প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৩১
চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতির ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ফ্যামিলি ডে
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও চমৎকার ব্যবস্থাপনাতেই এই সমিতির যতো অগ্রগতি
----সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক শরিফুল ইসলাম

বর্ণিল আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা, ফ্যামিলি ডে এবং জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) চাঁদপুর স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
|আরো খবর
এ বছর প্রতিষ্ঠানের '২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও উন্নয়নের ২৫ বছর' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কারপ্রাপ্ত চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সমবায় অধিদপ্তরের
নিবন্ধক ও মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শরিফুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ সমবায় একাডেমী, কুমিল্লার অধ্যক্ষ কাজী মেসবাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ (অতিরিক্ত নিবন্ধক)।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমবায় অধিদপ্তরের সাবেক যুগ্ম নিবন্ধক ও চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক মো. দুলাল মিয়া, চাঁদপুর জেলা সমবায় অফিসার মজিবুর রহমান খান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ।
বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম।
সকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিশাল সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে, দুর্নীতিকে দূর করতে হবে। দেশের উন্নয়ন চাইলে সমবায়ের কোনো বিকল্প নেই। পুঁজি গঠনের সহজ উপায় সমবায় ছাড়া সম্ভব নয়। চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বহুমুখী কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। শুধু ঋণদান করলেই সমবায় সমিতির কার্যক্রম আগায় না। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি, বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ বহুমুখী কার্যক্রম থাকতে হয়। সেই কাজটাই চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড করছে। এখানে এসে আমি সেই কার্যক্রমই দেখলাম। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে এমন কার্যক্রম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো আমাদেরকেও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। যার উদাহরণ চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং চমৎকার ম্যানেজমেন্টের কারণে এই সমিতি আজকে এতোদূর এগোতে পেরেছে। চাঁদপুরে যেটা সম্ভব, সেটা অন্যান্য জেলায়ও সম্ভব। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমবায় কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের এমন কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে সমবায় ইউনিয়নের কার্যক্রম গড়ে তুলতে হবে।
শরিফুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের সকলের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হলো সমবায় আন্দোলনকে গতিশীল করা। আমরা চাই প্রত্যেকটা জেলায় সমবায় ইউনিয়ন থাকবে। মানুষের ক্ষুদ্র পুঁজিকে একত্রিত করা সমবায় ছাড়া আর কোনো মাধ্যমে নেই। তাই এটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সালাম বলেন, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ভালো ম্যানেজমেন্টের কারণে একটি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে। যার অনন্য উদাহরণ চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুবক বহুমুখী সমবায় সমিতি। তরুণ শিক্ষিত বেকার যুবকদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে এই সমিতি চাঁদপুরে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। দেশের যে কোনো দুর্যোগ দুর্ভোগে এই সমিতির মানবিক কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে। এজন্যে আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে অনেক কিছু পরিবর্তন করা সহজ। সমবায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যায়। তবে বিগত সময়ে এই সেক্টরে যে ধরনের সরকারি উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিলো, তা করা হয়নি। বরং দুর্নীতির মাধ্যমে এই সেক্টরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজরা কখনোই চায় না বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াক। বিগত সরকারের যদি গণমুখি চিন্তা থাকতো, তাহলে এই সমবায় সেক্টর ধ্বংস হতো না।
এর আগে সকাল ১০টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যক্রম। এতে সভাপতিত্ব করেন চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের চৌধুরী।
সভার শুরুতে সমিতির বার্ষিক কার্যবিবরণী পাঠ, আয়-ব্যয়ের হিসাব, কর্মপরিকল্পনা ও বার্ষিক বাজেট পেশ করেন সমিতির সম্পাদক দেবব্রত সরকার। সমিতির আলোচ্যসূচি ও নীতিমালা সংশোধনসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সমিতির সদস্য মো. শাহজালাল আল সাফি। পরে উপস্থাপিত আলোচ্যসূচির উপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত সমিতির সদস্যগণ তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সদস্যদের মতামত এবং অনুমতিক্রমে সমিতির কার্যক্রমকে আরো বেশি বেগবান করার লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সদস্য চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম (সোহেল), সমিতির সদস্য ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী বাহাউদ্দিন সুমন, সমিতির সহ-সভাপতি মো. সেলিম মিয়া, সদস্য মো. মাসুদুর রহমান শেখ, প্রিয়তোষ চন্দ্র শীল, মোহাম্মদ আক্তার হোসেন খান ও নূরুন্নাহার শিলা।
দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপী আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্যারফরমেন্সের জন্যে ‘ব্যবস্থাপক মূল্যায়ন পুরস্কার' প্রদান। এতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা স্টাফ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকেলে সমিতির সদস্য, তাদের পরিবার ও সকল স্টাফ এবং পরিবারের শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যামিলি ডে’র ক্রীড়া অনুষ্ঠান। যার মধ্যে ছিলো শিশুদের চকলেট দৌড়, আলু কুড়ানো, কুইজ প্রতিযোগিতা, বড়োদের হাড়ি ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরো আয়োজন জুড়ে সমিতির সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। তারা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়সহ আনন্দ ভাগ করে নেন। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইমরান ও পড়শীসহ জাতীয় পর্যায়ের গুণী শিল্পীরা।
দু পর্বের এই অনুষ্ঠান পরিচালনায় দিলেন মজিবুর রহমান ফরহাদ, সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবু, আলতাফ হোসেন ও কুলসুমা বেগম।