প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি নানা সমস্যায় জর্জরিত
দেশের শিল্প-সংস্কৃতির উর্বর মাটি বলা হয়ে থাকে চাঁদপুর জেলাকে। অথচ এই জেলার সংস্কৃতি চর্চার প্রিয় প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এটির নামকায়াস্তে একটি মিলনায়তন রয়েছে।
|আরো খবর
চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন হবে শিল্প-সংস্কৃতিতে জড়িত সংস্কৃতি কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের একটি আড্ডাস্থল, যেখানে থাকবে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, সভা-সেমিনারের হলরুম, বিরাট মাঠ বা উন্মুক্ত স্থান, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার রুমসহ নানাবিধ সুব্যবস্থা, বিরাট মিলনায়তনসহ বিশাল ভবন সম্বলিত একটি স্থান, সেখানে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি নিতান্তই ছোট্ট মিলনায়তন সর্বস্ব একটি ভবন। এতে আবার যাও রয়েছে, তা নিয়ে নেই অভিযোগের সীমা। সংস্কৃতি কর্মীদের অভিযোগ, এ ভবনটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়। যার ফলে এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
জানা যায়, বর্তমান জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনটি ২০০৭ সালে ৪০০ আসন বিশিষ্ট একটি মিলনায়তন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। শুরু থেকেই নানা সংকট ও সমস্যা নিয়ে নতুন মিলনায়তনের পথচলা শুরু হলেও আজও সংকট বা সমস্যা যেনো পিছু ছাড়ছে না। ৪০০ আসনের মিলনায়তন কাগজে কলমে শুরু হলেও তাতে রয়েছে মাত্র ২০০ আসনের ব্যবস্থা। আবার এই ২০০ আসনের চেয়ারগুলো সংযোজনের পর থেকে প্রায়ই ভেঙ্গে পড়ছে। এই অবস্থায় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের কারণে প্রায়ই চেয়ারগুলোকে সংস্কার করে কোনো রকমে চালানো হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময়।
মিলনায়তনটির কার্যকর ব্যবহারে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্যে মূল প্রয়োজন হলো লাইট অপারেটর বা ইলেকট্রিশিয়ান এবং ১ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকে সঙ্কট নিয়ে পথচলা শুরু হলেও আজও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। বার বার এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি চালাচালি করেও কোনো সমাধান পাননি।
মিলনায়তনটিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে ২০০৭ সালে ৩০ টনের প্রয়োজনীয় এসি লাগানোর কথা ছিলো। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাগিয়েছে ২০ টন। ফলে বড় ধরনের সমস্যা নিয়ে মিলনায়তনটির পথচলা শুরু হয়। প্রতি ৫ বছর পরপর এসি সংযোজন এবং সংস্কার বা পরিবর্তন করার নিয়ম থাকলেও সেটি শুধু নিয়মের জায়গায় রয়েছে।
বর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নানা বিভাগ অর্থাৎ নাচ বা নৃত্য, সংগীত, চিত্রাঙ্কনে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ২০০-এর মতো। এ সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে নেই প্রয়োজনীয় শ্রেণী কক্ষ, নেই প্রশিক্ষণ রুমের ভালো ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণের নানা উপকরণ। সবচে' বড়ো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে কোনো অনুষ্ঠান চলাকালে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হলে বের হওয়ার নেই প্রশস্ত জায়গা। নেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। এতো সমস্যার মধ্য দিয়ে পথচলা অবস্থায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ বহু চেষ্টা-তদবির করে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। এই বরাদ্দ পেয়ে ৩য় তলার টিনশেড কক্ষ, সাউন্ড সিস্টেম সংস্কার, কিছু মেরামত কাজ, মিলনায়তনে নতুন রংয়ের কাজ এবং ভবনের দুটি দরজার কাজ করে।
বহুবিধ সমস্যা নিয়ে চলা চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (জেলা কালচারাল অফিসার) দিতি সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে আমার প্রথম কর্মস্থল হিসেবে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি এই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে নেওয়ার জন্যে আমার আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রেখে চলছি। জেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সবসময় সমন্বয় ও যোগাযোগ রেখে চলছি। আশা করছি, সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির নূতন স্থাপনা নির্মাণে জমি নির্ধারণ করার জন্যে পরপর ৩ বার চিঠি পেয়েছি। বর্তমান সরকার স্মার্ট ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার পর থেকে সকল প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এবং চাঁদপুরের সংস্কৃতি কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে আধুনিক শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন নির্মাণ করার জন্যে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা প্রশাসক বরাবর গত ২ বছর ধরে পর পর ৩ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। উক্ত চিঠিতে আধুনিক মিলনায়তন সম্বলিত ভবন নির্মাণ করার জন্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ৬০ শতাংশ জমি পছন্দ করার জন্যে বলা হয়। তবে চিঠির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিদ্যমান কমিটির সদস্য শহীদ পাটোয়ারীর সাথে। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমি শিল্প-সংস্কৃতির সাথে জড়িত। ফলে শিল্প-সংস্কৃতির কর্মীদের হৃদয়ের কথা বুঝি। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সমস্যা সমাধানের। ইতিমধ্যে অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বাকি সমস্যাও সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, আসলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। তবে কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। নতুন জমি বরাদ্দ বা পছন্দের বিষয়ে বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে আমরা জমি দেখেছি, কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারিনি।
এ বিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি আসার পর সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। চিঠি দেখলে বলতে পারবো।