শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২২, ০০:০০

সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগমের বিদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বস্তি

সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগমের বিদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বস্তি
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) নাজমা বেগম বদলিজনিত বিদায় নিলেন। তার বিদায়ের খবরে এ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেনো স্বস্তির নিঃশ^াস ফেললো। কারণ, তাকে টাকা দিতে দিতেই অস্থির হয়ে পড়তেন শিক্ষকরা। নানা অজুহাতে শুধু তাকে টাকা দিকে হতো শিক্ষকদের। আর টাকা দিতে না পারলে ভাগ্যে জুটতো হয়রানি। নাজমা বেগম চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর এক কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে ফেনী সদর উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে সেখানে যোগ দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

চাঁদপুরে দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিসহ শিক্ষকদের হয়রানির জন্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত ছিলেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম। তার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষক প্রায় সময় কর্মস্থলে বিব্রত থাকতেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার তার বদলিজনিত বিদায়ের খবরে সদর উপজেলায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।

জানা গেছে, নাজমা বেগম ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই চাঁদপুর সদর উপজেলায় শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে দেখা যায়, তিনি মন চাইলে কর্মস্থলে বসতেন, মন না চাইলে কর্মস্থলে আসতেন না। দুপুরের পর তো তাকে অফিসেই পাওয়া যেতো না। দাপ্তরিক কাজে শিক্ষক-কর্মচারীরা অফিসে এসে দিনের পর দিন অপেক্ষা কিংবা অনেক হয়রানির পর কাক্সিক্ষত কাজ সারতে পারতেন। আবার কোনো কোনো শিক্ষককে তিনি মানসিক শাস্তি হিসেবে দিনের পর দিন ঘুরাতেন তার দপ্তরে। এমনকি কোনো শিক্ষকের ছুটি অধিদপ্তর থেকে পাস হলেও তার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে গিয়েও দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। ফলে পাসকৃত ছুটি কোনো কাজেই আসেনি। গত ডিসেম্বরে একজন শিক্ষকের বহির্বাংলাদেশ ছুটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাস হলেও শুধুমাত্র তার অসহযোগিতায় ওই শিক্ষক সেই ছুটি ভোগ করতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, তাকে টাকা দিলে আর ঘুরাঘুরি করতে হতো না। টাকা পেলে কাজ সাথে সাথে হয়ে যেতো। টাকার জন্যই তিনি অযথা শিক্ষদের ঘুরাতেন।

চাঁদপুরে কর্মরত শিক্ষকরা জানান, নাজমা বেগম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মে। তিনি শিক্ষক বদলি ও পদায়নে অনেক সময় ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির পর কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করতেন। শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন, গত ৮ বছরে তিনি ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে অনেক সিনিয়র শিক্ষককে বদলির সুযোগ না দিয়ে জুনিয়রদের সুযোগ করেছেন বিধি লঙ্ঘন করে। এছাড়া সিলেবাস ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির নামে তার ছিলো অবাধ বাণিজ্য। নানা সময় শিক্ষকদের চাপে ফেলে বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা তুলে নিতেন। তার অফিসে বিশুদ্ধ পানি খাবারের জন্যও তিনি লক্ষাধিক টাকা শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন। এছাড়া তো রয়েছে অডিট বা অন্য কথা বলে চাঁদা আদায়। এসব বিষয়ে কোনোক্রমেও সাংবাদিকদের তথ্য দেয়া ছিলো বারণ। কোনো তথ্য সাংবাদিকরা জেনে ফেললে শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে রাখতেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো শিক্ষক প্রশাসনিক সহযোগিতা কিংবা প্রত্যয়নের জন্যে কোনো আবেদন করলে তিনি তা ফেলে রাখতেন মাসের পর মাস। আর কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষকদের বিলসহ নানা আর্থিক বিষয়ে মাসকে মাস আটকে রাখতেন তিনি। আর্থিক সুবিধা বা ঊর্ধ্বতন কিংবা রাজনৈতিক তদবির ছাড়া তিনি সহজেই শিক্ষকদের এমন কাজে সহযোগিতা করতেন না। এতে করে অনেক শিক্ষক মানসিকভাবে এই কর্মকর্তার কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, অতি সম্প্রতি যখন দাপ্তরিকভাবে বদলির আদেশ আসে, ঠিক তখনই এই কর্মকর্তা তদবির শুরু করেন অধিদপ্তরে। যাতে তাকে চাঁদপুরে অপর কোনো উপজেলায় বদলি করা হয়। তবে অন্যান্য উপজেলার কর্মকর্তারা নাজমা বেগমের উপর সন্তুষ্ট না থাকায় তিনি এ যাত্রায় সফল হতে পারেননি।

জানা গেছে, তিনি আশা ছাড়েননি। বদলিকৃত স্থানে যোগ দিয়ে আবারো চাঁদপুরের অন্য কোনো উপজেলায় আসার চেষ্টা তিনি চালিয়ে যাবেন বলে জানা গেছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত ৮ বছরের দীর্ঘ যাত্রার ইতি টেনে তাকে চাঁদপুরের কর্মস্থল ছাড়তে হচ্ছে। এতে করে কর্মরত শিক্ষকদের স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রকাশ্যে অনেকে তার বিদায়ের বিষয়ে মুখ না খুললেও সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, নাজমা বেগমের ব্যক্তিগত খামখেয়ালিপনার কারণে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও ছিলো অনেকটা অতিষ্ঠ। যার কারণে এ উপজেলার শিক্ষার মান বৃদ্ধির বিপরীতে অবনতি হয়েছে। নাজমা বেগমের বিদায়ের মধ্য দিয়ে হয়তো আবার ফিরবে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়