শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০৯

ই-কমার্স : নিরাপদ বিনিয়োগ ও অর্থ ফেরত প্রসঙ্গ

নাসিমা আক্তার নিশা
ই-কমার্স : নিরাপদ বিনিয়োগ ও অর্থ ফেরত প্রসঙ্গ

ই-কমার্স প্রসঙ্গে ভুক্তভোগীদের এখন একটাই চিন্তা, টাকা ফেরত পাবেন কীভাবে? যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বা যাদের কাছে মার্চেন্ট ও ভোক্তারা টাকা পাবে তাদের কাছে দুই ধরনের অর্থ রয়েছে। একটি হচ্ছে, যেসব অর্থ এসওপি বা নির্দেশিকা হওয়ার আগে ই-কমার্সের প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে গিয়েছে। সে অর্থ দেওয়ার জন্য সরকার চেষ্টা করবে।

কীভাবে তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের টাকা ফেরত দেওয়া যায় সেই বিষয়ে সরকার আন্তরিক। টাকা ফেরত দেওয়া হবে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে যাদের ব্যবসা চালু হবে তারা ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নজরদারিতে থেকে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করবে।

আর যাদের ব্যবসা আইনভঙ্গ করার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের বিষয়ে প্রচলিত আইনে সরকার বা আদালত আলাদা সিদ্ধান্ত দেবে। যাদের অর্থ পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে, তাদের ক্ষেত্রে তালিকা ও অভিযোগ যাচাই করে টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে কিউকমের কিছু টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কাজ করছে ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আশাকরি খুব দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে।

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দিতে এত দেরি কেন? যেহেতু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হয়েছে। মামলার নিষ্পত্তির একটা বিষয় রয়েছে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য যেমন একদিকে গ্রাহকদের তথ্য পাওয়া প্রয়োজন অন্যদিকে আইনগত বিষয়ও রয়েছে।

খুব যে দেরি হয়েছে তা কিন্তু না। বরং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিরলস কাজ করেছে এবং এর সাথে সরকারি ১৭টি এজেন্সি যুক্ত। সবাইকে সমন্বয় করে এ ধরনের একটা সমস্যার সমাধান করা খুব সহজ ছিল না।

অতীতে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে এত দ্রুত সমাধান হয়নি। এখনো বছরের পর বছর মামলা ঝুলছে অনেক প্রতিষ্ঠানের। বিশেষ করে যুবক ও ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানের মামলাগুলোর সমাধান হয়নি এখনো। যদিও সেগুলো ই-কমার্স খাতের নয়।

দেশে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স তা জানা জরুরি। ই-কমার্সের নিবন্ধন নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। অল্প কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আলাদা নিবন্ধন বা লাইসেন্স লাগে। বাকি সব ব্যবসা ট্রেড লাইসেন্সের অধীনে হয়ে থাকে। ই-কমার্স খাতে কিছু সমস্যা না হলে আলাদা করে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা হয়তো এখনো হতো না। তাছাড়া নিবন্ধনের জন্য নেপথ্যে প্লাটফর্ম তৈরি, নীতিমালা তৈরি আরও অনেক কাজ থাকে।

সরকার বা আমরা কেউ চাই না ই-কমার্স খাতে কোনো জটিলতা ও রেগুলেশন থাকুক। দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, নারীরা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে সবাই চায় এই খাতে কোনো কারণে গতি না হারাক। তাই স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার সুযোগ রাখার পক্ষে সকলের অবস্থান ছিল। এখনো আছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে আমরা নিবন্ধন করার কথা বলছি।

দেশে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করার যে আইন আছে সেটাই ই-কমার্সের জন্য যথেষ্ট ছিল। এখনো যেহেতু এখানে ক্যাটাগরি হিসেবে ই-কমার্স যুক্ত হয়নি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঘরে বসে নিবন্ধন চায় এসব বিষয় বিবেচনা করেই নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই এটা আগে বা পরের বিষয় নয়। যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ই-কমার্স একটি লাভজনক খাত। এই খাত নিরাপদ হলে সবাই এইখানে বিনিয়োগ করবে। আমরা চাই ই-কমার্স নিরাপদ হোক। কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে বিনিয়োগকারীর আস্থা হারিয়েছে তবে আমরা চেষ্টা করছি সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে। আমরা দেখেছি, যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার অভিযোগ, ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করছে। এজন্য ক্রেতাদের সচেতন হওয়া হলো শেষ কথা।

ই-কমার্স নিরাপদ করার ক্ষেত্রে প্রথমত ইউবিআইড নিবন্ধন একটা প্রাথমিক উদ্যোগ। যাদের নিবন্ধন থাকবে তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করলে সেটা নিরাপদ হবে। এছাড়া আরও দুটো সিস্টেম রেডি হচ্ছে। যেমন, কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, কেন্দ্রীয় ডেলিভারি ব্যবস্থাপনা এগুলো হলে প্রতারণার সুযোগ কমে যাবে। ধাপে ধাপে সেবাগুলো আসবে।

তবে ক্রেতারা সাবধান না হলে এই খাত কখনোই নিরাপদ হবে না। আমরা দেখেছি, যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার অভিযোগ, ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করছে। এজন্য ক্রেতাদের সচেতন হওয়া হলো শেষ কথা। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে শুধু ই-কমার্স নয়। কোনো খাতেই নিরাপদ নয়। সেগুলো নিয়েও আমাদের সচেতন হতে হবে।

দেশে মোট ই-কমার্সের ১% প্রতিষ্ঠানও ঝুঁকিপূর্ণ বা বিতর্কিত ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। অথচ দেশের বাজারে ১১% ওষুধ নকল। মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন যেখানে। প্রতি বছর ৩ হাজার কোটি টাকার নকল ওষুধ বিক্রি হয় বাজারে। যাতে মানুষের জীবন আজ ঝুঁকিতে। কেন এটা নিয়ে কারো হইচই নেই। সেভাবে ভাবতে হবে। শুধুমাত্র ই-কমার্সকে নেতিবাচক ভাবে দেখা খুব দুঃখজনক।

নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)

সূত্র : ঢাকা পোস্ট

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়