প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২১, ১০:১৭
পরীমনি মদ পরিবেশন না করায় কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুর চালান
ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনার আগের রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী রাত ১১টায় ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রাত প্রায় ১টার দিকে পরীমনি এক সদস্যের মাধ্যমে ক্লাবের বারে প্রবেশ করে মদ অর্ডার করেন। মদের একটি বোতল তার টেবিলেও দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়েটাররা পরিবেশন করতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পরী মনি। এক পর্যায়ে ১৫টি গ্লাস, ৯টি স্ট্রে ও বেশ কিছু গ্লাস ভাঙচুর করে বেরিয়ে যান। এ সময় তার সঙ্গে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী ছিলেন।
বুধবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে ৭টার দিকে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ৮ জুন রাতে পরী মনির ভাঙচুরের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা তাকে চিনতাম না, কোনোদিন দেখিনি। পরে একজনের কাছে শুনেছি ওনার নাম পরীমনি। তার (পরীমনির) সঙ্গে হাফপ্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোক ছিলেন এবং একজন নারী সঙ্গী ছিলেন। ক্লাবের একজন সদস্যের রেফারেন্সে তিনি আসেন সেখানে। সেই সদস্যকে শোকজ করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমরা এই মুহূর্তে কোনোভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি না। কারণ, এতে আমাদের ক্লাবের মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আমরা কোনো জিডি করিনি।
ইকবাল বলেন, আমাদের ক্লাবের ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অ্যাডমিন এবং ডিরেক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি দেখেন। দেখে তারা পরীমনিকে বলেছেন, আপনি তো ক্লাব রুল ভায়োলেট করেছেন। আপনি তো এমন করতে পারেন না। তখন উনারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। উনাদের আচার-আচরণ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় বলা হয়েছে চলে যেতে। উনারা যাচ্ছিলেন না দেখে আমাদের পরিচালকই ক্লাব থেকে চলে যান। তারপর যে সদস্য উনাদের এনেছিলেন, উনিও তাদের চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু উনারা যাচ্ছিলেন না দেখে ওই সদস্য নিজেও চলে যান। এরপর উনারা অকস্মাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং গ্লাস, অ্যাশট্রে ছুড়ে মারতে থাকেন।
আলমগীর ইকবাল জানান, এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে তারা পুলিশ কল করেন। পুলিশ আসার পরে দেখতে পায়, উনি এগুলো ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ জিজ্ঞেস করে, কেন কল করেছেন। উনারা বলেন আমাদের সঙ্গে এই হয়েছে সেই হয়েছে। পুলিশ সদস্যরাই তখন বলেন, এরকম কিছু তো আমরা দেখছি না। তখন কেউ ছিল না, দুই জন ওয়েটার ছিল, আর উনারা ৩ জন ছিলেন। তারপর পুলিশ ভাইয়েরা ওয়্যারলেসে ওপরের মহলে জানতে চায়—আমরা কী করবো। তখন সেখান থেকে নির্দেশ আসে, উনারা এরকম করতে থাকলে, তাদের বের করে দিয়ে চলে যান। তখন এই আওয়াজ শুনে উনারা কিছুটা ঠান্ডা হন এবং পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা চলে যান। এরপর আর অন্য কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষ ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী শোকজ করেছি এবং এটার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি চলমান অবস্থায় আছে।
গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘৮ জুন রাতে অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ ৯৯৯-এ ফোন করে ভাঙচুরের অভিযোগ করেন। তারপর ৯৯৯ থেকে গুলশান থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানায়। তারপর থানা থেকে আমাদের এক অফিসার সেখানে যান। গিয়ে দেখতে পান, সেখানে পরী মণিসহ আরও দুজন উপস্থিত ছিলেন। তারপর ঘটনাটি শেষ হয়। এ ঘটনায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি।’
‘তবে সাধারণত ৯৯৯ থেকে ফোন এলে বা আমাদের পুলিশ অ্যাকটিভি করলে আমরা ঘটনাটি নোট রাখি। সেভাবে নোট রেখেছি। কিন্তু জিডি বা মামলা যেহেতু করা হয়নি, সেহেতু আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বা হয়নি’, যোগ করেন এডিসি।
কিন্তু অভিযোগ কী ছিল, এমন প্রশ্নে নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘থানায় যে নোট রাখা হয়েছে, সেখানে কারণ উল্লেখ করা নেই। কিন্তু শুনেছি, তর্কাতর্কির ঘটনার জেরে ভাঙচুর ঘটেছে।’ জানতে চাইলে চিত্রনায়িকা পরীমনি বলেন, ‘এটা একটা ফালতু অভিযোগ। সেখানে (অল কমিউনিটি ক্লাব) কিছু হলে এতদিন পরে কেন এই অভিযোগ?’
গত ৮ জুন চিত্রনায়িকা পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে গেলে সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় গত সোমবার ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এই নায়িকা। মামলার পর পুলিশ প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।