প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৫০
অসচ্ছল শিক্ষকদের জমানো টাকা লুট করতেন কামাল চৌধুরী
অবসরে যাওয়ার পর এককালীন কিছু আর্থিক সুবিধা পান বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। আর এই সুবিধা পেতে চাকরিকালীন তাদের প্রতি মাসের এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) থেকে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে যথাক্রমে ৬ ও ৪ শতাংশ করে টাকা কেটে রাখা হয়। বিধান অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতিমাসের এমপিও থেকে চাঁদা বাবদ কর্তন করা কোটি কোটি টাকা জমা থাকার কথা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। সেখান থেকে সুদ পাওয়া যায়। ফলে জমা টাকার মূলধন বাড়ে।
|আরো খবর
পদাধিকার বলে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি শিক্ষাসচিব। আর ২১ সদস্যের কমিটির দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হলেন সচিব। যিনি মূলত কোনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাসচিব ছিলেন। ওই সময়ে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসেবে জমানো প্রায় সাতশ কোটি টাকার ৯৯ শতাংশ তুলে বিভিন্ন বেসরকারি নতুন ও রুগ্ন ব্যাংকে রাখেন। যদিও অর্থ বিভাগের নির্দেশ ২৫ শতাংশের বেশি বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যাবে না। কিন্তু, একেবারে নতুন অথবা রুগ্ন ব্যাংকে টাকার রাখায় ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন কামাল চৌধুরী। সোনালী ব্যাংক থেকে বারবার তাগাদা দিলেও তাতে পাত্তা দেননি তখনকার দাপুটে শিক্ষাসচিব।
আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, রুগ্ন ব্যাংকগুলোকে সবল করতে গিয়ে শিক্ষকদের টাকাগুলো আটকে রাখা হয়। বলা হয় ফান্ড নেই। তাতে বঞ্চিত হন বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। অবসরের পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা পান না তারা।
সোনালী ব্যাংক থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠির কপি আমাদের বার্তার হাতে রয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনায় পরিদৃষ্ট হয় যে, অত্র ব্যাংক কর্তৃক বেসরকারী ব্যাংকের অনুরূপ সুদ হার প্রদানের পরও উক্ত প্রতিষ্ঠানদ্বয় কর্তৃক অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে পূর্বাপর বেসরকারি ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে যা খুবই দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থবিভাগ বাজেট অধিশাখা -১১ এর ১৫-২-২০১২ তারিখের নং-০৭.১১১.০৩১.০০.০৫২.২০১২৬৯ সংখ্যক পত্রের ১(খ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, পাঁচ বা ততোধিক বছর বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি, আধা- সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থা তাদের মোট নিজস্ব আমানতের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ জমা রাখতে পারবে।
ব্যাংকটির জেনারেল ম্যানেজার কাজী তসলিমা বানু স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরো বলা হয়, এ প্রেক্ষিতে তহবিল সংরক্ষণ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাদের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সরকার কর্তৃক এককালীন প্রদানকৃত টাকাসহ মাসিক ভিত্তিতে প্রদেয় তহবিল অত্র ব্যাংকে সংরক্ষণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোন সেবা প্রদানে শতভাগ সক্ষম সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ও অত্র ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ থেকে সরকারি নীতিমালার বাইরে বেসরকারি ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের একান্ত আবশ্যকতা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ বাজেট শাখা-১১ এর অনুমোদন সম্মতিপত্রসহ অর্থ স্থানান্তর বিষয়ক চেক/অনুরোধপত্র প্রেরণ করার জন্য আপনাদেরকে সবিনয় অনুরোধ করা হলো।
তথ্যসূত্র :আমাদের বার্তা |