প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৪
রক্তবীজের বুকে ফসলের ঘ্রাণ
আরাফাত শাহীন
ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি যখন উপমহাদেশে তাদের শকুনি থাবা বিস্তৃত করার চেষ্টা করে তখন এদেশের মানুষ চুপ করে বসে থাকেনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা শক্তিশালী ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। হয়তো তারা তাৎক্ষণিক কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে মুক্তি ও সংগ্রামের রাস্তা দেখিয়ে গেছেন।
‘স্বাধীনতা’ শব্দটা শুনলেই শৃঙ্খলমুক্তির দীর্ঘ ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস জেগে ওঠে। মনে হয়, হঠাৎ যেনো একটা দমকা হাওয়া এসে বুকের ভেতরটা একদম ঠা-া করে দিয়ে গেলো; হৃদয়টা শীতল ঝর্ণার মতো প্রশান্ত করে দিয়ে গেলো। আচ্ছা বলুন তো, স্বাধীনতা কে না চায়! বনের পাখি থেকে শুরু করে ছোট্ট শিশু পর্যন্ত সবাই আসলে স্বাধীনতার কাঙাল। একটি পাখিকে হয়তো খাঁচার ভেতর আবদ্ধ রেখে পোষ মানানো যায়; কিন্তু পাখিটি কি আসলে এমন জীবন চায়? তাহলে একটু সুযোগ পেলেই কেনো এমন জাঁকজমক ও আরামদায়ক পরিবেশ ত্যাগ করে ছুটে যায় বনের পথে? তার মানে সেও স্বাধীনতা চায়; মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে প্রাণভরে শ্বাস নিতে চায়। আমরা সবাই আসলে সেটাই চাই।
আমাদের দেশের ইতিহাস যদি আমরা একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখি তাহলে দেখতে পাবো, বাংলাদেশের মানুষ চিরকালই স্বাধীনতার জন্যে ব্যাকুল থেকেছে। শুধু এই স্বাধীনতার জন্যে যে যুগে যুগে এদেশের কত মানুষ তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে তার ইতিহাস হয়তো কোথাও লিপিবদ্ধ নেই। তবে এই চিরন্তন সত্যটাকে মেনে নিতে আমাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি যখন উপমহাদেশে তাদের শকুনি থাবা বিস্তৃত করার চেষ্টা করে তখন এদেশের মানুষ চুপ করে বসে থাকেনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা শক্তিশালী ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। হয়তো তারা তাৎক্ষণিক কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তি ও সংগ্রামের রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। মাতৃভূমির মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য যুগে যুগে এদেশের বহু বীরপুরুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও তিতুমীর তার বাঁশের কেল্লায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। বিপ্লবী ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগের কাহিনী ইতিহাসের পাতায় খুব যতœ করে লেখা রয়েছে। এছাড়া বহু বীরপুরুষ তাদের আত্মত্যাগের জন্যে আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। শুধু দেশমাতৃকার মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যে যে জাতির সন্তানরা এভাবে অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, তাদের পায়ে পরাধীনতার শিকল পরায় এমন সাধ্য কার?
তাইতো ইংরেজ শক্তি যখন এদেশ থেকে বিদায় নিয়ে যায় তখন সিন্দাবাদের ভূতের মতো পাকিস্তানি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি আমাদের ঘাড়ে চেপে বসতে চেয়েও লজ্জাজনক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এদেশের মানুষকে শোষণ এবং বঞ্চনা উপহার দিয়ে কোনো জাতি তাদের শাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি। মোগল আমলেও যখন সারা ভারতবর্ষ তাদের বশ্যতা স্বীকার করে তাদের শক্তির কাছে নত হয়েছে, এদেশে তখনও আমাদের পূর্বপুরুষরা বহু বছর স্বাধীনভাবে নিজেদের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। সুতরাং এমন স্বাধীনতাপ্রিয় জাতিকে পরাধীনতার শিকল পরিয়ে রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেতে যে কতোটা ব্যাকুল তার সর্বশেষ উদাহরণ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৪৭ সালে বহু আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলেও বাংলার মানুষ আবার বন্দি হয় পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির কাছে। কিন্তু কতো দিন আর বন্দি করে রাখা সম্ভব? একদিন ঠিকই ফুঁসে উঠলো এদেশের আপামর জনসাধারণ। তাদের সম্মিলিত শক্তি ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতার কাছে চরমভাবে মার খেয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো তখনকার দিনে সামরিক পরাশক্তি পাকিস্তানি সেনারা। বাংলাদেশের মানুষ এবার প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার স্বাদ পেলো। বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা পরাধীনতার বিষাক্ত বাতাস ত্যাগ করে এবার তারা বুকভরে স্বাধীন বাতাস গ্রহণ করলো।