প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ২৩:০৫
এ যেন নৌকা ঘাট নয়, ময়লার ভাগাড়
নারায়ণপুর বাজার নৌকা ঘাটে মালামাল উঠানামায় শ্রমিকদের চরম ভোগান্তি
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর বাজারের নৌকা ঘাট। বাজারের গোড়াপত্তন থেকেই মাঝি -মাল্লাদের আনাগোনায় সরগরম হতো এই নৌকাঘাট।
নারায়ণপুর বাজারের মাঝামাঝি অবস্থানে বোয়ালজুড়ি খালের পাড়ে গড়ে উঠা এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বাজারের ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল উঠানো হয়। যে সব মালামাল আসে, তা' চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে। এই ঘাট দিয়ে কেবল মালামালই উঠানামা করতো না। এক সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং হাজিগঞ্জে যাতায়াতকারী যাত্রীরা যাওয়া আসা করতো এ ঘাট দিয়ে। তাই ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর বাজার নৌাকা ঘাটের সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষের অনেক স্মৃতি জড়িত।
এক সময়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নারায়ণপুর বাজারের নৌকা ঘাটে এখন আর পা ফেলার পরিবেশ নেই। বাজারে বর্জ ফেলার কোন নির্ধারিত জায়গা না থাকায় অঘোষিতভাবে বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের সকল বর্জ এই নৌকা ঘাটে ফেলে রাখে। এতে মালামাল উঠানামার এ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অসুস্থ হয়ে পড়ছে মালামাল উঠানামায় নিয়োজিত শ্রমিকগণ।
ব্যবসায়িক বিবেচনায় গুরত্বপূর্ণ এ ঘাট এখন অযত্ন অবহেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ঘাটে যাতায়াতকারী পথ ও তার আশপাশ বাজারের উচ্ছিষ্ট আবর্জনায় ভরপুর। অপরদিকে অসচেতন মানুষ সেখানে প্রশ্রাব করে পরিবেশ দুর্গন্ধময় করে রেখেছে। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকগণ চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে ট্রলারে করে আনা মালামাল বাজারের বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দিচ্ছে। অথচ অন্যের জীবনের আর্থিক সচ্ছলতা ও জীবনের সমৃদ্ধিতে কাজ করে যাওয়া নারায়ণপুর বাজারের কুলি মজুরের নিজেদের জীবনযুদ্ধ চলে ময়লার ভাগাড়ের সাথে লড়াই করে।
এ ব্যাপারে কথা হয় নারায়ণপুর বাজারের শ্রমিক সর্দার মো. মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ঘাট দিয়ে পৌঁছে দেই বিভিন্ন দোকানে। কিন্তু ঘাটের মধ্যে পা ফেলার কোন পরিবেশ নেই। পুরো বাজারের ময়লা-আবর্জনায় নৌকা ঘাটের অস্তিত্ব এখন বিলিনের পথে। এছাড়া অসহনীয় দুর্গন্ধ তো আছেই। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকের সাথে আমাদের কষ্টের কথা, পরিবেশ দুষণের কথা বলেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি। এক প্রশ্নের জবাবে কুলি সর্দার মিজানুর রহমান বাজারের উল্লেখিত সমস্যা সমাধানে বাজার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আমরা নিরুপায় হয়ে এই জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলি। বাজার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে দিলে আমরা পরিবেশ রক্ষায় অবশ্যই যথাযথ নিয়ম মেনে ময়লা আবর্জনা ফেলব।
এ ব্যাাপারে কথা বলেন নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ৩নং খাদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন। তিনি বলেন, নারায়ণপুর বাজার অনেক পুরনো এবং বড় বাজার। এখানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ উৎপাদিত হয়। এই বর্জ অপসরাণ করার জন্য আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও বাজারের আশে পাশে সরকারি কোন খাস সম্পত্তি পরিত্যক্ত অবস্থায় নেই। যেখানে আমরা বাজারের বর্জ অপসারণ ও পরবর্তী কোন ব্যবস্থা নিতে পারি। যেসব খাস সম্পত্তি রয়েছে তা কোন কোন ভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে আমরা ৩টি গণশৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছি। সেগুলো নির্মাণ করতেও জায়গার মালিকদের সাথে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্জ অপসারণের এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় আছি। তবে আপাতত আমাদের কিছু করার নেই।
বর্জ অপসারণ নিয়ে কথা বলেন নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার। তিনি বলেন, বাজারের বর্জ অপসারণের জন্য উপযুক্ত জায়গা না থাকায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। দোকাদারদের উৎপাদিত বর্জ বোয়ালজুড়ি খালে ফেলার জন্য এই স্থানটি ব্যবহার করে। এতে করে নৌকা ঘাট ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজারের নৌকা ঘাটটি পাকা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং এর পাশে ময়লা ফেলার জন্য বড় একটি ট্যাংকি করারও পরিকল্পনা আছে। কিন্তু আমরা এ কাজ বাস্তবায়নে উপযুক্ত বরাদ্দ পাচ্ছি না। জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উর্ধ্বঃতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার বলেন, আমরা সব সময় বাজারের ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করি। ব্যবসায়ী ও পথচারীদের জন্য আমরা তিনটি গণশৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছি।