বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২

ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

তিন মাস ধরে পলাতক প্রধান শিক্ষক, সকল শিক্ষক-কর্মচারীর অনাস্থা

নীরব প্রশাসন, ক্ষুব্ধ অভিভাবক

শামীম হাসান
তিন মাস ধরে পলাতক প্রধান শিক্ষক, সকল শিক্ষক-কর্মচারীর অনাস্থা

গত প্রায় তিন মাস যাবৎ পলাতক আছেন ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল আমিন (কাজল)। প্রধান শিক্ষকহীন বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় ও শিক্ষকরা দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন না পাওয়ায় এবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থা জানিয়েছেন। রোববার বিষয়টি স্কুলের একাধিক শিক্ষক চাঁদপুর কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্কুলের টিচার্স রুমে যৌথসভা করে তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে নতুন কাউকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাচ্ছেন শিক্ষকগণ। শিক্ষকদের অনাস্থার লিখিত অভিযোগ ৩০ সেপ্টেম্বর ই-মেইলে এবং ১ অক্টোবর ডাকযোগে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছর বলেও জানান স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। যদিও গত ১ মাসেও তার কোনো সমাধান বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি জেলা প্রশাসনকে।

জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে চিঠি পেয়েছে মর্মে একজন কর্মককর্তা আমাকে ফোন করে মৌখিকভাবে আরও বিস্তারিক জানতে চান। আমি সকল সত্য ঘটনা খুলে বলি। তারপর থেকে দৃশ্যমান আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি প্রশাসনকে। আমাদের বিশ্বাস ছিলো, জেলার অভিভাবক জেলা প্রশাসক মহোদয় এর একটি সুরাহা করবেন। কিন্তু গত ১ মাসেও আমরা এর কোনো সমাধান না পাওয়ায় হতাশ হলাম। স্কুলের ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের দাবি, অদৃশ্য কারণে সময় ক্ষেপণ করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় পদ বহনকারী এই প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করে যাচ্ছেন খোদ প্রশাসনই!

স্কুলের একজন অভিভাবক মোস্তফা কামাল জানান, পলাতক প্রধান শিক্ষকের পরিবারের একজন সদস্য দুমাস আগেই বলেছিলেন, কাজল মাস্টার (রফিকুল আমিন) বিভিন্ন দপ্তরে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছেন। কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। সে জন্যেই হয়তো নীরব সকল প্রশাসন। অন্যথায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক তিন স্তর থেকে তিন ধরনের লিখিত অভিযোগ জানানোর পরও একজন বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়াটা আশ্চর্যজনক ঘটনা। তিন মাস ধরে একটি স্কুলের সাথে যা ঘটছে তা মোটেই কাম্য নয়।

স্কুলের অপর অভিভাবক মানিক চন্দ্র দাস বলেন, এই প্রধান শিক্ষকই আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্তানদের জোর পূর্বক গরুর মাংস খাইয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে তার কাছে গেলে তিনি বলেছিলেন, গরুর মাংস খেলে কিচ্ছু হয় না। এ বিষয়ে পত্রিকায় একাধিক সংবাদও ছাপা হয়েছিলো। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় আমরা এর কোনো বিচার পাইনি। এখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সময়ও কি আমরা তার বিচার পাবো না?

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানো ১৭ শিক্ষকের মধ্যে আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিক ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, মহিলা আওয়ামী লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার স্বাক্ষরও রয়েছে।

লিখিত অভিযোগে অনাস্থা জানিয়ে শিক্ষকরা বলেন, ''অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, গত প্রায় দুমাস ধরে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জনাব রফিকুল আমিন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকলীন উপজেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তাই সরকার পরিবর্তনের পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। নিয়মিত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালীন সময়েও তিনি নানা কাজে বিতর্কিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষকের বিতর্কিত নিয়োগ, শিক্ষা সনদ নিয়ে মিথ্যাচার, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পরিচয়ে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ, একাধিক মাধ্যমিক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয়ে স্কুলের রুটিন ওয়ার্ক বাদ দিয়ে সে সব স্কুলে সময় দেয়া সহ নানা বিষয়ে তিনি স্কুলের 'প্রধান শিক্ষক' পদটিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হাসির খোরাকে পরিণত করেছিলেন। যার কারণে আমরা শিক্ষকগণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিলো। এ বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে অসংখ্য তথ্য নির্ভর সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিলো। সর্বোপরি প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতা ও অপারদর্শিতার কারণে আমরা শিক্ষকগণ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এমতাবস্থায় স্কুলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার শিক্ষার পরিবেশ বিনির্মাণ করতে বিতর্কিত পলাতক প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়ে আমরা স্কুলে কর্মরত শিক্ষকগণ

স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে তার বিরুদ্ধে একযোগে অনাস্থা জ্ঞাপন করলাম।''

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন প্রধান শিক্ষক। পালানোর আগে তিনি স্কুলের কাউকে লিখিতভাবে ভারপ্রাপ্ত কোনো দায়িত্ব দিয়ে যাননি। যার ফলে গত দুমাস ধরে টালমাটাল ভাবে চলছে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষকের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি ও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অপকর্ম করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষককে স্কুল ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে স্কুল থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি সরানোর অভিযোগে পদত্যাগ চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দিয়েছিলো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ও অভিভাবকবৃন্দ। এখনও তার কক্ষে তালা ঝুলছে।

এতো ঘটনার পরও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন প্রধান শিক্ষক। বরং প্রধান শিক্ষকের দাবি, তিনি পদত্যাগ করবেন না, কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বও দিবেন না। মোবাইল ফোনে দূর থেকে স্কুল চালাবেন। যদিও তার এমন বক্তব্যকে অগঠনমূলক ও বেআইনি বলেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক। অথচ তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার এক মাস পরও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার দপ্তর থেকেও।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সরকারি বিদ্যালয় শাখা) কাজী এমডি আবদুর রহমান, বিপিএএ জানান, এ বিষয়ক অভিযোগ হাতে পেয়েছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি পূর্বেও অবগত হয়েছি৷ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশগত বিষয়ে আপনি যে তথ্য জানালেন, পরিস্থিতি এমন হলে আবশ্যই ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। একটি সরকারি স্কুলের যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব কাউকে দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না, যথাযথ ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে সার্বিক বিবেচনায় নিশ্চয়ই কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে।

অভিযুক্ত রফিকুল আমিন মুঠোফোনে জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমি স্কুলে যাচ্ছি না। কেন যাচ্ছি না তা অনেকেই জানেন। সকল শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়