শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২১, ১৯:৪৭

রাকাবের ১৫টি গুরুতর অনিয়ম চিহ্নিত

খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন

অনলাইন ডেস্ক
খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন

খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন ও ভুল সিআইবি রিপোর্ট প্রেরণ, সরকার ঘোষিত করোনা ভর্তুকি না দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে জোরপূর্বক সুদ আদায়, স্থগিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর, নতুন ঋণ দিয়ে পুরোনো ঋণ সমন্বয়সহ ১৫টি গুরুতর অনিয়ম করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রাকাবের ৩৮৩টি শাখার মধ্যে ১২টি শাখায় ২০২০ সালের জুনভিত্তিক পরিদর্শন পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই বেরিয়ে এসেছে বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির এসব অনিয়ম।

জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এটা রুটিন পরিদর্শন। ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। যেসব সমস্যা বা অসংগতি ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহকের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সিআইবি ডেটাবেজে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এসব গ্রাহকের মধ্যে নওহাট জুট মিলস লিমিটেড, মেসার্স তৌহিদ ট্রেডার্স, মেসার্স পিন্টু এন্টারপ্রাইজ এবং পিয়াস ট্রেডিং উল্লেখযোগ্য। ডিপোজিট স্কিমের বিপরীতে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়, তার সঠিক রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়নি। এর মাধ্যমে প্রভিশন সংরক্ষণে সুবিধা নিয়েছে ব্যাংক। শুধু তা-ই নয়, করোনাকালীন কৃষকদের ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর ভর্তুকি দেয় সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করলেও সেই নির্দেশনা অমান্য করেছে রাকাব। অসংখ্য গ্রাহককে সুদ ভর্তুকি না দিয়ে আদায় করা হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া স্থগিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করেছে রাজশাহীর স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়, বাঘা শাখা, জয়পুরহাটের কালাই শাখা ও রংপুরের মিঠাপুকুর শাখা।

এসব শাখার মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আয়ের প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে। এরপরও ২০২০ সালে ৬০৩ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত অনুযায়ী লোকসানের অঙ্ক ৬১৭ কোটি। এই লোকসান পোষাতে দীর্ঘদিন থেকেই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে সরকার। ভর্তুকির টাকায় কৃষকের কোনো উপকার না হলেও পকেট ভরছেন কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে আর্থিক সহায়তা হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপর আবারও ৮৭৩ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা চেয়েছে রাকাব। মূলধন ঘাটতি, পুঞ্জীভূত লোকসান, খেলাপি ঋণের উচ্চহার ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ডুবতে বসেছে বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তাই ভর্তুকি দিয়েও লোকসান সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকটি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দিলেও সেগুলো যথাযথ পরিপালন করতে পারছে না। ফলে রাকাবের সার্বিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক গ্রাহকের কাছে একই দিনে ঋণ সমন্বয় ও বিতরণ করেছে রাকাবের বাঘা শাখা। পার্যালোচনা করে দেখা যায়, সুদাসলে ঋণের টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ঋণসীমা বৃদ্ধি করে নতুন ঋণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নতুন ঋণের টাকা দিয়ে পুরোনো ঋণ সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যাংকের প্রকৃত গ্রাহক বা কৃষকরা।

রংপুরের মিঠাপুকুর শাখার খেলাপি ঋণ (সিএল বা ক্লাসিফাইড লোন) টপশিট ও ওয়ার্কশিটের মধ্যে কোনো মিল পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দুই শিটের মধ্যে ৪১ লাখ টাকার অধিক গরমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া ১০ বছরের বেশি সময় ধরে লেনদেনহীন অদাবীকৃত আমানতের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে; কিন্তু ১১৫টি হিসাবের এক টাকাও জমা করেনি রাকাব, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ব্যাপক অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের (২০২০) জুন পর্যন্ত রাকাবের নিট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮১৬ কোটি টাকা। আগের বছরের (২০১৯) জুন শেষে যার পরিমাণ ছিল ২১২ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৬০০ কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে রাকাবের কিছু কর্মকর্তাকে অবৈধ পদোন্নতির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবেদন করেছেন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন। চলতি বছরের মে মাসে সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠিতে রাকাবের বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদ ছাড়া অন্যান্য সব পদে সরাসরি সাক্ষাৎকার ব্যতীত ২০২০ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক পদোন্নতির আবেদন করেছেন এমডি, যা পদোন্নতি নীতিমালার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের অঙ্ক প্রায় ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। বাড়ছে রাকাবের লোকসানি শাখার সংখ্যাও। ৩৮৩টি শাখার মধ্যে ১১৮টিই লোকসানি শাখায় পরিণত হয়েছে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটির।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়