লেকের পাড়ে বিকেল হলে বন্ধুরা বসে বাদাম খেতাম আর গল্প করতাম। লেকের পানি ছিল দারুণ স্বচ্ছ। নদীর সাথে সংযোগ ছিল। যে কারণে সবসময়ই জোয়ার-ভাটার পানি খেলত।

চাঁদপুর শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটির কথা বলতে গেলে কান্না পায়। এত সুন্দর স্বচ্ছ পানিতে সবসময় পূর্ণ থাকত খালটি। জোায়ার-ভাটার পানি খেলত। আর সেই সাথে খালভর্তি নানা প্রজাতির মাছের বিচরণ দেখা যেত খালি চোখে।

ডাকাতিয়া নদী ছিল চাঁদপুর শহরের আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রচণ্ড খরস্রোতা ছিল ডাকাতিয়া নদী। বর্ষাকালে নৌকায় নদী পার হতে ছোট-বড় সবাই ভীষণ ভয় পেত।

৫০/৬০-এর দশকে ডাকাতিয়ার পাড়ে বড় বড় দুটো পাটকল ছিল। সেখানে কাজ করত হাজার হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সময় একটা সুন্দর দৃশ্য দেখা যেত আর তা হলো প্রত্যেক শ্রমিকের কাঁধেই গামছায় এক মাথায় ঝুলত একটা ২/৩ কেজি সাইজের ইলিশ আর অন্য মাথায় থাকত একটা চালের পোটলা।

এমনি করে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়ে যখন আমি আমার প্রাণের শহরের আজকের এই রূপ দেখি। সারা শহরে হাতে গোনা কটা পাকাবাড়ি ছিল এই শহরে। আমার বাসার কথাই যদি বলি সেই একতলা বিল্ডিংটাই ছিল ওই এলাকায় একমাত্র পাকা বাড়ি। আর বেশির ভাগই ছিল সুন্দর সুন্দর টিনের ঘর। প্রত্যেক বাসায়ই ছিল নারিকেল আর বরই গাছে ভরা।

সারা শহরে নতুনবাজারে বিনোদনের জন্য ছিল দুটো সিনেমা হল (ছায়াবাণী আর চিত্রলেখা) আর পুরাণবাজারে ছিল কোহিনুর। বিনোদনপ্রিয় মানুষ নতুন ছবি মুক্তি পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ত সিনেমা হলগুলোতে।

অনেক অনেক ছোট ছোট সুন্দর স্মৃতির শহর আমার প্রাণের শহর চাঁদপুর। এই শহরে জন্ম নিয়ে এই শহরেই বেড়ে উঠা। মাঝখানে কিছুটা সময় দেশ বিদেশে কাটিয়ে এসে আবার এই শহরেই জীবনের শেষ সময়গুলোর প্রহর গোনা।

ল্যাম্পপোস্টের গল্পটাও বেশ মজার। অনেক দূর পর পর মোমবাতির আলোরা মত হাতে গোনা কটা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলত। এখনকার মতো এতো আলো ঝলমলে শহর ছিল না প্রাণের শহর চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়